Prothomalo:
2025-06-06@19:25:41 GMT

আইন আছে, প্রয়োগ নেই

Published: 6th, June 2025 GMT

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকার নাম প্রথম সারিতে থাকছে। এ শহরের বায়ু যে বিষে পরিণত হয়েছে, তা বলাটা অত্যুক্তি হবে না। এরপরও বায়দূষণ রোধে আমরা আসলে কী করছি? ঢাকার আকাশে ধোঁয়া আর ধুলার স্তর দিন দিন আরও ঘন হয়ে উঠছে। অথচ এই দূষণের উৎস ও প্রতিকার—দুটিই আমাদের জানা। আমাদের হাতে আইন আছে, নীতিমালা আছে, এমনকি রয়েছে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনাও; কিন্তু নেই কার্যকর প্রয়োগ। এই ব্যর্থতাই আমাদের নাগরিক জীবনে এক নীরব মহামারির জন্ম দিয়েছে।

সম্প্রতি একটি সেমিনারে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, নগর-পরিকল্পনাবিদ, চিকিৎসক ও গবেষকেরা পরিবেশের চিত্র যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বিপর্যয়করও। গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৪ সালে ঢাকায় একিউআই মাত্রা ১২৪-এ পৌঁছেছিল এবং এই মাত্রা টানা ৩৫ দিন স্থায়ী ছিল—যা বিশ্বে নজিরবিহীন। জনঘনত্বের চাপে, যানবাহনের ধোঁয়ায়, নির্মাণকাজের ধুলায় এবং ইটভাটাসহ নানা উৎস থেকে প্রতিনিয়ত যে বায়ু আমরা গ্রহণ করছি, তা এখন মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা ভয়াবহ—২০২১ সালে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণকে দায়ী করা হয়েছিল। এই সংখ্যা শুধু মৃত্যুই নয়, অর্থনীতিতে বিশাল ক্ষতির বার্তা দেয়। চিকিৎসা ব্যয়, কর্মক্ষমতা হ্রাস ও প্রজনন স্বাস্থ্যেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।

সমস্যা ও সমাধান—দুটিই আমাদের সামনে স্পষ্ট। পরিবেশসংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা, আদালতের নির্দেশনা, এমনকি বাস্তবায়নের জন্য নিয়োজিত সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ও আছে। কিন্তু কার্যকর মনিটরিং ও আইনের প্রয়োগ না থাকায় সব উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। নির্মাণক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয় না, শিল্পকারখানায় দূষণরোধী প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় না এবং ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে সরকারি নির্দেশনাগুলোও উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

এখন সময় এসেছে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অবহেলার এই চক্র ভাঙার। প্রথমত, পরিবেশ আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, দূষণ রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে, যাতে শিল্পোন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষা একসঙ্গে চলতে পারে। তৃতীয়ত, নাগরিকদের সচেতন করতে হবে, যাতে তাঁরাও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারেন।

রাজধানীবাসীর নিজেদের ভালো থাকার জন্য, তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতেই হবে। তা ছাড়া রাজধানী শহর হিসেবে এর যে আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য আছে, সে জন্য ঢাকার বায়ুদূষণ রোধ করা আরও বেশি জরুরি। ফলে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের এখানে কার্যকর ভূমিকা রাখতেই হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ আম দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চালাক লোক দিয়ে কি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সম্ভব

সম্প্রতি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন নিয়ে এক আলোচনায় একজন মুখ্য আলোচকের কাছে শুনলাম, পুঁজিবাজারের দৈন্য ঘোচাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ‘চালাক লোক’ নিয়োগ দিতে হবে।

প্রায় ১০ বছর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মনোনীত পরিচালক পদে থেকে আমার পুঁজিবাজারের নিবন্ধিত ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স আর মার্চেন্ট ব্যাংকের বোর্ডের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। গ্রামীণফোনের আইপিও কাজে আমার ও আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাজ করার অভিজ্ঞতা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে দিকনির্দেশনামূলক ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে করি। তা ছাড়া পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের নির্দিষ্ট প্রকল্পে কাজের সুযোগও হয়েছে।

সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীনির্ভর ও দুষ্টজন প্রভাবিত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সমস্যার গভীরে না গিয়ে বা রোগের কারণ নির্ণয় না করে টোটকা সমাধান দিলে কোনো সুফল আসবে না।

২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে নরওয়ের অসলোয় গ্রামীণফোনের মালিকানা প্রতিষ্ঠান টেলিনরের প্রধান কার্যালয়ে তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ব্যক্তি এবং এশীয় বিভাগের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আমরা প্রথমত চেষ্টা করছিলাম, গ্রামীণফোনের সাফল্যকে যদি বাজারে বিকাতে হয়, তাহলে তাঁরা ঢাকার সঙ্গে সঙ্গে যুগপৎভাবে লন্ডনে কিংবা সিঙ্গাপুরে এমনকি নিউইয়র্কের শেয়ারবাজারে গ্রামীণফোনকে যৌথ তালিকাভুক্তি করার কথা ভাবতে পারেন।

এটি ছিল একটি অত্যন্ত দুরূহ কাজ। বাংলাদেশে এর আগে এত বড় কোনো শেয়ার (প্রায় ১০০০ কোটি টাকা) কখনো তালিকাভুক্তি হয়নি। আমরা সংগত কারণেই ধারণা করেছিলাম, গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে আমরা ও কর্তাব্যক্তিরা অত্যন্ত সজাগ ছিলাম, যাতে একে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি না হতে পারে।

গ্রামীণফোনের শেয়ার কি ১ টাকা, নাকি ১০ টাকা, নাকি ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যে বাজারে তালিকাভুক্ত করব, সেটি আমাদের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিল।

তৃতীয় চ্যালেঞ্জটি ছিল গ্রামীণফোনের শেয়ারের প্রাইজ ডিসকভারি কিংবা গ্রামীণফোনের ভ্যালুয়েশন।

চতুর্থ চ্যালেঞ্জ, মূলত গ্রামীণফোনের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে গ্রামীণফোন যদি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে কি না কিংবা সরকারের করহারে কোনো ধরনের অব্যাহতি দেওয়া হবে কি না কিংবা করহার কমিয়ে আনা হবে কি না।

পঞ্চম চ্যালেঞ্জ ছিল, সব ধরনের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের বাইরে থেকে গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তিকে বিবেচনায় আনা। ষষ্ঠ চ্যালেঞ্জ ছিল ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ব্রোকার কিংবা ব্যক্তিদের কোনো সুযোগ-সুবিধার বিবেচনায় না নিয়ে কীভাবে গ্রামীণফোনের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে।

প্রথম দিকে গ্রামীণফোনের প্রাইজ ডিসকভারি, ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম বিবেচনায় গ্রামীণফোনকে তালিকাভুক্ত করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছিল না। সে ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিয়েছিল। তার মধ্যে একটি হচ্ছে শেয়ারের অভিহিত মূল্য কী হবে। দ্বিতীয় যে জিনিসটি আমরা লক্ষ করেছি, সেটি হচ্ছে বিভিন্ন ফায়ারওয়াল কীভাবে কার্যকর করা হবে।

এখানে মনে করা হয়েছিল, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কীভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে; গ্রামীণফোনের কর্মকর্তাদের কীভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে; গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের কীভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে, তথা বাংলাদেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কীভাবে আরও সম্পৃক্ত করা যাবে।

এ ধরনের বড় শেয়ারকে বাজারে এনে বাজারের মধ্যে গভীরতা এমনকি ক্ষুদ্র ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা অগ্রাধিকারে ছিল। সে ক্ষেত্রে সংগত কারণেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদনপ্রাপ্তি বিরাট সমস্যা ছিল। তার সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে গ্রামীণফোনের জন্য তালিকাভুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের করহার কমানোর ব্যবস্থা করাও ছিল আরেকটি চ্যালেঞ্জ।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ২০০৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে গ্রামীণফোনের আইপিও পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা সম্ভব হয়।

এ ক্ষেত্রে আরও যে বিষয়ের ওপর নজর আনতে চাই, সেটি হলো বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশের বাজারে আনার ক্ষেত্রে, তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কীভাবে প্রণোদনা দেওয়া হবে, তা ঠিক করা। সেটি এনবিআরের প্রণোদনা, শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রণোদনা, শেয়ারবাজার সম্পর্কে বিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা, এমনকি আমাদের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সহায়তা, যা–ই হোক না কেন। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে প্রতিষ্ঠানকে চেষ্টা-তদবির করে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে, সেই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কী; প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ নগদ অর্থ সঞ্চালনের সক্ষমতা কী; তারা তাদের কর্মীদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করে; তাদের সাপ্লায়ারদের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করে; তারা তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কী ধরনের স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখছে, সেগুলো নজরদারিতে আনা।

যদি কোনো বড়, বহুজাতিক ও নামকরা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে আনতে হয়, তাহলে তাদের কোন কোন জায়গায় ছাড় দেওয়া যেতে পারে; সাধারণ মানুষ ও বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি না করে কীভাবে আরও সক্রিয়ভাবে বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা যেতে পারে, সেটি ভাবতে হবে এবং গুরুত্ব দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে কীভাবে গভীরতা সৃষ্টি করতে পারি, স্বচ্ছতা সৃষ্টি করতে পারি, তা নিয়েও ভাবতে হবে।

বাংলাদেশের বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর অনেককেই ব্রোকারেজ লাইসেন্সের জন্য দৌড়াতে দেখেছি, কিন্তু নিজের প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনার কোনো ইচ্ছা দেখিনি। অনেক লাভজনক কোম্পানি এত মুনাফা করে যে তারা অনেক দামে বা ডিভিডেন্ড দিয়ে পুঁজি সংগ্রহের চেয়ে ব্যাংকঋণনির্ভর থাকাটাই বেশি পছন্দ করে কিংবা তাদের সাফল্য সাধারণের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে রাজি হয় না।

বাংলাদেশে ব্যাংকের ঋণসীমা তাদের পুঁজিনির্ভর হলেও ঋণগ্রহীতার ঋণের পরিমাণ তার পুঁজিনির্ভর নয়। তাই তাদের পুঁজি বাড়ানোর চাপ নেই। অন্যদিকে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে অনেক ছাড় দিয়েও অন্যদের পুঁজিবাজারে আনা যায়নি।

এ ছাড়া পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অংশীজনের নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তাদের অনেকেই পুঁজিবাজারের সঙ্গে ভুলে জুয়া খেলাকে মাখিয়ে ফেলেন কিংবা দীর্ঘকালীন বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে চান না। চেষ্টাচরিত্র ছাড়াই মওকায় টাকা বানানোর সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চান। পুঁজিবাজার নিয়ে সঠিক জ্ঞানের অভাবও এখানে প্রতিবন্ধক। বাজারের অপারেটরদের অপরিপক্বতা আর সহজেই ঘুষ-দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতাও বাজার উন্নয়নে বিরাট বাধা।

আরেকটি নির্মম সত্যি হচ্ছে, আমাদের নীতিনির্ধারকেরা কখনোই পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী ছিলেন না, যদিও জনসমক্ষে তাদের অনেকেই আশ্বাসবাণী শুনিয়ে থাকেন। তাই চালাক লোক নয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অপরাপর দেশের মতো সঠিক দিকনির্দেশনা, নির্মোহ বাস্তবায়ন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ সহজীকরণ আর নিয়মিত নজরদারির। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা।

মামুন রশীদ অর্থনীতি বিশ্লেষক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কতটা বৈষম্যবিরোধী হলো এবারের বাজেট
  • সিদ্ধিরগঞ্জে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার যুবকের পরিচয় সনাক্ত
  • চালাক লোক দিয়ে কি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সম্ভব