‘আপনার অনুদান : আগামীর বাংলাদেশ’ স্লোগানে দলীয় আর্থিক নীতিমালা ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি দলীয় সদস্যদের চাঁদা, গণচাঁদা, জনগণের দান, কর্পোরেট অনুদানে চলবে। আয়ের জন্য টি-শার্ট, মগ, বই, প্রকাশনা বিক্রি করবে। দলের নিবন্ধন পাওয়ার পর প্রবাসীরাও অনুদান দিতে পারবেন। donet.ncpbd.org ওয়েবসাইট, ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে অনুদান দেওয়া যাবে।
 
১০০ টাকা করে সদস্য ফরম বিক্রি করা হবে। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার ফরম সারাদেশে পাঠানো হয়েছে। আরও ৫০ হাজার ফরম পাঠানোর প্রস্তুতি রয়েছে। ফরম বিক্রি এবং সারাদেশের কমিটি সদস্যদের অনুদানে ২ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ তহবিলকে ‘নাগরিক আমানত’ বলছে এনসিপি। 

বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে এনসিপি। এতে উপস্থিত ছিলেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান সাইফসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
 
নাহিদ ইসলাম বলেন, অতীতে বিভিন্ন দল গোয়েন্দা সংস্থা, ক্যান্টনমেন্ট, ব্যবসায়ী, বিদেশি শক্তির টাকায় গড়ে উঠেছিল। এনসিপি জনগণকে নিয়ে এগোবে। 

আখতার হোসেন বলেন, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার মাধ্যমে আয়-ব্যয় পরিচালনা করা হবে। প্রতি বছর অডিট করে, প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। 

এনসিপি কোষাধ্যক্ষ চাঁদা দানের ওয়েবসাইট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সার্বক্ষণিক দেখা যাবে কত টাকা অনুদান এসেছে, কোন জেলা থেকে এসেছে। চাঁদাদাতাকে ডিজিটাল রশিদ দেওয়া হবে। পাঁচ হাজার টাকার বেশি অনুদান দেওয়া দাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে। তবে প্রয়োজনে প্রকাশ করা যাবে। 

এনসিপির নীতিমালায় বলা হয়, কালো টাকা, অন্যায় উৎস, বিদেশি সরকারসহ ছয় খাত থেকে অনুদান নেবে না এনসিপি। 

নাহিদ ইসলাম বলেন, ওয়েবসাইট, ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকের বাইরেই গণচাঁদা তোলা হবে। এনসিপির নাম ভাঙিয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে জানাবেন। তবে ইতোমধ্যে কিছু মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছে এনসিপি।
 
গত বছর বন্যায় তোলা টাকা তছরুপের অভিযোগের বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সেই সময়ে দু্‌ই ঘণ্টা পরপর আপডেট দেওয়া হয়েছে। ১৬-১৭ কোটি টাকা উঠানো হয়েছিল। অডিট করে চাঁদার রশিদসহ টাকার হিসাব দেওয়া হয়েছে। অব্যবস্থাপনার কারণে দুই-তিন লাখ টাকার হিসাব মেলেনি। বাকি সব টাকার পাইপাই হিসাব রয়েছে। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প অন দ ন প রক শ এনস প সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ঈদ কেবলই স্মৃতি

আজ শুক্রবার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হচ্ছে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ত্যাগ ও আনন্দের এই ঈদে শামিল হন মুসলিমরা। তবে এই আনন্দ স্পর্শ করছে না ফিলিস্তিনের গাজার বাসিন্দাদের।

প্রতিবেশী দেশগুলো যখন ঈদ–আনন্দে মাতছে, তখন হয়তো ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত কোনো ফিলিস্তিনির মরদেহ ঘিরে মাতম করছে গাজার কোনো একটি পরিবার।

গাজার এই দৃশ্য নতুন কিছু নয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর ইতিমধ্যে তিনটি ঈদ এভাবেই কেটেছে সেখানকার বাসিন্দাদের। আজ এ যুদ্ধের ৬০৮তম দিনে চতুর্থ ঈদ এসেছে তাঁদের জীবনে। ঈদের আনন্দ গাজার বাসিন্দাদের জন্য এখন কেবলই স্মৃতি।

সাধারণত ভেড়া ও দুম্বা কোরবানি দিয়ে থাকেন ফিলিস্তিনিরা। পাশাপাশি গরু, ছাগল ও উটও কোরবানি দেওয়া হয়। তবে কোরবানির জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পশু আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয় গাজার বাসিন্দাদের। যুদ্ধের কারণে পশু পালন সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে পশু আমদানিও করা যাচ্ছে না। ফলে চাইলেও কোরবানি দিতে পারছেন না গাজার মুসলিমরা।

ঈদ উদ্‌যাপনের মতো কোনো পরিবেশ নেই গাজায়। অবরুদ্ধ এ উপত্যকার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অনেকে কয়েক দফা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইতিমধ্যে এ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর গাজায় জীবিত পশু ঢুকতে পারেনি। যুদ্ধের কারণে পশু পালনও সম্ভব হয়নি। তার ওপর যেখানে মানুষের খাবার জুটছে না, সেখানে পশুখাদ্যের আশা করা তো রীতিমতো বিলাসিতা!

গাজার বাসিন্দাদের একজন আবু হাতিম আল-জারক্বা। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি কয়েকটি ছোট গবাদি পশু পালন করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরকে তিনি বলেন, গাজার বাসিন্দাদের জন্য কোরবানির পর্যাপ্ত পশু নেই। আর যে কয়টা আছে, আকাশচুম্বী দামের কারণে সেগুলো কেনাও সম্ভব নয়।

সন্তান আর নাতি-নাতনি নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটছে গাজা নগরীর বাসিন্দা নুহা আল-নাজ্জারের। দোহা নিউজকে তিনি বলেন, আশপাশে ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না ভেসে আসছে। দুধের জন্য কান্না থামছে না তাঁর দুই বছর বয়সী নাতনিরও। নুহা বলেন, কয়েক মাস হয়ে গেছে এক বোতল দুধ চোখে দেখেননি।

একটা সময় গাজার বাসিন্দারাও ঈদ-আনন্দ করতেন। পরিবারকে নিয়ে কোরবানির মাংস খেতেন। শিশুদের কোলাহলে চারপাশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করত।

নুহা উত্তর গাজায় থাকেন তাঁর চার সন্তান ও কয়েকজন নাতি-নাতনিকে নিয়ে। তাঁর ছোট ছেলে ১০ বছর বয়সী মোহাম্মদ বাবার সঙ্গে মিসরে আশ্রয় নিয়েছে। ধীর গলায় নুহা বলেন, ‘সে আমার আদরের ছোট্টটি! ঈদের আবহ সে খুব পছন্দ করত। এখনো সে আমাকে বলে, “মা, ইচ্ছা করে আবার পেছনে ফিরে যাই আর হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলো ফিরিয়ে আনি।”’

নুহাদের ঘরে এখন লবণ ছাড়া কিছু নেই। দিনে এক বেলা সামান্য কিছু খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াই। সবার ছোট নাতনি আলমা এখনো যুদ্ধের কিছুই বোঝে না। ক্ষুধায় সারা দিন কাঁদে সে। তাদের কীভাবে বাঁচিয়ে রাখবেন, সে চিন্তায় দিশাহারা। নুহা বলেন, ‘নিজেদের কোরবানি দেওয়া ছাড়া আর আমাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই। না থামছে বোমাবর্ষণ, না আমাদের ক্ষুধার্ত পেটের কষ্ট আর আমাদের শিশুদের কান্না!’

তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর, দোহা নিউজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ