চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে দলীয়করণ হচ্ছে, অভিযোগ বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের
Published: 25th, July 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি চেয়েছে ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের এ সংগঠনের দাবি, নিয়োগে অস্বচ্ছতা, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
গত বুধবার সংগঠনটির প্যাডে উপাচার্যকে দেওয়া এক চিঠিতে এ আহ্বান জানানে হয়। তবে আজ শুক্রবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আল-আমীন, সহসভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো.
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ছয় মাসে বিজ্ঞাপিত পদের সংখ্যা তিন শতাধিক। গ্রীষ্ম-বর্ষা, রাত-দিন, বন্ধ-খোলা উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে পক্ষপাতদুষ্ট নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ চলছে। নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুবিধার্থে নিয়োগ দেওয়ায় কমিটির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক সাক্ষাৎকার বা নম্বর বণ্টনে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ উঠছে। রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত প্রভাব খাঁটিয়ে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।’
নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। ছুটির দিনে নিয়োগ বোর্ড বসা দৃষ্টিকটু লেগেছে। আমাদের কাছে এসেও এসব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অনেকেই। সব বিবেচনায় আমরা উপাচার্যকে বিষয়টি জানিয়েছি—মোহাম্মদ আল-আমীন, সভাপতি, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়চিঠিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের এই তিন শিক্ষক উপাচার্যকে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানান। তাঁরা উপাচার্যকে বলেন, ‘অস্বাভাবিক নিয়োগ-প্রক্রিয়া বন্ধ রাখুন। অনিয়মের শিকার পদগুলো আবার মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পূরণ করুন। ভবিষ্যতে নিয়োগপ্রক্রিয়া ডিজিটাল পদ্ধতি (অনলাইন আবেদন, স্বয়ংক্রিয় নম্বর বণ্টন) ও পাবলিক রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে স্বচ্ছ করুন। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিন।’
জানতে চাইলে অধ্যাপক মোহাম্মদ আল-আমীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। ছুটির দিনে নিয়োগ বোর্ড বসা দৃষ্টিকটু লেগেছে। আমাদের কাছে এসেও এসব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অনেকেই। সব বিবেচনায় আমরা উপাচার্যকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি এ বিষয়টি আমলে নিয়েছেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন’।
সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নিয়োগে দলীয় পরিচয় কিংবা স্বজনদের চাকরি দেওয়ার অভিযোগ তাঁদের কাছে এসেছে। এ প্রসঙ্গেই তাঁরা চিঠি দিয়েছেন। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়ে প্রতি বিভাগে আলাদা নিয়োগ বোর্ড থাকলেও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে তা নেই। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বোর্ড রয়েছে। এখন যত নিয়োগপ্রক্রিয়া চলছে বেশির ভাগই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর। সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন এই নিয়োগ বোর্ডের আহ্বায়ক। এর বাইরে সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামও ওই বোর্ডে সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তাঁরা তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের আরেক সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতাদের দাবি, সাদা দল শুধু জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের।
জানতে চাইলে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিয়োগ বোর্ডে একা ছিলেন না। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সদস্যরাও ছিলেন। তাঁরা নিয়োগ চলাকালীন কোনো আপত্তি দেয়নি। এখন অভিযোগ জানাতে হলে নির্দিষ্ট করে কোথায় অনিয়ম হয়েছে, তা বলতে হবে। তাঁরা পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গেই নিয়োগ দিচ্ছেন।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের অভিযোগ কল্পনাপ্রসূত বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, অতীতে এমন নিরপেক্ষ নিয়োগ হয়নি। তাঁদের কার্যালয়ে দক্ষ লোকবলের ঘাটতি রয়েছে, সে ঘাটতি পূরণে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখেই নিয়োগ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তাঁর ধারণা, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে না থাকার আক্ষেপ অথবা দলীয় কারণে এ চিঠি দেওয়া হতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র উপ চ র য ব ষয়ট ব এনপ স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবহনশ্রমিকদের নির্বাচন কাল, চলবে না প্রাইম মুভারসহ কনটেইনারবাহী গাড়ি
আগামীকাল সোমবার কনটেইনার পরিবহনের গাড়িচালক ও সহকারীদের সংগঠন চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার ট্রেলার, কংক্রিট মিক্সচার, ফ্ল্যাটবেড ও ড্রাম ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে কাল সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কনটেইনার পরিবহনের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে এ–সংক্রান্ত নির্বাচন উপপরিষদ।
কাল সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বন্দর রিপাবলিক ক্লাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে কনটেইনার পরিবহনের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখায় বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, এই গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো, ডিপো ও বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার আনা-নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
বন্দরসচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কনটেইনার পরিবহনের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে বন্দরে কনটেইনার ওঠানো-নামানো ও পরিবহনের কাজে ব্যাহত হবে। তাই পালাক্রমে ভোট দিয়ে যাতে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়, সে জন্য তাঁদের আহ্বান জানাই।’
প্রাইম মুভার ট্রেলারে করে প্রতিদিন গড়ে রপ্তানি পণ্যবাহী দুই হাজার কনটেইনার ডিপোগুলো থেকে বন্দরে নেওয়া হয়। আবার আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দর থেকে ডিপোতে নেওয়া হয় এ ধরনের গাড়িতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, সংগঠনটির সদস্যরা গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রেখে ভোট দিতে পারেন। তাহলে কাজের ক্ষতি হবে না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির নির্বাচন উপপরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ভোটদানের সুবিধার জন্য এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে চাইলে ভোট দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবেন যে কেউ। আশা করি দুপুরের পর থেকে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হবে।
ওয়াহিদুজ্জামান জাহিদ বলেন, কনটেইনার পরিবহনের সাড়ে ৯ হাজার প্রাইম মুভার ট্রেলার রয়েছে। ভোটার হলেন ১০ হাজার ৪৫২ জন। তিন বছর মেয়াদে এই নির্বাচনে ২৫ পদে ৬৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।