ইরান উত্তেজনার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন কর্মী সরানোর নির্দেশ ট্রাম্পের
Published: 12th, June 2025 GMT
পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন কর্মী কমানোর নির্দেশ দিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ঠিক কী কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। তবে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বৃদ্ধি এর নেপথ্যের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশে এবং বিদেশে আমেরিকানদের নিরাপদ রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই প্রতিশ্রুতি মেনে, আমরা আমাদের সব দূতাবাসে কর্মীদের অবস্থান নিয়মিত মূল্যায়ন করি। সর্বশেষ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে, আমরা ইরাকে আমাদের মিশন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ট্রাম্পের চেষ্টা অচলাবস্থায় রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে মার্কিন গোয়েন্দারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার বিরুদ্ধে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, এটিই কিছু আমেরিকানকে মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার একটি কারণ। যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে, ইরান ইরাকে অবস্থিত কিছু মার্কিন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিতে পারে।
ক্যাম্প ডেভিডে ট্রাম্প তার জাতীয় নিরাপত্তা দলের একটি বৈঠক করার তিন দিন পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে কিছু কর্মী প্রত্যাহারের এই ঘটনা ঘটলো।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ থেকে বিরত রাখতে একটি চুক্তির আশায় ছিলেন।
তবে বুধবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এখন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থামানোর ব্যাপারে আগের চেয়ে কম আত্মবিশ্বাসী।
সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার ৪০ মিনিটের একটি টেলিফোন আলাপ করেন, যা ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ ছিল বলে জানানো হয়েছে। নেতানিয়াহু বরাবরই কূটনৈতিক নয়, বরং সামরিক পথেই ইরানকে মোকাবিলার পক্ষে।
মধ্যপ্রাচ্যে থেকে কিছু মার্কিন কর্মী ও পরিবার সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, “ওদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, কারণ এলাকাটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। আমরা দেখব কী হয়।”
তিনি আরো বলেন, “তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরে যাওয়ার জন্য, আর আমরা দেখছি কী ঘটে।”
পারমাণবিক আলোচনা একটি সংকটময় পর্যায়ে থাকায় এই সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রকৃত উদ্বেগের ফল কি না, নাকি কৌশলগত সংকেত দেওয়ার অংশ, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, বুধবার (১১ জুন) সকালে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসির জাদেহ তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে এই অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দিয়েছিলেন।
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তেহরানে মন্ত্রিসভার বৈঠকের ফাঁকে সাংবাদিকদের বলেন, “যদি ইরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে আমাদের চেয়ে আমেরিকার বেশি ক্ষতি হবে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই অঞ্চলে সব মার্কিন ঘাঁটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালের মধ্যে রয়েছে। ইরান ‘কোনো দ্বিধা ছাড়াই যুদ্ধের আয়োজক দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে।”
নাসির জাদেহ আরো জানান, ইরান তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ করেছে এবং তার অপারেশনাল বাহিনী ‘সম্পূর্ণরূপে সজ্জিত’ এবং যেকোনো সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুত।
মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের (সেন্টকম) কমান্ডার জেনারেল মাইকেল কুরিলা কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার একদিন পর ইরানি মন্ত্রী এই হুমকি দেন। জেনারেল মাইকেল কুরিলা মার্কিন কংগ্রেসকে বলেছেন, তিনি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে ট্রাম্পের কাছে ‘বিভিন্ন বিকল্প’ উপস্থাপন করেছেন।
ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলে সেন্টকম শক্তি প্রয়োগ করতে প্রস্তুত কিনা সে সম্পর্কে হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান মাইক রজার্সের প্রশ্নের জবাবে কুরিলা ‘হ্যাঁ’ বলেছেন।
ওমানের মধ্যস্থতায় চলমান পরোক্ষ পারমাণবিক আলোচনা সত্ত্বেও তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা এখনও তুঙ্গে। প্রধান সমস্যা হলো ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি।
যুক্তরাষ্ট্র ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণ বন্ধের দাবি করলেও, ইরানি আলোচকরা জোর দিয়ে বলছেন, এই কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা যাবে না এবং চুক্তি হোক বা না হোক তা অব্যাহত থাকবে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ যেমন- কুয়েত ও বাহরাইন থেকেও মার্কিন সামরিক কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের স্বেচ্ছায় সরিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন।
বুধবার পেন্টাগনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘অনেকগুলো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ইরান এমন কিছু তৈরি করার দিকে এগোচ্ছে, যা দেখতে একটি পারমাণবিক অস্ত্রের মতো’।
তবে ইরান বলছে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুধু বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এবং পারমাণবিক বোমা তৈরির উদ্দেশ্যে নয়।
ষষ্ঠ দফা পারমাণবিক আলোচনা রবিবার (১৫ জুন) মাসকটে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কয়েক মাসে আগে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপ নেবে। গতকাল বুধবার ট্রাম্প বলেন, তিনি এখন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থামানোর ব্যাপারে আগের চেয়ে কম আত্মবিশ্বাসী।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র র ইউর ন য ন কর ম র জন য মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আরও দ্রুত মুছে ফেলব’, ইরানকে আবার হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আবারও হামলার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইরানের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে এত দ্রুত মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছেন যে কেউ আঙুল তোলার আগে সেটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
গতকাল সোমবার স্কটল্যান্ডে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তেহরান বলেছে, তারা বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে এ বছর তেহরানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা চলছিল। জুনে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর ওই আলোচনা ভেস্তে যায়।
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে।এ প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ইরান খুব খারাপ সংকেত দিচ্ছে, খুবই বাজে বার্তা পাঠাচ্ছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তাদের (ইরান) এটা করা উচিত নয়। আমরা তাদের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। তারা আবার এটা শুরু করতে পারে। যদি তারা করে, আপনি আঙুল তোলার আগেই আমরা সেটা নিশ্চিহ্ন করে দেব। আমরা এটা আনন্দের সঙ্গেই করব—খোলাখুলিভাবে ও নির্দ্বিধায়।’
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে। এ আলোচনাকে ইরানি কর্মকর্তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ, খোলামেলা ও বিস্তারিত’ বলে বর্ণনা করেছেন।
আমি এখান থেকে ‘স্বৈরশাসক’ খামেনিকে স্পষ্ট করে বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।ইসরায়েল কাৎজ, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীগত জুনে ইরানের তিনটি বড় পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এটা ছিল পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তেহরানের প্রথম বড় কোনো কূটনৈতিক আলোচনা। তবে আলোচনা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি বা সাফল্যের ঘোষণা আসেনি।
ট্রাম্পের গতকালের বক্তব্যের পর আরাগচি বলেন, ইরান কখনোই হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো ভাষায় সাড়া দেবে না। তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, চিকিৎসা ও বেসামরিক কারণে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রয়োজন। যদি ইরান আবারও হামলার শিকার হয়, তাহলে আরও দৃঢ়ভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে তেহরান দ্বিধা করবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।গত সপ্তাহে আল–জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও বলেছিলেন, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করবে না। তবে আলোচনার দরজা খোলা রাখবে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে, সেটি স্থায়ী হওয়া নিয়ে তিনি খুব বেশি আশাবাদী নন বলেও জানান তিনি।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ইরানে আবারও হামলা শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর মধ্যে দেশটির নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে হামলার পরিকল্পনাও রয়েছে।
আরও পড়ুনইসরায়েল কি ইরানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে২৫ জুলাই ২০২৫গত রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে একটি বার্তা পাঠাতে চান। তাঁর বরাত দিয়ে ইসরায়েলের একটি পত্রিকায় বলা হয়, ‘আমি এখান থেকে “স্বৈরশাসক” খামেনিকে স্পষ্ট করে একটি বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুনখামেনিকে হত্যার হুমকি দিলেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী: আনাদোলু২৮ জুলাই ২০২৫