পাশাপাশি কবরে বাবা ও দুই ছেলে, পরিবারে মাতম
Published: 5th, June 2025 GMT
টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের চরভাবনা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে লাশ তিনটি দাফন করা হয়েছে। এর আগে স্থানীয় চরভাবনা বড় মাদ্রাসা মাঠে তাদের জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়।
নিহতরা হলেন– চরভাবনা গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ আলী, তাঁর দুই ছেলে রাহাত মিয়া ও রাতুল মিয়া। গত মঙ্গলবার সকালে ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে শেরপুর ফেরার পথে টাঙ্গাইলের করাতিপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাস-ট্রাক সংঘর্ষে তাদের প্রাণ যায়। এ ঘটনায় আহত হন একই পরিবারের আরও চারজন। ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতেই তিনজনের লাশ বাড়িতে নিয়ে গেলে স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
নিহত আমজাদের বড় ভাই টগু মণ্ডল ভাই-ভাতিজার লাশ দেখে পাগলের মতো বিলাপ করছিলেন। মাঝেমধ্যে বুক চাপড়ে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘মাবুদ, তুমি এইডা কি করলা। আমারে না নিয়া ওদের কেন নিয়া গেলা। বড় ভাইয়ের কাঁধে ছোট ভাই ও ভাতিজার লাশ তুইলা দিলা। এ তোমার কেমন বিচার।’
লাশ দেখে বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন আমজাদের ছোট ভাই সফর মণ্ডল। জ্ঞান ফিরে এলেই বলতে থাকেন, ‘ভাইজান চইলা গেল, অহন তাঁর কোরবানি কে দেব। ও রাতুল, ও রাহাত তরা কই গেলি। আমারে অহন কেডা চাচা কইয়া ডাকব।’
চরমোচারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, গত সোমবার কোরবানি দেওয়ার জন্য তাঁর নানা আমজাদ দেড় লাখ টাকা পাঠান। কেনা হয় একটি গরু। প্রতিবছর তাঁর নানা ঈদে বাড়িতে এসে এলাকার গরিব মানুষকে অর্থ সাহায্য করতেন। নিজে তাদের হাতে তুলে দিতেন কোরবানির গোশত।
আমজাদ হোসেন ঢাকায় ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। থাকতেন রাজধানীর বনশ্রীতে। তাঁর ছোট বোন মোর্শেদা বেগম জানান, গত মঙ্গলবার ভোরে তাঁর ভাই একটি মাইক্রোবাসে করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেন। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। সকাল ৮টার দিকে তাদের সঙ্গে কথাও হয়। কিন্তু ৯টার দিকে পুলিশ ফোন করে জানায় সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর ভাই ও ভাতিজারা মারা গেছে। এ কথা বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলতে থাকেন, ‘ঈদে আমার ভাই-ভাতিজা কোরবানি হইয়া গেল। আল্লাহ এ তোমার কেমন বিচার।’
দুর্ঘটনায় আহত আমজাদ হোসেনের স্ত্রী ও মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত রাহাতের আহত স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে স্বামী, শ্বশুর ও দেবরের দাফন কাজে অংশ নেওয়া জন্য বাড়িতে রয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ক রব ন আমজ দ ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা থেকে রাজশাহীতে নিজ বাড়ির সামনে গিয়ে ছিনতাইকারীর কবলে ব্যাংকার দম্পতি
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত এক দম্পতি ঢাকা থেকে রাজশাহীতে নিজ বাড়ির সামনে গিয়ে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে নগরের দেবীসিং পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ওই দম্পতি হলেন রাশিদুর রহমান ও ফাহমিদা সুলতানা। তাঁরা রাজধানীতে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান শাখায় কর্মরত।
রাশিদুর রহমান বলেন, আজ ভোরে ফজরের নামাজের সময় তাঁরা বাস থেকে নগরের তালাইমারি মোড়ে নামেন। সেখান থেকে তাঁরা একটা রিকশা নিয়ে দেবীসিং পাড়ার দিকে রওনা হন। বাড়ির কাছে গিয়ে রাশিদুর নামলেও তাঁর স্ত্রী রিকশাতেই বসে ছিলেন। ওই সময় দুজন ছিনতাইকারী তাঁদের সামনে গিয়ে ধারালো অস্ত্র ঠেকায়। এ সময় তাঁদের মুঠোফোন, মানিব্যাগ, গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, ২৬ হাজার টাকা ও ব্যাংকের আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। সেই সঙ্গে ছিনতাইকারীদের ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তাঁর স্ত্রী ফাহমিদা সুলতানার বাঁ হাতের কিছু অংশ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কেটে যায়। ছিনতাইকারীরা ব্যাগ কেড়ে নেওয়ার সময় ফাহমিদার বোরকা ছিঁড়ে ফেলে।
রাশিদুর রহমানের দাবি, ওই মুহূর্তে পাশের মাদ্রাসা মসজিদে নামাজ চলছিল। তিনি চিৎকার করে ডাকাডাকি করলেও কোনো মানুষ এগিয়ে আসেননি। এই সুযোগে ছিনতাইকারীরা তাঁদের সবকিছু লুট করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। ছিনতাইকারীদের একজনের মাথায় হেলমেট থাকলেও অন্যজনের মাথায় খালি ছিল। সিসিটিভি ক্যামেরায় তাঁকে শনাক্ত করা সম্ভব।
এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে ছিনতাইকারীদের খুঁজে বের করা হবে।
এর আগে ৩ জুন ভোরে ছিনতাইকারীর রাম দায়ের কোপে আহত হয়ে রেজাউল করিম (৪৫) নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নগরের মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে এ ঘটনা ঘটে।