যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন ইউক্রেনে আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদের কিছু চালান স্থগিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের মজুত অনেকটাই কমে যাওয়ায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজন গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন।

দুই সূত্র বলেছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন কিয়েভকে যে অস্ত্র সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কিছু চালান সম্প্রতি ধীরগতিতে পাঠানো হচ্ছে। দেরি করে পাঠানো এসব চালানের মধ্যে আছে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সহায়ক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।

পেন্টাগন এক ই-মেইলে বলেছে, ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কিছু বিকল্প পথ দেখিয়েছে তারা। এর লক্ষ্য হলো ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতিমালাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি এলব্রিজ কোলবি বলেন, একই সময়ে পেন্টাগন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্য ঠিক রাখতে তাদের পরিকল্পনা ভালোভাবে খতিয়ে দেখছে ও বদলাচ্ছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী যেন প্রশাসনের প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোর জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকে, সেটাও নিশ্চিত করা হচ্ছে।

রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ধীরে ধীরে আরও অগ্রসর হচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তারা ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক ও দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের নতুন এলাকা দখল করেছে। দেশজুড়ে বিমান হামলাও বাড়িয়েছে রাশিয়া।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সাময়িকভাবে সব ধরনের অস্ত্রসহায়তা বন্ধ রাখা হয়েছিল। আর মার্চে আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এরপর ট্রাম্প প্রশাসন বাইডেনের অনুমোদিত শেষ দফার সহায়তা পাঠানো শুরু করে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো নীতিমালার ঘোষণা আসেনি।

তবে চালান স্থগিতের খবরটি পলিটিকো গতকাল প্রথম প্রকাশ করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

আলু চাষে কৃষকের মাথায় হাত

চলতি বছর আলুর ভালো ফলন হলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ও সংরক্ষণের অভাবে মুন্সীগঞ্জের চাষিদের লোকসান হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষণ করতে না পারা, মূল্য কম ও বাঁশের মাচায় সংরক্ষণ করা আলুতে পচন ধরার কারণে কৃষকের মাথায় হাত। এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কারণে জেলার বেশির ভাগ কৃষক এখন দেনার দায়ে জর্জরিত। এই অবস্থায় সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় ১০ লাখ ৮০ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ টন হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। বাকি ৬ লাখ টন আলু দেশীয় পদ্ধতিতে বাড়িতেই সংরক্ষণ করা হয়েছে।

জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, উৎপাদন উপকরণের অতিরিক্ত দামের কারণে এবার প্রতি কেজি আলুতে খরচ পড়েছে ১৬ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণ করতে গিয়ে প্রতি কেজিতে খরচ উঠেছে ২৬ টাকা। অথচ বর্তমানে হিমাগার থেকে আলুর পাইকারি দাম মিলছে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ টাকা। এতে প্রতি কেজিতে চাষি ও ব্যবসায়ীর লোকসান গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১১ টাকা। এই হিসাবে, হিমাগারে সংরক্ষিত ৪ লাখ টন আলুতে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ৬ লাখ টন আলুর ২৫ শতাংশ অর্থাৎ দেড় লাখ টন পচে গেছে। এই দেড় লাখ টন আলুর উৎপাদন খরচ, বস্তা ও শ্রমিক খরচ বাবদ প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা হিসাবে লোকসানের পরিমাণ ২৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষিত বাকি সাড়ে ৪ লাখ টন আলু নিজ বাড়ি থেকে ১১ টাকা কেজিতে বিক্রি করায় কৃষকের আরও ৪৯৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সব মিলিয়ে মুন্সীগঞ্জের আলু চাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসান প্রায় ১ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের ১৮ লাখ মানুষ ১২ হাজার টন আলু খেয়েছে। বাকি ৬৮ হাজার টন আলু অন্য জেলায় পাঠানো হয়েছে। তারপরও ১০ লাখ টন আলু হিমাগার ও বাড়িতে দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত জোগানই দাম কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্তের ভাষ্য, এবার ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়ে মুন্সীগঞ্জের বেশির ভাগ কৃষক এখন দেনার জালে আটকা পড়েছেন। মহাজন ও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। অনেক কৃষকের ভিটেমাটি বিক্রি করার উপক্রম হয়েছে। পরিবারের মুখে দুই বেলা অন্ন জোগানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এই লোকসান শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৃষকদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলছে। তাদের চোখেমুখে এখন শুধুই হতাশার ছাপ।

আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মুন্সীগঞ্জের কৃষকদের বাঁচাতে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। কৃষকদের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারি প্রণোদনা, ঋণ মওকুফ এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকর বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য। অন্যথায় আলু চাষে আগ্রহ হারাবেন কৃষক, যা দেশের সামগ্রিক কৃষি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ