‘ভালো থেকো প্রিয়তমা। নিয়তি হয়তো আমাদের আলাদা করে দিল, কিন্তু ভালোবাসা কখনো আলাদা হবে না।’ যুবক সানি বড়ুয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যাঁর উদ্দেশে এই লেখা লিখেছেন, তিনি তখন না–ফেরার দেশে। কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রিমঝিম বড়ুয়ার উদ্দেশে গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুকে এসব কথা লেখেন সানি। আগামী ৬ জুলাই দুজনের বিয়ের দিন নির্ধারিত ছিল। চলছিল সেই ক্ষণগণনা। তবে এর আগেই যেন বিধাতা পাষাণ হলেন, নিয়ে গেলেন রিমঝিমকে।

ফেসবুকে রিমঝিমের উদ্দেশে সানি লেখেন, ‘লাল বেনারসি পরে আমার বাড়িতে আসার কথা থাকলেও সাদা কাফন নামক কাপড়টাই শেষ সময়ে পরতে হলো। কত আশা, আকাঙ্ক্ষা; সব একটি দুর্ঘটনা তছনছ করে দিল।’ গত সোমবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে সানির কাছে আসার সময় রামুর রশিদনগর এলাকায় পূরবী পরিবহনের বাসের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন রিমঝিমসহ তিনজন। চট্টগ্রামে এসে সানির সঙ্গে বিয়ের কেনাকাটা করার কথা ছিল রিমঝিমের। রিমঝিম কক্সবাজারের উখিয়ায় ব্র্যাকের উন্নয়নকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সানি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ব্র্যাকের স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে কাজ করেন।

সে বলেছিল খায়নি। তখন আমি লিখেছিলাম, বিয়ের পর কিন্তু খাওয়া নিয়ে এই উদাসীনতা চলবে না। শেষ মেসেজটি আর সিন হয়নি। হয়তো ততক্ষণে দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।সানি বড়ুয়া

চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা সানির সঙ্গে কক্সবাজারের রামুর রিমঝিম বড়ুয়ার পরিচয় ফেসবুকে। এরপর দুজনের প্রেম। সেটি সাড়ে তিন বছর আগের কথা। সানি লেখেন, ‘এমন একটা দিন যায়নি, তোমার সঙ্গে কথা বলিনি। সাড়ে তিন বছরের সম্পর্কে একটি দিনও কথা না বলে থাকনি। আজ কীভাবে কথা না বলে থাকবে পরপারে?’

প্রেম থেকে পরিণয়ের দিন নির্ধারিত হয়েছিল দুজনের। ১৬ মে ফেসবুকে একটি যুগল ছবি পোস্ট করেন সানি বড়ুয়া। লেখেন দুটি শব্দ—‘পূর্ণতার কাছাকাছি’। সেখানে কতশত শুভকামনা ও অভিনন্দন শুভানুধ্যায়ীদের। সেই ছবিতে সানির কাঁধে হাত রেখে বসেছিলেন রিমঝিম। সারা জীবন এভাবে কাঁধে হাত রেখে চলতে চাওয়া রিমঝিম আজ দূর আকাশের তারা।

রিমঝিমের স্মৃতি যেন কুরে কুরে খাচ্ছে সানিকে। সারাক্ষণ দুজন কাছাকাছি থাকতেন ফোনে বা মেসেঞ্জারে। সোমবার রামু থেকে রিমঝিম রওনা দেওয়ার সময় দুজনের শেষ কথা হয়। বাসের টিকিট কেটে সানিকে জানিয়েছিলেন রিমঝিম। এরপর বাসে বসে দুজনের মধ্যে মেসেঞ্জারে কথা হচ্ছিল নানা বিষয়ে।

রামুতে শ্মশানে রিমঝিমকে সমাহিত করা হয়। শেষযাত্রায় রিমঝিমকে কিন্তু ঠিকই লাল বেনারসিতে বিয়ের সাজে রাঙিয়ে দিয়েছেন সানি। তাৎক্ষণিকভাবে একটা বেনারসি কিনে রিমঝিমের গায়ের ওপর পরিয়ে দেন। রিমঝিমের সিঁথিতে নিজ হাতে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ের অপূর্ণতা ঘোচানোর চেষ্টা করেন সানি।

‘আমি তখন অফিসে ঢুকেছি মাত্র। ফোন রাখার পর মেসেঞ্জারে আমি জানতে চেয়েছিলাম কিছু খেয়েছে কি না। সে বলেছিল খায়নি। তখন আমি লিখেছিলাম, বিয়ের পর কিন্তু খাওয়া নিয়ে এই উদাসীনতা চলবে না। শেষ মেসেজটি আর সিন হয়নি। হয়তো ততক্ষণে দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।’ ফোনের ওপারে সানির গলা ধরে আসে।

প্রিয়তমার দুর্ঘটনার খবর শুনে উদ্‌ভ্রান্তের মতো কক্সবাজার ছুটেছেন সানি। রিমঝিমের নিথর দেহের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আর্তনাদ করতে থাকেন। সেই ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাসছে, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‌‘আমাকে একা করে কেন চলে গেলে? আমি কীভাবে থাকব?’

রামুতে শ্মশানে রিমঝিমকে সমাহিত করা হয়। শেষযাত্রায় রিমঝিমকে কিন্তু ঠিকই লাল বেনারসিতে বিয়ের সাজে রাঙিয়ে দিয়েছেন সানি। তাৎক্ষণিকভাবে একটা বেনারসি কিনে রিমঝিমকে পরিয়ে দেন। রিমঝিমের সিঁথিতে নিজ হাতে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ের অপূর্ণতা ঘোচানোর চেষ্টা করেন সানি। সানি বললেন, ‘তার অনেক আশা ছিল বেনারসি পরবে। ওই বেনারসি আমার সঙ্গে কেনার কথা ছিল। সব শেষ।’

কদিন আগে রিমঝিমের পাঠানো শাড়ি পরিহিত শেষ ভিডিওটিও পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। রিমঝিমের আত্মার শান্তি কামনায় সানি পটিয়ার ভান্ডারগাঁওয়ের নিজ বাড়ির মন্দিরে সমবেত প্রার্থনার আয়োজন করেন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। সেখান থেকে রাতে ঘরে ফিরে ফেসবুকে সানি লেখেন, ‘প্রভু, আমাকে সইবার শক্তি দাও। আমার প্রতিক্ষণ যাচ্ছে যেন বিষাদে। এখনো মনে হচ্ছে না তুমি নেই। বিয়ের সাজে একসাথে হাসিমুখে আমাদের বাড়িতে আসার কথা ছিল। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। চলে গেলে অন্তিমে। তুমি যে নেই তা আমি মানতে পারছি না। মনে হচ্ছে একটু পরই ফোন দেবে.

..।’

রিমঝিমের মামাতো ভাই রিটন বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৬ মে দুই পরিবারের লোকজন বসে বিয়ের দিনক্ষণ পাকা করেছিলাম। আমিও বৈঠকে ছিলাম। বিয়ের জন্য ৬ জুলাই লোহাগাড়ার আমিরাবাদে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হয়। তার আগে চলে গেল বোন। সানি তাঁকে লাল বেনারসি ও শাঁখা-সিঁদুর পরিয়ে বিদায় দিয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ল ব ন রস দ র ঘটন কর ন স ফ সব ক র পর য় দ জন র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ