দুদক ও পিএসসির বিষয়ে বিএনপিকে অবস্থান পরিবর্তনের আহ্বান এনসিপির
Published: 28th, July 2025 GMT
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) নিয়োগ কমিটির বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দলীয় অবস্থান থেকে সরে আসতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২০তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে এনসিপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই একমত পোষণ করেছে বলে জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘কেবল বিএনপি পিএসসি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ কমিটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। আমরা বিএনপির কাছে আহ্বান রাখব, নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে যেভাবে দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করে একমত হয়েছে, একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাকি যে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলোর ব্যাপারে আপনারা আপনাদের দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করবেন।’
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব করেছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সে প্রস্তাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে নয় সদস্যের ওই কমিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের পাশাপাশি অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানসহ আইন দ্বারা নির্ধারিত পদের নিয়োগ দেবে।
বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বিরোধিতা মুখে গত ২৫ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে এনসিসির পরিবর্তে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি নামে নতুন প্রস্তাব করে কমিশন। এ প্রস্তাব অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন এবং আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ দেবে। তবে বিএনপি ও সমমনা পাঁচটি দল এ প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করে। তারা মনে করে, এর মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হবে।
ওই দিন এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন, এই প্রস্তাবের সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে একমত হয় বিএনপি। সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের জন্য এনসিসি বা এ ধরনের কোনো কমিটি গঠনের বিধান সংবিধানে যুক্ত করা যাবে না বলে শর্ত দেয় দলটি।
এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘গত অর্ধশতকে বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারা নিজেদের মতো করে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয় লোক নিয়োগ দিয়েছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণে আক্রান্ত হয়েছে এবং জনবান্ধবতা হারিয়েছে।’
পিএসসি ও দুদকে নিয়োগ বিষয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা এমন একটি সিলেকশন কমিটির কথা বলেছি, যা দলনিরপেক্ষ হবে এবং যেখানে সরকারি ও বিরোধী দল উভয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকবেন। এভাবেই নিয়োগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব রোধ করে সুশাসনের পথ তৈরি করা সম্ভব হবে।’
বর্তমানে সংবিধানের ১৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, এ অবস্থান পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ যাচাই কমিটির প্রস্তাব সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তা বড় পরিবর্তন নয়, বরং কার্যকর জবাবদিহির সূচনা হবে।
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে, দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়। দুদক এখন একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান নিয়োগ দেন সরকারপ্রধান। ফলে অনেক সময় এটি ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতি আড়াল করে, আর বিরোধীদের টার্গেট করে। আমরা চাই, এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হোক, যার প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগ হবে একটি নিরপেক্ষ সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আখত র হ স ন প রস ত ব কম ট র সদস য প এসস এনস প ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
সাফল্যের সঙ্গে সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বাসস লিখেছে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে; এমন কিছু পরিবর্তন যা এদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না, এমন কিছু পরিবর্তন যা আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাবে, সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।”
“সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা বিদেশিদের আসতে দেখেছি’ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বন্ধু রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।”
“এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসেছে, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিয়েছে এবং আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে আমরা নিজেরাই বিশ্ববাসীর দরবারে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি,” বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা এই সনদ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের সকলকে আমি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”
এই জুলাই সনদ সারা বিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ যারা মাসের পর মাস এই দীর্ঘ আলোচনার সঙ্গে থেকেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সকল কার্যকলাপ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।”
‘দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে’ বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, একক সংগঠন, একক সংস্থা অথবা একক সরকার দিয়ে সম্ভব হবে না; এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”
ঢাকা/রাসেল