সম্প্রতি চট্টগ্রাম শহরে একটি গেস্টহাউস তথা আবাসিক হোটেলে সাংবাদিক পরিচয়ে কতিপয় ব্যক্তির ক্যামেরা হাতে জোর করে তল্লাশি চালানোর ঘটনা নাগরিক সমাজকে ক্ষুব্ধ করেছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এটি কোনোভাবেই সাংবাদিকতার পর্যায়ে পড়ে না। এটি শুধু সাংবাদিকতার নীতি লঙ্ঘনই নয়, আইনেরও চরম লঙ্ঘন। সাংবাদিকতার নামে এমন কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনক। ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জোরালো দাবি উঠেছে।
হান্নান রহিম তালুকদার নামের কথিত ওই সাংবাদিক নিজের ফেসবুক আইডিতে পরিচয় দিয়েছেন দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ–এর সম্পাদক ও সিএসটিভি২৪-এর চেয়ারম্যান হিসেবে। নিজেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য বলেও দাবি করে থাকেন তিনি। যদিও জানা যাচ্ছে, আদতে তিনি প্রেসক্লাবের সদস্য নন। এমনকি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যও নন তিনি। এ ছাড়া ধারণা করা যাচ্ছে, নগর ও জেলা বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও রয়েছে তাঁর। নিজেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব পদপ্রার্থী বলেও উল্লেখ করে থাকেন তিনি।
হান্নান রহিমের আইডিতে পোস্ট করা সেই ভিডিওতে দেখা যায়, হোটেলের বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে তল্লাশি করছেন তিনি। হোটেল কক্ষ ভাড়া নেওয়া দম্পতিদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে বিব্রত ও আতঙ্কিত করে তুলছেন। এমনকি তাঁরা বিবাহিত কি না, সে প্রশ্নও করছেন। অন্য একটি দম্পতির কাছে পরিচয়পত্র চেয়েও বসেন তিনি। এমন কর্মকাণ্ড শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয়, একটি সভ্য সমাজে নাগরিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। এমন কর্মকাণ্ড পেশাগতভাবে সাংবাদিকতার সুনাম ক্ষুণ্ন করে।
সংবাদমাধ্যমের কাজ হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ করা এবং জনস্বার্থে তা প্রকাশ করা। এ কাজে আইন, নীতিমালা ও নৈতিকতার সীমারেখা আছে। সেসব না মানলে সাংবাদিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আর রাজী বলেছেন, এমন কাজ পেনাল কোডের ৪৪২ ও ৪৪৮ ধারা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং সম্মানের প্রতি চরম আঘাত। পুলিশও জানিয়েছে, এ ধরনের অভিযান চালানোর এখতিয়ার কোনো সাংবাদিকের নেই। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভিডিওটি দেখার পর পুলিশ গেস্টহাউস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের মামলা দিতে বলেছে। কিন্তু তারা মামলা দিতে আসছে না। তারা না এলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
আশা করি, গেস্টহাউস কর্তৃপক্ষ বা ভুক্তভোগী অতিথিরা মামলা না করলে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। এই অপসাংবাদিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। চট্টগ্রামের বিএনপির নেতাদেরও আহ্বান করব, তাঁদের নাম ব্যবহার করে অপসাংবাদিকতা করে বেড়ানো ব্যক্তির বিষয়েও তাঁরা সতর্ক থাকবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ কত র ব যবস থ র সদস য এমন ক
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে কাজ করে এবং কত দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে
ইসরায়েল পারমাণবিক স্থাপনা ও জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর জবাবে ইরান দেশটিতে কয়েক শ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
ইসরায়েল কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারলেও বেশ কয়েকটি তার প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করে আঘাত হানে। যেসব স্থানে আঘাত হেনেছে, তার মধ্যে রয়েছে রাজধানী তেল আবিবসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইরানের ঠিক কতগুলো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ ও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার।
এমন ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে কাজ করে ও ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে এগুলো কীভাবেই-বা ব্যবহৃত হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখেছে আল–জাজিরা:
আরও পড়ুনইরান ও ইসরায়েল: আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় কে এগিয়ে১৩ জুন ২০২৫কীভাবে কাজ করে
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এমন দূরপাল্লার অস্ত্র, যা প্রচলিত বা পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে বক্র বা ধনুকের মতো পথে চলে এটি।
শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন দিয়ে উৎক্ষেপণের পর এ ক্ষেপণাস্ত্র বায়ুমণ্ডলের উঁচু স্তর, এমনকি মহাকাশে প্রবেশ করে। ছুটে চলে অবিশ্বাস্যরকম দ্রুতগতিতে। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার পর এ ক্ষেপণাস্ত্র পূর্বনির্ধারিত পথ ধরে আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন দিয়ে উৎক্ষেপণের পর এ ক্ষেপণাস্ত্র বায়ুমণ্ডলের উঁচু স্তর, এমনকি মহাকাশে প্রবেশ করে। ছুটে চলে অবিশ্বাস্যরকম দ্রুতগতিতে। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার পর এই ক্ষেপণাস্ত্র পূর্বনির্ধারিত পথ ধরে আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে ১০ হাজার কিমি
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কয়েক শ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ১০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।
আরও পড়ুনইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরানের আর কী উপায় আছে১৪ ঘণ্টা আগেপাল্লা অনুযায়ী এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়—
যুদ্ধক্ষেত্র পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (বিআরবিএম): ২০০ কিলোমিটারের কম (১২৪ মাইল)।
স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (এসআরবিএম): ১ হাজার কিলোমিটারের কম (৬২১ মাইল)।
মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (এমআরবিএম/আইআরবিএম): ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (৬২১ থেকে ২ হাজার ১৭৫ মাইল)।
দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (এলআরবিএম): ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (২ হাজার ১৭৫ থেকে ৩ হাজার ৪১৮ মাইল)।
আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম): ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটারের বেশি (৩ হাজার ৪১৮ মাইল)।
একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোবাইল লঞ্চার থেকে সাগরের দিকে ছোড়া হচ্ছে। ২০২০ সালের ১৮ জুন, ইরানি সেনাবাহিনী এ ছবি সরবরাহ করে