টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের চরভাবনা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে লাশ তিনটি দাফন করা হয়েছে। এর আগে স্থানীয় চরভাবনা বড় মাদ্রাসা মাঠে তাদের জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়।

নিহতরা হলেন– চরভাবনা গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ আলী, তাঁর দুই ছেলে রাহাত মিয়া ও রাতুল মিয়া। গত মঙ্গলবার সকালে ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে শেরপুর ফেরার পথে টাঙ্গাইলের করাতিপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাস-ট্রাক সংঘর্ষে তাদের প্রাণ যায়। এ ঘটনায় আহত হন একই পরিবারের আরও চারজন। ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতেই তিনজনের লাশ বাড়িতে নিয়ে গেলে স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।

নিহত আমজাদের বড় ভাই টগু মণ্ডল ভাই-ভাতিজার লাশ দেখে পাগলের মতো বিলাপ করছিলেন। মাঝেমধ্যে বুক চাপড়ে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘মাবুদ, তুমি এইডা কি করলা। আমারে না নিয়া ওদের কেন নিয়া গেলা। বড় ভাইয়ের কাঁধে ছোট ভাই ও ভাতিজার লাশ তুইলা দিলা। এ তোমার কেমন বিচার।’

লাশ দেখে বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন আমজাদের ছোট ভাই সফর মণ্ডল। জ্ঞান ফিরে এলেই বলতে থাকেন, ‘ভাইজান চইলা গেল, অহন তাঁর কোরবানি কে দেব। ও রাতুল, ও রাহাত তরা কই গেলি। আমারে অহন কেডা চাচা কইয়া ডাকব।’

চরমোচারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, গত সোমবার কোরবানি দেওয়ার জন্য তাঁর নানা আমজাদ দেড় লাখ টাকা পাঠান। কেনা হয় একটি গরু। প্রতিবছর তাঁর নানা ঈদে বাড়িতে এসে এলাকার গরিব মানুষকে অর্থ সাহায্য করতেন। নিজে তাদের হাতে তুলে দিতেন কোরবানির গোশত। 

আমজাদ হোসেন ঢাকায় ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। থাকতেন রাজধানীর বনশ্রীতে। তাঁর ছোট বোন মোর্শেদা বেগম জানান, গত মঙ্গলবার ভোরে তাঁর ভাই একটি মাইক্রোবাসে করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেন। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। সকাল ৮টার দিকে তাদের সঙ্গে কথাও হয়। কিন্তু ৯টার দিকে পুলিশ ফোন করে জানায় সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর ভাই ও ভাতিজারা মারা গেছে। এ কথা বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলতে থাকেন, ‘ঈদে আমার ভাই-ভাতিজা কোরবানি হইয়া গেল। আল্লাহ এ তোমার কেমন বিচার।’

দুর্ঘটনায় আহত আমজাদ হোসেনের স্ত্রী ও মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত রাহাতের আহত স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে স্বামী, শ্বশুর ও দেবরের দাফন কাজে অংশ নেওয়া জন্য বাড়িতে রয়েছেন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ক রব ন আমজ দ ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

হামাসকে অস্ত্রত্যাগে ও গাজার শাসন ছাড়তে সৌদি, কাতার, মিসরের আহ্বান

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধে এ ভূখণ্ডে হামাসের শাসনের অবসান ঘটানো এবং সংগঠনটিকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে কাতার, সৌদি আরব ও মিসরসহ একাধিক আরব দেশ।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বি–রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রস্তাব পুনরুজ্জীবিত করতে গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্যোগে নিউইয়র্কে সংস্থাটির সদর দপ্তরে একটি সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানেই  গৃহীত সাত পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্রে এ আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণাপত্রটিকে সমর্থন করেছে ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ।

ঘোষণায় বলা হয়, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে অবশ্যই তার শাসন (এ উপত্যকায়) শেষ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। এটি একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।’

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। এতে যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সম্মেলনে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।

আগের দিন, জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদল ইসরায়েল ও হামাস উভয়কে গাজা ত্যাগ করার আহ্বান জানায়; যাতে সাগর উপকূলবর্তী এ অঞ্চলটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।

আরও পড়ুনগাজায় ত্রাণপ্রত্যাশী ৯৩ জনকে হত্যা ইসরায়েলি বাহিনীর, যুদ্ধের বর্বরতার নিন্দায় পোপ২১ জুলাই ২০২৫

ঘোষণায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলারও নিন্দা জানানো হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানায়নি। সম্মেলনের সহআয়োজক ফ্রান্স ঘোষণাপত্রটিকে ‘ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুনগাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ১৮ ঘণ্টা আগে

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো বলেন, ‘প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি শাসন থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ও ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।’

প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি শাসন থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ও ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।জ্যাঁ-নোয়েল বারো, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। এতে যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সম্মেলনে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।

আরও পড়ুনগাজায় ‘এখনই যুদ্ধ থামাতে’ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ ২৮ দেশের আহ্বান২২ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনইসরায়েলের স্নাইপাররা এমনভাবে গুলি ছুড়ছিলেন, যেন পশু শিকার করছেন: গাজার বাসিন্দা২১ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ