গাজাকে নিশ্চিহ্ন করার কোনো ন্যায্যতা থাকতে পারে না: গুতেরেস
Published: 28th, July 2025 GMT
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন এখন একটি চরম সংকটময় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরো দূরে সরে গেছে।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সোমবার ইসরায়েল-ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের একটি সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
গুতেরেস বলেছেন, “আজ আমরা এখানে এসেছি চোখ খোলা রেখেই, আমাদের সামনে যে কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা পুরোপুরি বুঝেই।”
আরো পড়ুন:
মধ্যরাত থেকে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতি, মধ্যস্থতায় মালয়েশিয়া
পুতিন-জেলেনস্কির বৈঠক হতে চলেছে: ট্রাম্প
“আমরা জানি, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলেছে, যা বারবার আশাকে ব্যর্থ করেছে, কূটনীতিকে ব্যর্থ করেছে, অগণিত প্রস্তাবকে উপেক্ষা করেছে এবং বাস্তবে আন্তর্জাতিক আইনকেও চ্যালেঞ্জ করেছে,” বলেন তিনি।
তবে তিনি বলেন, “এই সংঘাতের স্থায়ীত্ব অনিবার্য নয়। এর সমাধান সম্ভব।” তিনি আরো বলেন, “গাজার ওপর চলমান যুদ্ধ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে আরো জরুরি করে তুলেছে।”
“বিশ্বের চোখের সামনে গাজাকে যেভাবে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে, তার কোনো ন্যায্যতা থাকতে পারে না,” বলেন গুতেরেস।
তিনি বলেন, “এই ভয়াবহ বাস্তবতার কারণেই আমাদের আরো বেশি কিছু করতে হবে, যেন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়িত হয়। আজকের এই সম্মেলন একটি বিরল এবং অপরিহার্য সুযোগ।”
দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কোনো বিকল্প নেই: ফ্রান্স
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে জাতিসংঘের একই সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল ব্যারো বলেছেন, দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিকভাবে শুধু দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে; যেখানে তারা শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে বাস করতে পারে। এর কোনো বিকল্প নেই।”
ইসরায়েল অসংখ্যবার বলেছে, তারা গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে কোনো অগ্রসরতা মানবে না।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।