ইউরোপীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস ও যুক্তরাজ্যের উড়োজাহাজ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মেনজিস এভিয়েশন বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব গড়ে তোলার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এয়ারবাসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াউটার ভ্যান ওয়ার্শ ও মেনজিসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লস ওয়াইলি। এ সময় তাঁরা এ আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সাক্ষাতে ওয়াউটার ভ্যান প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছি। আমরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে এবং সেটিকে লাভজনক করে তুলতে আগ্রহী।’

ওয়াউটার ভ্যান জানান, বাংলাদেশ যদি বিমানের বহরে এয়ারবাস যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে মোট অর্থায়নের ৮৫ শতাংশ এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি ফিন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিমান বহর আধুনিকায়নের জন্য বাংলাদেশ সব ধরনের প্রস্তাব শুনতে আগ্রহী। তবে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি জানতে আগ্রহী, কী করা যায়, কী করা উচিত। আমরা আপনাদের কথা শুনব। কিন্তু দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত আশা করবেন না। আমাদের সবকিছু নতুনভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।’

লন্ডনভিত্তিক মেনজিস এভিয়েশন জানায়, তারা ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও এয়ার কার্গো সেবা প্রদানে অন্যান্য প্রতিযোগীর সঙ্গে অংশ নিতে প্রস্তুত। কারণ, তারা অন্তত ৬৫টি দেশে ৩০০টির বেশি বিমানবন্দরে এ ধরনের সেবা দিয়ে আসছে।

মেনজিস এভিয়েশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লস ওয়াইলি বলেন, ‘আপনার জাতীয় বিমান সংস্থার পাশাপাশি আমরা বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোকেও সহায়তা করতে চাই।’

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মেনজিস এভিয়েশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লস ওয়াইলি। গতকাল মঙ্গলবার, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চার বন্ধুর ক্যাফে পুড়ল শত্রুতার আগুনে

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর একটি ক্যাফে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের গড়ের বাড়ি কাঞ্চনপুর এলাকায় অবস্থিত তালতলা ক্যাফে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য একই ইউনিয়নের এক তরুণ ও তার সহযোগীকে দায়ী করেছেন ক্যাফেটির চার উদ্যোক্তা। তারা সবাই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। 
স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমারখালী-ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের গড়ের বাড়ি কাঞ্চনপুর এলাকায় সড়কের দুই পাশে প্রায় পাঁচ শতাধিক তালগাছ আছে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন দূর-দূরান্তের শত শত দর্শনার্থী আসেন। বছরখানেক আগে কাঞ্চনপুর গ্রামের চার তরুণ ১৩ শতাংশ জমিতে তালতলা ক্যাফেটি গড়ে তোলেন। এখানে নির্ধারিত ফি দিয়ে নৌকাভ্রমণ, দোলনা ও নাগরদোলায় চড়া যায়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে আড্ডা ও চা-কফি পানের জন্য ৮-১০টি খড়ের ঘর আছে। 
ক্যাফেটির অংশীদার শাহ রুবায়েত ইসলাম রোহান ঢাকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তিনি জানিয়েছেন, বছরখানেক আগে একই গ্রামের বাসিন্দা কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র স্বাধীন আহমেদ, রিয়াদ ও কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র সজিব আহমেদের সঙ্গে মিলে তিনি ওই ব্যবসা শুরু করেন। সারাবছর তারা চারজনের সঙ্গে আরও তিন তরুণ কর্মী কাজ করেন। উৎসবের সময় লোকসমাগম বাড়লে আরও পাঁচজনকে চুক্তিতে কাজে নেন। পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠানটি আরও বড় করার পরিকল্পনা ছিল। 
রোহানের অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একই ইউনিয়নের জংগলী গ্রামের শফি মণ্ডলের ছেলে সজল ১০-১২ জনকে নিয়ে ক্যাফেতে আসেন। তারা টিকিট ছাড়াই দোলনা ও নৌকায় চড়েন। এ সময় টাকা চাইলে কর্মীদের সঙ্গে কয়েক দফায় তাদের তর্কাতর্কি হয়। রাত ১২টার দিকে ক্যাফেটি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান। রাত আড়াইটার দিকে তারা সেখানে অগ্নিসংযোগের সংবাদ পান। 
বুধবার বিকেলে সেখানে গিয়ে ক্যাফের প্রধান ঘরটির অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। সেখানে পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া গ্যাস সিলিন্ডার, চুলা, ওভেনসহ আসবাবপত্র ও অন্যান্য পণ্য। এখান থেকে ফিরে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। কুষ্টিয়া শহর থেকে পরিবার নিয়ে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দর্শনার্থী বলেন, রাতে কারা যেন ক্যাফেতে আগুন লাগিয়েছে। তাই ফিরে যাচ্ছেন।
ক্যাফের নৌকাচালক নিশান এ সময় বলেন, ‘সন্ধ্যায় কয়েকজনের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। রাতে ঘুমিয়েছিলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি, আগুন জ্বলছে। দু’জনকে মোটরসাইকেলে করে জংগলীর দিকে চলে যেতে দেখি। তাদের চিনতে পারিনি।’
বক্তব্য জানতে সজল ও তাঁর বাবা শফি মণ্ডলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি। চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান তুষার বলেন, তিনি ফেসবুকে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি জানতে পেরেছেন। যারা জড়িত তাদের শাস্তি চান।
সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জানিয়ে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাননি। এদিকে ক্যাফেটির উদ্যোক্তা চার বন্ধু যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারেন এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দেন ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ