ঈদুল আজহার ছুটিতে শিবগঞ্জে এক সপ্তাহে ৩ খুন
Published: 17th, June 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ঈদুল আজহার ছুটিতে একসপ্তাহে ৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এক জনপ্রতিনিধিসহ আরও ৩ জন। এসব ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় পৃথক-পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে।
গত রবিবার (৮ জুন) খুন হয় শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (৩৮)। পুলিশ জানায়, ঘাস কাটাকে কেন্দ্র করে আশরাফুল এবং তার দুই ছেলে ইসরাফিল ও কাফির সঙ্গে মাসুদ রানার ভাইয়ের কথা কাটাকাটি হয়। রবিবার রাতে বিষয়টি মিমাংসার কথা চলছিল। এরই মাঝে মাসুদ রানার ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হলে তিনি নিহত হন। এ ঘটনায় আরও ২ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের বাবুপুর গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে রাফিকুল ইসলাম ওরফে কালু (৪৮)।
এর আগে সোমবার (৯ জুন) রাতে বাবুপুরে রফিকুল ইসলামের ওপর হামলা করে তারই আপন ভাতিজা আব্দুর রহমানসহ আরও ৫-৬ জন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি। মৃত্যুর খবর এলাকাতে ছড়িয়ে পড়লে রফিকুলের লোকজন কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে। যার কারণে ওই এলাকায় থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে স্থানীয়রা ৩ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
গত শুক্রবার (১৩ জুন) খুন হন শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের উপরটোলা গ্রামের সিদ্দিক বিশ্বাসের ছেলে নজরুল ইসলাম (৫০)।
শুক্রবার রাতে মোবারকপুর ইউনিয়নের ধোবপুকুর এলাকায় পারিবারিক জমিজায়গা বিরোধের জেরে নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার ভাতিজা আনাস ও আব্বাসের কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নজরুলকে ছুরিকাঘাত করে তারা। এতে তিনি গুরুতর জখম হলে স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক নজরুলকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। এদিকে নজরুল ইসলামকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন মোবারকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সবুজ আলী সুজন। তিনি এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শিবগঞ্জ থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘‘ঈদুল আজহার ছুটিতে জমিজায়গার বিরোধের জের ধরে ৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একজন জনপ্রতিনিধিসহ ৩ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে নিহতের পরিবারের সদস্যরা থানায় মামলা করেছেন। এরইমধ্যে পাঁকা ইউনিয়নের বাবুপুরে রফিকুল ইসলাম খুনের ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি দুটি ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।’’
ঢাকা/মেহেদী/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ বগঞ জ উপজ ল ল ইসল ম নজর ল ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন