ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অন্তর্গত মাদারীপুর এলাকায় অবাধে মাদকের ব্যবসা দিনদিন বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে মাদারীপুর এলাকাবাসী মাদকের কবল থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা চেয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদারীপুর জামে মসজিদের পশ্চিম পাশের রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা করছে। ফলে পুরো এলাকায় বিরাজ করছে চরম উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতা।

আরো পড়ুন:

সাতক্ষীরায় সাবেক এমপির ছেলে আটক, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার

কালীগঞ্জে মাদকবিরোধী সমাবেশ 

স্থানীয়দের দাবি, প্রতিদিন অসংখ্য মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী এ এলাকায় এসে জড়ো হন। পাশাপাশি, মাদারীপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে মাদক ব্যবসা পরিচালনা ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারা হয়। এই বাড়িটি আগে স্থানীয় মফিজ সাহেবের মালিকানায় ছিল। বর্তমানে সেটা স্থানীয় টুনু সাহেবের ছেলে গাফফার দখল করে রেখেছেন।

তারা জানান, বরিশুর ২৩ ও ২৪ নম্বর এবং ব্রাহ্মণকিত্তা ১ ও ২ নম্বর পিলার ঘিরে প্রতিদিনই চলে মাদকের লেনদেন। এ কারবারে জড়িত রয়েছেন বেশ কয়েকজন স্থানীয়ভাবে পরিচিত ব্যক্তি। তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণকিত্তা ১ নম্বর পিলারের পাশে বসবাসকারী শামসুদ্দিনের ছেলে আলম, খোয়েজনগরের সালাউদ্দিনের ছেলে রবিন, ড্রাইভারের ছেলে মাহবুব, পটকাজোরের হাকিমের ছেলে অপু এবং মাদারীপুরের জুম্মনের ভাই হিসেবে পরিচিত সোলায়মান অন্যতম।

তবে অভিযুক্তদের মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়েও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা সেলিম রেজা বলেন, “এ এলাকায় মাদক সমস্যা এখন মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”

স্থানীয় মো.

নজরুল ইসলাম বলেন, “এখানে শুধু মাদক ব্যবসাই নয়, এর ফলে এলাকায় চুরি, দস্যুতা, ছিনতাই বেড়ে গেছে। আমরা কেউই নিরাপদ নই। দিনের পর দিন এই অবস্থা চললেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না।”

অপর এক স্থানীয় আবু বকর বলেন, “আমরা একাধিকবার স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু মাদক চক্র এতটাই শক্তিশালী যে, কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। এখন একমাত্র ভরসা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, “এই এলাকাটি একসময় শান্তিপূর্ণ ছিল। এখন সন্ধ্যার পর রাস্তায় বের হওয়াটাও আতঙ্কের বিষয়। প্রতিদিন নতুন মুখ, মাদকসেবী ও অপরাধীদের আনাগোনা। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।”

এদিকে, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুল হক ডাবলু বলেন, “মাদকবিরোধী কার্যক্রমে আমরা সবসময়ই তৎপর। যে এলাকাটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, আমরা সেটি সম্পর্কে অবগত এবং নিয়মিত সেখানে আমাদের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জারি রয়েছে। আজও ওই এলাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদক নির্মূলে আমরা সবসময় সতর্ক ও দায়বদ্ধ।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ এল ক য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ

বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।

দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।

পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’

সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসী

সম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।

এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।

সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।

রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ