চার বছর আগে পেশাদার ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু ব্যাট হাতে তাঁর পুরোনো ছন্দ এখনো অটুট। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লিজেন্ডস (ডব্লুসিএল) ২০২৫-এ দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়নসের হয়ে ওপেন করতে নেমে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে যেন জানিয়ে দিলেন—অবসরের পরও তিনি আগের মতোই বিধ্বংসী।

২০২১ সালে নিজের শেষ আইপিএল মৌসুমে ৩১৩ রান করেছিলেন ৩১.

৩০ গড়ে, স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪৮.৩৪। সে সময় ৩৭ বছর বয়সী ডি ভিলিয়ার্স কী একটু আগেভাগেই ক্রিকেট ছাড়লেন, ভক্তরা এই প্রশ্ন করেছিলেন তখন। উত্তরে ডি ভিলিয়ার্স জানিয়েছিলেন শেষ দুই বছর খেলেছেন ডান চোখের রেটিনার সমস্যা নিয়েই।

কিন্তু চার বছর পর দেখা যাচ্ছে  ডি ভিলিয়ার্স আগের মতোই ক্ষুরধার। ২৪ জুলাই ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নসের বিপক্ষে ৪১ বলে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নসের বিপক্ষে ম্যাচটি না খেললেও আজ অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়নসের বিপক্ষে ফিরে এলেন আরও ভয়ংকর রূপে। এবার মাত্র ৩৯ বলেই সেঞ্চুরি! শেষ পর্যন্ত খেললেন ৪৬ বলে ১২৩ রানের এক ঝলমলে ইনিংস—১৫ চার আর ৮ ছক্কায় সাজানো এক ইনিংস। ডি ভিলিয়ার্স তিন অঙ্ক ছুঁলেন স্বভাবসিদ্ধ রিভার্স সুইপে।

অস্ট্রেলিয়ার বোলিং লাইনআপে ছিলেন ব্রেট লি, পিটার সিডল, স্টিভ ও’কিফি, জশ হেস্টিংস, ড্যান ক্রিস্টিয়ান আর ডার্সি শর্ট।

আরও পড়ুন৪১ বছর বয়সে ৪১ বলে সেঞ্চুরি, ডি ভিলিয়ার্সের অপর নাম বিস্ময়২৫ জুলাই ২০২৫

দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়নস যদি অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়নসকে হারাতে পারে, সেমিফাইনালে উঠে যাবে তারা। আর তাতে  ডি ভিলিয়ার্সকে অন্তত একবার আরও ব্যাট করতে দেখা যাবে।

ডি ভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরিতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকানরা করে ৬ উইকেটে ২৪১ রান। এই প্রতিবেদন লেখার সময় রান তাড়ায় অস্ট্রেলীয়রা করেছে ১৪.৫ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৭ রান।

আরও পড়ুনঅধিনায়ক হিসেবে প্রথম সিরিজেই ব্র্যাডম্যান-গাভাস্কারের রেকর্ড ছুঁলেন গিল২ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।

রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।

নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।

পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।

আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।

তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।

রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।

‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।

তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩

হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।

একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।

যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।

তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।

পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার

আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ