'লাল বেনারসি পরে আসার কথা, সাদা কাফন পরতে হলো’
Published: 18th, June 2025 GMT
‘ভালো থেকো প্রিয়তমা। নিয়তি হয়তো আমাদের আলাদা করে দিল, কিন্তু ভালোবাসা কখনো আলাদা হবে না।’ যুবক সানি বড়ুয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যাঁর উদ্দেশে এই লেখা লিখেছেন, তিনি তখন না–ফেরার দেশে। কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রিমঝিম বড়ুয়ার উদ্দেশে গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুকে এসব কথা লেখেন সানি। আগামী ৬ জুলাই দুজনের বিয়ের দিন নির্ধারিত ছিল। চলছিল সেই ক্ষণগণনা। তবে এর আগেই যেন বিধাতা পাষাণ হলেন, নিয়ে গেলেন রিমঝিমকে।
ফেসবুকে রিমঝিমের উদ্দেশে সানি লেখেন, ‘লাল বেনারসি পরে আমার বাড়িতে আসার কথা থাকলেও সাদা কাফন নামক কাপড়টাই শেষ সময়ে পরতে হলো। কত আশা, আকাঙ্ক্ষা; সব একটি দুর্ঘটনা তছনছ করে দিল।’ গত সোমবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে সানির কাছে আসার সময় রামুর রশিদনগর এলাকায় পূরবী পরিবহনের বাসের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন রিমঝিমসহ তিনজন। চট্টগ্রামে এসে সানির সঙ্গে বিয়ের কেনাকাটা করার কথা ছিল রিমঝিমের। রিমঝিম কক্সবাজারের উখিয়ায় ব্র্যাকের উন্নয়নকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সানি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ব্র্যাকের স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে কাজ করেন।
সে বলেছিল খায়নি। তখন আমি লিখেছিলাম, বিয়ের পর কিন্তু খাওয়া নিয়ে এই উদাসীনতা চলবে না। শেষ মেসেজটি আর সিন হয়নি। হয়তো ততক্ষণে দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।সানি বড়ুয়াচট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা সানির সঙ্গে কক্সবাজারের রামুর রিমঝিম বড়ুয়ার পরিচয় ফেসবুকে। এরপর দুজনের প্রেম। সেটি সাড়ে তিন বছর আগের কথা। সানি লেখেন, ‘এমন একটা দিন যায়নি, তোমার সঙ্গে কথা বলিনি। সাড়ে তিন বছরের সম্পর্কে একটি দিনও কথা না বলে থাকনি। আজ কীভাবে কথা না বলে থাকবে পরপারে?’
প্রেম থেকে পরিণয়ের দিন নির্ধারিত হয়েছিল দুজনের। ১৬ মে ফেসবুকে একটি যুগল ছবি পোস্ট করেন সানি বড়ুয়া। লেখেন দুটি শব্দ—‘পূর্ণতার কাছাকাছি’। সেখানে কতশত শুভকামনা ও অভিনন্দন শুভানুধ্যায়ীদের। সেই ছবিতে সানির কাঁধে হাত রেখে বসেছিলেন রিমঝিম। সারা জীবন এভাবে কাঁধে হাত রেখে চলতে চাওয়া রিমঝিম আজ দূর আকাশের তারা।
রিমঝিমের স্মৃতি যেন কুরে কুরে খাচ্ছে সানিকে। সারাক্ষণ দুজন কাছাকাছি থাকতেন ফোনে বা মেসেঞ্জারে। সোমবার রামু থেকে রিমঝিম রওনা দেওয়ার সময় দুজনের শেষ কথা হয়। বাসের টিকিট কেটে সানিকে জানিয়েছিলেন রিমঝিম। এরপর বাসে বসে দুজনের মধ্যে মেসেঞ্জারে কথা হচ্ছিল নানা বিষয়ে।
রামুতে শ্মশানে রিমঝিমকে সমাহিত করা হয়। শেষযাত্রায় রিমঝিমকে কিন্তু ঠিকই লাল বেনারসিতে বিয়ের সাজে রাঙিয়ে দিয়েছেন সানি। তাৎক্ষণিকভাবে একটা বেনারসি কিনে রিমঝিমের গায়ের ওপর পরিয়ে দেন। রিমঝিমের সিঁথিতে নিজ হাতে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ের অপূর্ণতা ঘোচানোর চেষ্টা করেন সানি।‘আমি তখন অফিসে ঢুকেছি মাত্র। ফোন রাখার পর মেসেঞ্জারে আমি জানতে চেয়েছিলাম কিছু খেয়েছে কি না। সে বলেছিল খায়নি। তখন আমি লিখেছিলাম, বিয়ের পর কিন্তু খাওয়া নিয়ে এই উদাসীনতা চলবে না। শেষ মেসেজটি আর সিন হয়নি। হয়তো ততক্ষণে দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।’ ফোনের ওপারে সানির গলা ধরে আসে।
প্রিয়তমার দুর্ঘটনার খবর শুনে উদ্ভ্রান্তের মতো কক্সবাজার ছুটেছেন সানি। রিমঝিমের নিথর দেহের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আর্তনাদ করতে থাকেন। সেই ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাসছে, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে একা করে কেন চলে গেলে? আমি কীভাবে থাকব?’
রামুতে শ্মশানে রিমঝিমকে সমাহিত করা হয়। শেষযাত্রায় রিমঝিমকে কিন্তু ঠিকই লাল বেনারসিতে বিয়ের সাজে রাঙিয়ে দিয়েছেন সানি। তাৎক্ষণিকভাবে একটা বেনারসি কিনে রিমঝিমকে পরিয়ে দেন। রিমঝিমের সিঁথিতে নিজ হাতে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ের অপূর্ণতা ঘোচানোর চেষ্টা করেন সানি। সানি বললেন, ‘তার অনেক আশা ছিল বেনারসি পরবে। ওই বেনারসি আমার সঙ্গে কেনার কথা ছিল। সব শেষ।’
কদিন আগে রিমঝিমের পাঠানো শাড়ি পরিহিত শেষ ভিডিওটিও পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। রিমঝিমের আত্মার শান্তি কামনায় সানি পটিয়ার ভান্ডারগাঁওয়ের নিজ বাড়ির মন্দিরে সমবেত প্রার্থনার আয়োজন করেন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। সেখান থেকে রাতে ঘরে ফিরে ফেসবুকে সানি লেখেন, ‘প্রভু, আমাকে সইবার শক্তি দাও। আমার প্রতিক্ষণ যাচ্ছে যেন বিষাদে। এখনো মনে হচ্ছে না তুমি নেই। বিয়ের সাজে একসাথে হাসিমুখে আমাদের বাড়িতে আসার কথা ছিল। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। চলে গেলে অন্তিমে। তুমি যে নেই তা আমি মানতে পারছি না। মনে হচ্ছে একটু পরই ফোন দেবে.
রিমঝিমের মামাতো ভাই রিটন বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৬ মে দুই পরিবারের লোকজন বসে বিয়ের দিনক্ষণ পাকা করেছিলাম। আমিও বৈঠকে ছিলাম। বিয়ের জন্য ৬ জুলাই লোহাগাড়ার আমিরাবাদে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হয়। তার আগে চলে গেল বোন। সানি তাঁকে লাল বেনারসি ও শাঁখা-সিঁদুর পরিয়ে বিদায় দিয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ল ব ন রস দ র ঘটন কর ন স ফ সব ক র পর য় দ জন র
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিসি ব্যাংকের পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত
বেসরকারি খাতের এনসিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৫৪৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে পর্ষদ সভাটি হয়।
এনসিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নূরুন নেওয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, পরিচালক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান আমজাদুল ফেরদৌস চৌধুরী, পরিচালক ও প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তানজিনা আলী, পরিচালক সৈয়দ আসিফ নিজাম উদ্দিন, পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চাকলাদার, পরিচালক মোহাম্মদ সাজ্জাদ উন নেওয়াজ, শামিমা নেওয়াজ, মোরশেদুল আলম চাকলাদার, নাহিদ বানু, স্বতন্ত্র পরিচালক মীর সাজেদ উল বাসার এবং স্বতন্ত্র পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম শামসুল আরেফিন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম খোরশেদ আলম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির আনাম, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মো. মনিরুল আলম (কোম্পানি সচিব) ও মো. হাবিবুর রহমান এবং বোর্ড ডিভিশনের এসএভিপি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এনসিসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, সভায় ব্যাংকের চলমান ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও কৌশলগত পরিকল্পনা–সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটি মুনাফা করেছে ১৭৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ২৭৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকটির মুনাফা কমেছে ১০২ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটি মুনাফা করে ৫৮ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মুনাফা ২০১ কোটি টাকা।