বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকার নাম প্রথম সারিতে থাকছে। এ শহরের বায়ু যে বিষে পরিণত হয়েছে, তা বলাটা অত্যুক্তি হবে না। এরপরও বায়দূষণ রোধে আমরা আসলে কী করছি? ঢাকার আকাশে ধোঁয়া আর ধুলার স্তর দিন দিন আরও ঘন হয়ে উঠছে। অথচ এই দূষণের উৎস ও প্রতিকার—দুটিই আমাদের জানা। আমাদের হাতে আইন আছে, নীতিমালা আছে, এমনকি রয়েছে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনাও; কিন্তু নেই কার্যকর প্রয়োগ। এই ব্যর্থতাই আমাদের নাগরিক জীবনে এক নীরব মহামারির জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি একটি সেমিনারে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, নগর-পরিকল্পনাবিদ, চিকিৎসক ও গবেষকেরা পরিবেশের চিত্র যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বিপর্যয়করও। গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৪ সালে ঢাকায় একিউআই মাত্রা ১২৪-এ পৌঁছেছিল এবং এই মাত্রা টানা ৩৫ দিন স্থায়ী ছিল—যা বিশ্বে নজিরবিহীন। জনঘনত্বের চাপে, যানবাহনের ধোঁয়ায়, নির্মাণকাজের ধুলায় এবং ইটভাটাসহ নানা উৎস থেকে প্রতিনিয়ত যে বায়ু আমরা গ্রহণ করছি, তা এখন মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা ভয়াবহ—২০২১ সালে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণকে দায়ী করা হয়েছিল। এই সংখ্যা শুধু মৃত্যুই নয়, অর্থনীতিতে বিশাল ক্ষতির বার্তা দেয়। চিকিৎসা ব্যয়, কর্মক্ষমতা হ্রাস ও প্রজনন স্বাস্থ্যেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
সমস্যা ও সমাধান—দুটিই আমাদের সামনে স্পষ্ট। পরিবেশসংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা, আদালতের নির্দেশনা, এমনকি বাস্তবায়নের জন্য নিয়োজিত সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ও আছে। কিন্তু কার্যকর মনিটরিং ও আইনের প্রয়োগ না থাকায় সব উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। নির্মাণক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয় না, শিল্পকারখানায় দূষণরোধী প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় না এবং ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে সরকারি নির্দেশনাগুলোও উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
এখন সময় এসেছে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অবহেলার এই চক্র ভাঙার। প্রথমত, পরিবেশ আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, দূষণ রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে, যাতে শিল্পোন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষা একসঙ্গে চলতে পারে। তৃতীয়ত, নাগরিকদের সচেতন করতে হবে, যাতে তাঁরাও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারেন।
রাজধানীবাসীর নিজেদের ভালো থাকার জন্য, তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতেই হবে। তা ছাড়া রাজধানী শহর হিসেবে এর যে আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য আছে, সে জন্য ঢাকার বায়ুদূষণ রোধ করা আরও বেশি জরুরি। ফলে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের এখানে কার্যকর ভূমিকা রাখতেই হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব শ আম দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রেন ক্যানসারের যে ৭টি লক্ষণ আমরা সাধারণ ভেবে এড়িয়ে যাই
শুরুতে উদাহরণ হিসেবে যেসব লক্ষণের কথা জানলেন, ব্রেন ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের শুরুতে একই রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে সমস্যা হলো, এসব লক্ষণ আর সাধারণ মাথাব্যথা বা ক্লান্তির মধ্যে পার্থক্য বোঝা সত্যিই কঠিন।
দীর্ঘদিন ব্রেন ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাজ্যের লরা স্ট্যান্ডেন। এই রোগে আক্রান্ত অনেক রোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে—রোগীরা নিজেরা প্রথম দিকে এসব উপসর্গকে গুরুত্ব দেননি।
এমনকি চিকিৎসকেরাও অনেক সময় ব্যাপারটা হালকাভাবে নিয়েছেন। ফলে রোগ শনাক্ত হতে দেরি হয়ে গেছে।
আর এই দেরি কিন্তু মারাত্মক। কারণ, ক্যানসার যত দেরিতে ধরা পড়ে, চিকিৎসাও তত জটিল ও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।
আসল সমস্যা হলো মস্তিষ্কের ক্যানসারের উপসর্গ অনেকটা আমাদের দৈনন্দিন সমস্যার মতোই। ক্লান্তি, মানসিক চাপ, মাইগ্রেন, এমনকি মেনোপজের সময়ের সমস্যার সঙ্গেও এর মিল আছে।
আবার অনেক সাধারণ রোগের লক্ষণও প্রায় একই রকম। যেমন দুশ্চিন্তা, সাইনাসের সমস্যা বা দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা।
যখন লক্ষণগুলো অস্পষ্ট আর হালকা থাকে, তখন সেসব উপেক্ষা করা সহজ হয়ে যায়। নিজের মনেই নানা যুক্তি খুঁজে নিই আমরা। তাই অনেকে অপেক্ষা করেন আর ভাবেন, দেখা যাক, সমস্যাটা কত দূর গড়ায়।
অনেকে ব্রেন ক্যানসার হওয়ার দুই-তিন মাস আগে থেকেই লক্ষণ টের পান। কিন্তু সাধারণ সমস্যা ভেবে তা উড়িয়ে দেন। এতে সমস্যা আরও জটিল হয়ে যায়।
এবার জেনে নিই সেই ৭টি সমস্যা সম্পর্কে, যেসব আমরা সাধারণ সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করি। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, এসব লক্ষণের মধ্যে একটা বা দুটো থাকলেই যে কারও ব্রেন ক্যানসার হয়েছে, তা কিন্তু নয়। তবে কোনো সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে থাকলে কিংবা একদম অস্বাভাবিক মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
আরও পড়ুনরাতের এই অভ্যাসের কারণে মস্তিষ্ক যেভাবে দ্রুত বুড়িয়ে যায়১১ নভেম্বর ২০২৪১. কথা খুঁজে না পাওয়াঅনেকে হঠাৎ করে নির্দিষ্ট শব্দ মনে করতে পারেন না। পুরো বাক্য বলতে গেলে আটকে যান। কথোপকথনে অংশ নিতে গেলে একটু দেরি হয়।
শব্দ খুঁজে না পাওয়ার সমস্যা অবশ্য ক্লান্তি, মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণেও হতে পারে। কিন্তু যদি এই সমস্যা দীর্ঘদিন থাকে, কিংবা হঠাৎ করে শুরু হয়, তাহলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার।
২. মানসিক ধোঁয়াশাঅনেকের মনে হয়, যেন মাথার ভেতর কুয়াশা জমে আছে। মনোযোগ দিতে পারছেন না, পরিষ্কার করে ভাবতে পারছেন না, কিছু মনে থাকছে না। ফলে রোগ ধরা পড়তে আরও দেরি হয়ে যায়।
এই মাথার ঘোলাটে ভাব অবশ্য অনেক কারণেই হতে পারে। মেনোপজ, ঠিকমতো ঘুম না হওয়া কিংবা মানসিক চাপ। কিন্তু যদি এই ঘোলাটে ভাবের সঙ্গে আরও কিছু স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমন কথা বলতে বা দেখতে সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তনও ব্রেন ক্যানসারের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে