ছেলের মুখে হাসি ফোটাতে সাইকেলে ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিলেন বাবা
Published: 7th, June 2025 GMT
ঢাকার মহাখালী থেকে ছেলের জন্য ১৫০০ টাকায় একটি পুরোনো সাইকেল কিনেছিলেন রিকশাচালক রাজু। বিপত্তি বাধে সাইকেলটি তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়ার সময়। বাসে ভাড়া চাওয়া হয় দুই হাজার টাকা। কিন্তু, রাজুর পকেটে ছিল ২২০০ টাকার মতো।
এত টাকা খরচ করে বাসে গেলে পরিবারের জন্য আর কোনো টাকাই থাকবে না। বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ভোরে সাইকেল চালিয়ে ঢাকা থেকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হন। প্রায় ২১ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে যখন বগুড়ায় পৌঁছান তখন মধ্যরাত।
সেই সময় বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট বসেছিল। রাজুকে থামান চেকপোস্টে দায়িত্বরত সেনা সদস্যরা। এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট আল ফাহাদ। রাজুর মুখে ঘটনা শুনে দ্রুত তাকে খাবার দেওয়া হয়। পরে একটি ট্রাকে করে তাকে গাইবান্ধায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন তিনি।
শনিবার (৭ জুন) মুঠোফোনে রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান রাজু। বলেন, তিনি ঢাকার নাখালপাড়া লুকাস মোড়ে থাকেন। সেখানে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে। বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে ও দুই মেয়ে থাক। ছেলে একটি সাইকেলের আবদার করেছিল। দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টায় প্রায় এক মাস আগে ১৫০০ টাকায় লাল রঙের একটি পুরোনো সাইকেল কেনেন। ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় সেটি সঙ্গে নিয়ে নেন।
রাজু বলেন, ‘‘বাড়ি যাওয়ার সময় পকেটে ছিল ২২০০ টাকার মতো। বাসে চাইকেলসহ ভাড়া চেয়েছিল ২ হাজার টাকা। এত টাকা ভাড়া দিয়ে গেলে পরিবারের জন্য কিছুই থাকবে না। বাধ্য হয়ে সাইকেল চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেই। বগুড়া পৌছানোর আগে পর্যন্ত পথে তিনবার ৫০ টাকা করে কিছুটা পথ ভ্যানে চরেছি। যমুনা সেতুতে সাইকেল নিয়ে পার হওয়ার অনুমতি পাচ্ছিলাম না। পরে একটি মিনি ট্রাকে ১০০ টাকা দিয়ে সেতু পার হই। ট্রাকটি গাইবান্ধা দিকে যাচ্ছিল, কিন্তু বেশি ভাড়া দিতে না পারায় তারা আমাকে নামিয়ে দেয়।’’
তিনি বলেন, ‘‘এত দীর্ঘ পথ সাইকেলে পাড়ি দিতে পারব ভাবিনি। আগে কখনো এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। সেদিন বগুড়ায় পৌছার পর সেনাবাহিনী অনেক সহযোগিতা করেছে। খাবার দিয়েছে, ট্রাকে করে পলাশবাড়ীতে পৌঁছানোর ব্যবস্থাও করেছে তারা। এতে আনন্দে বাড়ি ফিরতে পেরেছি। ছেলেকে সাইকেল উপহার দিতে পেরেছি। এটি ওর পড়াশোনায় উপকারে আসবে। সাইকেল পেয়ে ওর মুখে হাসি ফুটেছে, এটাই আনন্দের।’’
ঢাকা/এনাম/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চীনে জন্মহার বাড়াতে বাবা-মাকে ১৫০০ ডলার দেওয়া হবে
জন্মহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চীন সরকার প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী ভর্তুকি দেওয়া শুরু করেছে। সরকার তিন বছরের কম বয়সী প্রতিটি সন্তানের জন্য বাবা-মায়েদের প্রতি বছর ৩ হাজার ৬০০ ইউয়ান (৫০০ ডলার) দেবে। মঙ্গলবার বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রায় এক দশক আগে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি তাদের বিতর্কিত এক সন্তান নীতি বাতিল করার পরেও দেশের জন্মহার কমছে। এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি জনসংখ্যা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, জন্মহার বাড়াতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি প্রায় ২ কোটি পরিবারকে সন্তান লালন-পালনের খরচ বহন করতে সাহায্য করবে।
সোমবার ঘোষিত এই প্রকল্পে অভিভাবকদের প্রতি সন্তানের জন্য মোট ১০ হাজার ৮০০ ইউয়ান (১,৫০০ ডলার) পর্যন্ত অর্থ প্রদান করা হবে।
চীনের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে নীতিটি প্রয়োগ করা হবে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের পরিবারগুলোও আংশিক ভর্তুকির জন্য আবেদন করতে পারবে।
চীনে জন্মহার বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সরকারগুলোর প্রচেষ্টা অনুসরণ করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মার্চ মাসে, চীনের উত্তরাঞ্চলের একটি শহর হোহোট কমপক্ষে তিনটি সন্তান সহ দম্পতিদের জন্য প্রতি শিশুর জন্য এক লাখ ইউয়ান পর্যন্ত অর্থ প্রদান শুরু করে। বেইজিংয়ের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শহর শেনিয়াং তিন বছরের কম বয়সী তৃতীয় সন্তানসহ স্থানীয় পরিবারগুলোকে মাসে ৫০০ ইউয়ান প্রদান করে। গত সপ্তাহে, বেইজিং স্থানীয় সরকারগুলোকে বিনামূল্যে প্রাক-বিদ্যালয় শিক্ষা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তৈরির জন্যও আহ্বান জানিয়েছে।
ঢাকা/শাহেদ