পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন কর্মী কমানোর নির্দেশ দিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ঠিক কী কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। তবে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বৃদ্ধি এর নেপথ্যের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশে এবং বিদেশে আমেরিকানদের নিরাপদ রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই প্রতিশ্রুতি মেনে, আমরা আমাদের সব দূতাবাসে কর্মীদের অবস্থান নিয়মিত মূল্যায়ন করি। সর্বশেষ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে, আমরা ইরাকে আমাদের মিশন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ট্রাম্পের চেষ্টা অচলাবস্থায় রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে মার্কিন গোয়েন্দারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার বিরুদ্ধে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, এটিই কিছু আমেরিকানকে মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার একটি কারণ। যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে, ইরান ইরাকে অবস্থিত কিছু মার্কিন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিতে পারে।

ক্যাম্প ডেভিডে ট্রাম্প তার জাতীয় নিরাপত্তা দলের একটি বৈঠক করার তিন দিন পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে কিছু কর্মী প্রত্যাহারের এই ঘটনা ঘটলো।

এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ থেকে বিরত রাখতে একটি চুক্তির আশায় ছিলেন।

তবে বুধবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এখন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থামানোর ব্যাপারে আগের চেয়ে কম আত্মবিশ্বাসী।

সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার ৪০ মিনিটের একটি টেলিফোন আলাপ করেন, যা ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ ছিল বলে জানানো হয়েছে। নেতানিয়াহু বরাবরই কূটনৈতিক নয়, বরং সামরিক পথেই ইরানকে মোকাবিলার পক্ষে।

মধ্যপ্রাচ্যে থেকে কিছু মার্কিন কর্মী ও পরিবার সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, “ওদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, কারণ এলাকাটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। আমরা দেখব কী হয়।”

তিনি আরো বলেন, “তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরে যাওয়ার জন্য, আর আমরা দেখছি কী ঘটে।”

পারমাণবিক আলোচনা একটি সংকটময় পর্যায়ে থাকায় এই সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রকৃত উদ্বেগের ফল কি না, নাকি কৌশলগত সংকেত দেওয়ার অংশ, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, বুধবার (১১ জুন) সকালে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসির জাদেহ তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে এই অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দিয়েছিলেন।

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তেহরানে মন্ত্রিসভার বৈঠকের ফাঁকে সাংবাদিকদের বলেন, “যদি ইরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে আমাদের চেয়ে আমেরিকার বেশি ক্ষতি হবে।”

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই অঞ্চলে সব মার্কিন ঘাঁটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালের মধ্যে রয়েছে। ইরান ‘কোনো দ্বিধা ছাড়াই যুদ্ধের আয়োজক দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে।” 

নাসির জাদেহ আরো জানান, ইরান তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ করেছে এবং তার অপারেশনাল বাহিনী ‘সম্পূর্ণরূপে সজ্জিত’ এবং যেকোনো সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুত।

মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের (সেন্টকম) কমান্ডার জেনারেল মাইকেল কুরিলা কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার একদিন পর ইরানি মন্ত্রী এই হুমকি দেন। জেনারেল মাইকেল কুরিলা মার্কিন কংগ্রেসকে বলেছেন, তিনি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে ট্রাম্পের কাছে ‘বিভিন্ন বিকল্প’ উপস্থাপন করেছেন।

ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলে সেন্টকম শক্তি প্রয়োগ করতে প্রস্তুত কিনা সে সম্পর্কে হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান মাইক রজার্সের প্রশ্নের জবাবে কুরিলা ‘হ্যাঁ’ বলেছেন।

ওমানের মধ্যস্থতায় চলমান পরোক্ষ পারমাণবিক আলোচনা সত্ত্বেও তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা এখনও তুঙ্গে। প্রধান সমস্যা হলো ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি।

যুক্তরাষ্ট্র ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণ বন্ধের দাবি করলেও, ইরানি আলোচকরা জোর দিয়ে বলছেন, এই কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা যাবে না এবং চুক্তি হোক বা না হোক তা অব্যাহত থাকবে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ যেমন- কুয়েত ও বাহরাইন থেকেও মার্কিন সামরিক কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের স্বেচ্ছায় সরিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন।

বুধবার পেন্টাগনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘অনেকগুলো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ইরান এমন কিছু তৈরি করার দিকে এগোচ্ছে, যা দেখতে একটি পারমাণবিক অস্ত্রের মতো’।

তবে ইরান বলছে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুধু বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এবং পারমাণবিক বোমা তৈরির উদ্দেশ্যে নয়।

ষষ্ঠ দফা পারমাণবিক আলোচনা রবিবার (১৫ জুন) মাসকটে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কয়েক মাসে আগে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপ নেবে। গতকাল বুধবার ট্রাম্প বলেন, তিনি এখন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থামানোর ব্যাপারে আগের চেয়ে কম আত্মবিশ্বাসী।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র র ইউর ন য ন কর ম র জন য মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ও জামায়াতের কাছে কেন আরপিওর ২১ ধারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল

নির্বাচনের আগেই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে গত ছয় দিনে দল দুটির পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেই নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর ২১ ধারার সংশোধনীর পরিবর্তন। জামায়াত মনে করে, সরকার বিএনপির চাপে নতি স্বীকার করে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত খসড়া সংশোধনী বাতিল করেছে। আর বিএনপি মনে করে, জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ায় ২১ ধারার পরিবর্তন করে; যা গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদিত হয়। আরপিওর ২১ ধারা সংশোধনীর ওই পরিবর্তন বহাল থাকলে কোনো দল জোটগত নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে বাধ্য ছিল। ৩০ অক্টোবর সেটি আবার পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়। তাতে জোটগত নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। এতে জামায়াত বেশ ক্ষুব্ধ হয়।

যদিও সরকারের দিক থেকে এই নতুন সিদ্ধান্তের তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে সরকার-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেটি শুধু বিএনপির দাবির কারণে নয়, ছোট বিভিন্ন দলেরও দাবি ছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার নিশ্চিত করেছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবেই। আমরা সরকারের কথায় বিশ্বাস করি। সুতরাং এখন থেকে আমাদের সব কার্যক্রম নির্বাচনকেন্দ্রিক। এখন সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কীভাবে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে, সেটি তাদের বিষয়। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারকে যতটুকু সহযোগিতা দেওয়া দরকার, সেটা বিএনপি করবে।’

বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যতই সময় যাচ্ছে...একটা পুরোপুরি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি

এ দিকে আজ সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভা হবে। তবে অন্য দিন রাতে সভা হলেও আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় সভা বসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজকের সভায় আলোচ্যসূচিতে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বিষয় থাকবে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন–সংক্রান্ত বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।

হঠাৎ কেন সামনে এল আরপিওর সংশোধনী

আরপিওর ২১ ধারার সংশোধন বিএনপি ও জামায়াতের কাছে হঠাৎ করে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। আরপিওর ২১ ধারার এই সংশোধনীর ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো। এতে জামায়াত খুশি হলেও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো অস্বস্তিতে পড়েছিল। এ কারণে এর পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন উপদেষ্টাকে পৃথক চিঠি দেয়। এর পরেই সরকার আরপিওর ২১ ধারার পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, নতুন সিদ্ধান্তে বিএনপি উপকৃত হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো, এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভোটের হিসাব-নিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত হতো বিএনপি। অন্য দিকে এতে লাভবান হয় জামায়াতসহ তার মিত্র দলগুলো। এর হিসাবটা হচ্ছে, ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আছে একসঙ্গে নির্বাচন করার জন্য এবং সংসদ সদস্য পদে জোটের প্রার্থী হওয়ার আশায়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীককে ছোট দলগুলোর নেতারা জয়ের ক্ষেত্রে ‘ভরসা’ হিসেবে দেখেন।

...যে কারণে ফ্যাসিজমের যে রাস্তা, আমরা সংস্কারে বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো ওনারা বন্ধ করতে দিচ্ছে না। সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের নায়েবে আমির, জামায়াত

এখন জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হলে ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করতে খুব আগ্রহী হবে না। এর কারণ দুটি। প্রথমত, বিএনপির সমর্থন পেলেও ব্যক্তি জনপ্রিয়তা না থাকলে ছোট দলগুলোর নেতাদের নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে জেতা কঠিন হয়ে পড়বে। অন্য দিকে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপি আসন ছাড় দিলেও দলের কেউ বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে ভোটে জেতা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে বিদ্রোহীকে সরাতে বিএনপির নেতৃত্ব কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, সে প্রশ্নও আছে।

এ ছাড়া এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে যে আটটি দল আছে, তারা আরপিওর ওই ধারা পরিবর্তনের পক্ষে। অর্থাৎ দলগুলো জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে—এর পক্ষে। এর জন্য দলগুলো যৌথ কর্মসূচিও করছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জামায়াত যে নির্বাচনী জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা করতে চাইছে, সে দলগুলো পরস্পর আস্থাশীল। তাদের কাছে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বা ‘হাতপাখা’ বা ‘রিকশা’ প্রতীক কোনো বিষয় নয়। সমঝোতা হলে সবাই ওই প্রতীকের পক্ষে এক হয়ে কাজ করবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা নেই। অন্যদিকে বিএনপির জোটের ক্ষেত্রে ভাবনা হচ্ছে, ধানের শীর্ষ প্রতীক না দিলে ভোটের আগেই আসন হারানোর আশঙ্কা থাকবে।

গতকাল সকালে এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার দাবি করেন, একটি দলের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে সরকার আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী বাতিল করেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বাতিল করা হলে সেটি ন্যক্কারজনক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হবে।

আরপিওর ২১ ধারার এই সংশোধনীর ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো। এতে জামায়াত খুশি হলেও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো অস্বস্তিতে পড়েছিল। এ কারণে এর পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন উপদেষ্টাকে পৃথক চিঠি দেয়।

ঐকমত্য কমিশন সুপারিশের পর থেকেই উত্তাপ

২৮ অক্টোবর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ জমা দেয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে—সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। এই সময়ের মধ্যে সংবিধান সংশোধন না করলে আপনা–আপনি সেটা সংবিধানে যুক্ত হবে। এ ছাড়া গণভোট কবে, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন নাকি তার আগে—সেটা ঠিক করবে সরকার।

চরম অনৈক্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল, তারা কীভাবে হারানো ঐক্য ফিরে পেতে পারে, সেটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা দরকার।অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ

বিএনপি প্রথমত ক্ষুব্ধ হয় বাস্তবায়নের সুপারিশ থেকে ভিন্নমত বাদ দেওয়ায়। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন, ২৭০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া, সেটা না হলে আপনা-আপনি সংবিধানে যুক্ত হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে দলটির আপত্তি আছে। দলটি গণভোট আগে নয়, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে চায়। জামায়াতের অবস্থান এর পুরো বিপরীত।

এসব নিয়ে পরস্পরকে লক্ষ্য করে দল দুটির রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতি ক্রমেই বাড়তে থাকে। জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে এটা আসছে যে জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমন বক্তব্য অবশ্য বিএনপি আরও আগে থেকেই দিয়ে আসছে।

গতকাল দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা দেখছি যে বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যতই সময় যাচ্ছে, ততই বাংলাদেশে একটা অ্যানার্কিক সিচুয়েশন, একটা পুরোপুরি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে।’

জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে এটা আসছে যে জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমন বক্তব্য অবশ্য বিএনপি আরও আগে থেকেই দিয়ে আসছে।

এর আগের দিন শনিবার বিএনপির মহাসচিব জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে যতটা বাধা সৃষ্টি করেছেন, সেটা আপনারা করেছেন।’

পাল্টা বক্তব্য এসেছে জামায়াতের দিক থেকেও। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের গতকাল বিকেলে ঢাকায় এক সেমিনারে বলেছেন, ‘বিএনপি ভেতরে-ভেতরে আবার ফ্যাসিস্ট হওয়ার একটা খায়েশ আছে মনে হচ্ছে। যে কারণে ফ্যাসিজমের যে রাস্তা, আমরা সংস্কারে বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো ওনারা বন্ধ করতে দিচ্ছেন না।’

অবশ্য সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি যতই উসকানি দিক, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চায় না। মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক আছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দূর করে স্পষ্ট করা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। সুতরাং আসুন আমরা সব ভুলে আলোচনায় বসি।’

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এই মুখোমুখি অবস্থা চলতে থাকলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, একটা চরম অনৈক্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল, তারা কীভাবে হারানো ঐক্য ফিরে পেতে পারে, সেটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ