ফুলবাড়িয়া-গুলিস্তান: বাড়তি ভাড়া, সিন্ডিকেটে জিম্মি যাত্রীরা
Published: 4th, June 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহা আগামী ৭ জুন। ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ। ট্রেন, বাস, নৌযান- যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন প্রিয়জনের টানে।
বুধবার (৪ জুন) রাজধানীর ফুলবাড়িয়া ও গুলিস্তানের বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে স্বস্তির এই যাত্রাপথে বড় এক যন্ত্রণার নাম বাড়তি ভাড়া।
ঈদ উপলক্ষে আগামীকাল ৫ জুন থেকে শুরু হচ্ছে সরকারি ছুটি। বুধবার শেষ কর্মদিবস হওয়ায় এদিন বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীর চাপ বাড়ে। তবে এই চাপের ফাঁকে অনেক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া, যা মধ্য ও নিম্নবিত্ত যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
আরো পড়ুন:
অলিগলিতে উঠেছে কোরবানির পশু, খামারে বিক্রি কেজি দরে
জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট: ছোট ও মাঝারি গরুর বিক্রি বেশি
গুলিস্তান-কেরানীগঞ্জ রুটের লেগুনা চালান মো.
জানে আলম বলছেন, “সারা বছর ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাওয়া যায়। এখন ৮০০ টাকা চাচ্ছে। আমরা যারা নিম্নআয়ের মানুষ, ভালো পরিবহন ধরতে পারি না। লোকাল ধরেই যেতে হয়। এখন এই বাসগুলোও ভালো পরিবহনের মতো ভাড়া চায়। আমরা কীভাবে পরিবার নিয়ে বাড়ি যাবো? সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি চাই।”
ফরিদপুরের ভাঙ্গা যাচ্ছেন কামাল আহমেদ। তার ভাষায়, লোকাল বাসে ভাড়া ২৫০ টাকা ছিল, এখন চাচ্ছে ৫০০ টাকা। গরিবের তো আর ঈদ থাকে না। শুধু সিন্ডিকেটের ঈদ হয়। সরকারের কাছে অনুরোধ, এসব ভাড়া-সিন্ডিকেট ভেঙে দিন।
মীর সাব্বির নামে আরেক যাত্রী জানালেন, “আমি ফরিদপুর যাবো। আগে ৩০০ টাকা দিতাম, এখন চাচ্ছে ৫০০ টাকা। জ্বালানির দাম কমলেও ভাড়া কমে না, বরং বাড়ে। সাধারণ মানুষের কষ্ট কেউ বোঝে না।”
তবে চালক-হেলপাররা দিচ্ছেন ভিন্ন যুক্তি। আনন্দ লোকাল পরিবহনের চালক বশির হোসেন বলেন, “আমরা সিন্ডিকেটে না। যাত্রী নিচ্ছি, কিন্তু ফেরার পথে খালি আসতে হয়। তাই কিছুটা বেশি ভাড়া নিতে হয়। তবে আমরা জোর করে নিচ্ছি না, যাত্রীরাও খুশি হয়ে বেশি দেন।”
আন্তঃনগর পরিবহনে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। আগেই টিকিট কেটে রাখা যাত্রীরা নির্ধারিত ভাড়ায়ই চলাচল করছেন। ইমাদ পরিবহনের চালক আহমেদ বলেন, “আমরা অতিরিক্ত যাত্রী নেই না, ভাড়াও বাড়াই না। ঈদের দিন পর্যন্ত নিরাপদে চলবে যাত্রা।”
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৭ জুন দেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। সরকারি ছুটি শুরু ৫ জুন থেকে, চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। এই টানা ১০ দিনের ছুটিতে প্রায় কোটি মানুষ গ্রামের পথে ছুটবে। কিন্তু সেই যাত্রায় যদি থেকেই যায় এমন ভাড়া বৈষম্য ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, তবে ঈদের আনন্দ অনেকের জন্যই ফিকে হয়ে যাবে।
ঢাকা/এএএম/রাসেল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটক টানতে ছাড়ের প্রতিযোগিতা
এবারের ঈদে টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটি। বেশ কিছু দেশের ভিসা জটিলতায় বিদেশভ্রমণ সীমিত হয়ে আছে কয়েকটি দেশে। তবু লম্বা ছুটিতে প্রত্যাশিত বুকিং পাচ্ছে না দেশের বিভিন্ন হোটেল-রিসোর্ট। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে তাই ছাড়ের ছড়াছড়ি এবার। রুমের ভাড়ায় ৫৫ শতাংশ ছাড়ের পাশাপাশি দুই দিন থাকলে তৃতীয় দিন ফ্রি থাকার সুযোগও দিচ্ছে কেউ কেউ।
কয়েক বছর ধরেই বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। লম্বা ছুটির কারণে বিদেশে বেড়ানোর ঝোঁকটা এবারও বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভিসা বন্ধ অনেক দিন ধরে। আরব আমিরাতের ভিসাও বন্ধ। জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার ভিসা পেতে জটিলতা বেড়েছে সম্প্রতি। এর ফলে আশপাশের চারটি দেশে বেড়ানোর ঝোঁক বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটান।
বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব), অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিজ অব বাংলাদেশ (আটাব), প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, কক্সবাজার কলাতলী হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতি ও একাধিক ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
টোয়াবের সদস্যরা বলছেন, বিদেশে যেতে নানা বাধার কারণেই দেশের ভেতরে এবার আগ্রহ দেখাচ্ছেন পর্যটকেরা। ঈদে লম্বা ছুটির প্রথম তিন দিন চলে যাবে ঈদ উৎসব পালন করতে। মূলত ঈদের পরদিন থেকে বেড়াতে যাওয়া শুরু করবেন পর্যটকেরা। এবারের বৃষ্টিমুখর আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাড় দিয়ে পর্যটক আকৃষ্ট করতে চাইছে হোটেল-রিসোর্টগুলো।
টোয়াবের সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে যেতে ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। পর্যটনের সবচেয়ে বড় গন্তব্য ভারত পুরোপুরি বন্ধ। থাইল্যান্ড ভিসা দিতে আগের চেয়ে দ্বিগুণ সময় নিচ্ছে। অনেকে ভিসা পাচ্ছেন না। তাই আগ্রহটা দেশের ভেতরেই বেশি দেখা যাচ্ছে।
দেশের মধ্যে বেড়ানোর শীর্ষে আছে সমুদ্র শহর কক্সবাজার। এবারও সবচেয়ে বেশি পর্যটককে সেবা দিতে তৈরি হয়েছে এখানকার হোটেল-রিসোর্ট। বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেটে আগ্রহ কমেছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি এড়াতে বান্দরবানের লামায় সম্প্রতি ৬০টি রিসোর্ট সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। সুনামগঞ্জের হাওর ও সুন্দরবনে কিছুটা ঝোঁক আছে পর্যটকদের। এর বাইরে মৌলভীবাজার, গাজীপুরের রিসোর্টগুলোতেও ছাড় দিয়ে পর্যটক আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে।
পরিবার নিয়ে কেনিয়ায় বেড়াতে যাচ্ছেন ফারজানা নীলা। তিনি বলেন, ছুটি পেলেই দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে ইচ্ছে করে। উড়োজাহাজের টিকিটের দামের কথা চিন্তা করে সব সময় যাওয়া হয় না। এবার লম্বা ছুটি থাকায় জমানো টাকা খরচ করে আফ্রিকার দেশটিতে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদুল আজহায় বেড়ানোর প্রবণতা একটু কম থাকে। এ ছাড়া জুনে বর্ষার সময় বলে অনেকে বেড়াতে যেতে চান না। এবার তো আগাম বর্ষা শুরু হয়েছে। দেশের পর্যটন এলাকায় অধিকাংশ হোটেল, রিসোর্ট ফাঁকা থাকতে পারে। বিদেশে আগের চেয়ে আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল-রিসোর্টে ছাড় চলছে। এর বাইরে নানা রকম প্যাকেজ ছাড়া হয়েছে তুলনামূলক কম খরচে। ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ছুটির সময়টাতেই এসব অফার দিয়েছে তারা। কক্সবাজারের পাঁচ তারকা সায়মন বিচ রিসোর্ট ৩১ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে ৮ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত। ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে বেওয়াচ হোটেল। রুম ভাড়া কমিয়ে অফার দিয়েছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট।
এবারও ভিড়টা হবে কক্সবাজারেঈদের আগের দিন কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছেন ফারহানা হোসেন। তিনি বলেন, মারমেইড বিচ রিসোর্টে তিন দিনের জন্য বুকিং দিয়েছেন। ভালো ছাড় থাকায় পরিবার নিয়ে সমুদ্রসৈকতে কয়েকটা দিন কাটানোর সুযোগটা নিয়েছেন। সুযোগ পেলেই বেড়াতে যান তাঁরা।
কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট আছে। এসব হোটেলে দিনে ধারণক্ষমতা দুই লাখের বেশি। স্থানীয় হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস মালিক সমিতি বলছে, ঈদের পরদিন থেকে মূলত বুকিং শুরু হয়। গত বছরের তুলনায় এবার বুকিং অনেক কম। সেন্ট মার্টিন বন্ধ, মহেশখালী ও সোনাদিয়াতেও বেড়ানো যাচ্ছে না এখন। সমুদ্র উত্তাল আছে। তাই আগ্রহ কম থাকতে পারে।
কক্সবাজার কলাতলী হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের ছুটিতে মূলত ৯ থেকে ১১ জুনের বুকিংয়ে চাপটা বেশি। প্রথম সারির তারকা হোটেলগুলোতে ৪ জুন পর্যন্ত ৮২ শতাংশ বুকিং হয়েছে। অন্যান্য হোটেলে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত রুম বুকিং হয়েছে। সব মিলে এবার ৫ থেকে ৬ লাখ পর্যটক আসতে পারে কক্সবাজারে।
সিলেটের নাজিমগড় রিসোর্টে দুটি রুম নিলে একটি রুম ফ্রি অফার দিয়েছে। ছাড় দিয়ে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে মৌলভীবাজারের দুসাই রিসোর্ট। কমলগঞ্জের ব্যাকইয়ার্ড রিট্রিট দিয়েছে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, তিন রাতের বুকিং দিলে এক রাত ফ্রি থাকার সুযোগ। ৫৫ শতাংশ ছাড় দিয়েছে গাজীপুরের ছুটি রিসোর্ট। তাদের অন্য দুটি রিসোর্টেও থাকছে একই রকম ছাড়। জুন মাসজুড়েই বিভিন্ন রকমের প্যাকেজ অফার দিয়েছে হবিগঞ্জের দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে আগ্রহ থাকলেও উড়োজাহাজের টিকিটের চড়া দাম ও ভিসা জটিলতায় অনেকে যেতে পারছেন না। নেপালে তো ঈদের পরদিন থেকে ছুটির সময় উড়োজাহাজ টিকিট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কোনো টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে কক্সবাজারে যাচ্ছেন পর্যটকেরা, অন্য এলাকায় আগ্রহ কম এবার।