কোরবানির পশুর হাটে জমে উঠেছে কেনাবেচা, চাহিদা বেশি ছোট-মাঝারি গরুর
Published: 5th, June 2025 GMT
রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুরের হাট ঘুরে তিন মণ ওজনের একটি গরুর দাম করছিলেন মালিবাগের আনিসুর রহমান। বিক্রেতা দাম হাঁকিয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার। তবে তিনি ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত বলেছেন। ব্যাপারী কবির মিয়া শেষ দাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বলে দিয়েছেন।
একই ধরনের আরও চারটি গরু এই দামে বিক্রি করেছেন তিনি। বাকি থাকা দুটি এর নিচে বিক্রি করতে পারবেন না বলে জানান তিনি। ক্রেতা-বিক্রেতার দামাদামির এ দৃশ্যই ছিল গতকাল বুধবার রাজধানীর সব হাটজুড়ে।
পশুর হাটে ছোট ও মাঝারি গরুর বিক্রি বেশি হচ্ছে। হাটে ছোট দুই মণ ওজনের গরু ৬০-৭০ হাজার, তিন মণ ওজনের ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ-ছয় মণ ওজনের গরু ১ লাখ ৪০ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ছাগল পাওয়া যাচ্ছে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে গত রোববার ১৬টি গরু নিয়ে উত্তর শাহজাহানপুর পশুর হাটে এসেছেন রফিকুল ইসলাম। সমকালকে তিনি জানান, তিস্তার চর এলাকায় নিজ খামারের ১০টি আর বাকি ছয়টি গরু কিনে এনেছেন। এর মধ্যে ১২টি গরু বিক্রি করেছেন। ছোট আড়াই মণ ওজনের গরু বিক্রি করেছেন ৭০ হাজার আর পাঁচ মণ ওজনের গরু বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা করে।
এই হাটে ফরিদপুর থেকে ৪০টি ছাগল এনেছেন রশিদ মিয়া। ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের ছাগলের দাম চাচ্ছেন ২০ হাজার টাকা। তবে ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করবেন। বড় ২৫-৩০ কেজি ওজনের ছাগলের দাম হাঁকিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা। ৩০ হাজার টাকা হলে বিক্রি করবেন।
এই হাটের ইজারাদার আনিসুর রহমান টিপু সমকালকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত থেকেই হাট জমে উঠেছে। ছোট-বড়-মাঝারি সব ধরনের গরু এক থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। হাটে ছাগলও এসেছে পর্যাপ্ত।’
গাবতলীর পশুর হাটে এবারও এসেছে মরুর উট। ভারতের রাজস্থান থেকে আনা বিশালদেহী পুরুষ উটটি হাটজুড়ে কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ সেলফি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন, আবার কেউ কেউ ইউটিউব কনটেন্ট বানাতেও ব্যস্ত। বিক্রেতা ১০ ফুটের বেশি উচ্চতা ও ২৮ মণ ওজনের উটটির দাম হাঁকাচ্ছেন ৩০ লাখ টাকা।
উটের দেখভালে থাকা মকবুল ইসলাম জানান, দু’দিন আগে ২৮ লাখ চেয়েছিলাম। এখন শুনছি, সারা শহরে একটা উটই আছে। তাই ৩০ লাখ বলছি।
গাবতলী হাটে দেখা যায়, সারি সারি গরু-ছাগল সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। গতকাল দুপুরের পর থেকেই এই হাটে ক্রেতার উপস্থিতি বাড়ে।
পশুর হাটে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গতকাল দুপুরে রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবসংলগ্ন কোরবানির পশুর হাট পরিদর্শনে আসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.
তিনি বলেন, অসুস্থ পশু যেন হাটে ঢুকতে না পারে, সে জন্য চেকআপের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ অসুস্থ বা আহত হলে যেন চিকিৎসা নিতে পারে, সে জন্য মেডিকেল টিম রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের কোরবানির ঈদের হাট ব্যবস্থাপনা ও সার্বিক প্রস্তুতি অত্যন্ত ভালো।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাচ্ছি গরুর এমন একটা স্বাভাবিক দাম থাকুক, যেখানে কৃষক বা খামারি লাভবান হয় এবং ক্রেতাও লাভবান হয়। যাতে উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষিত হয় এবং কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গর ক রব ন র হ ট কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস