জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি
Published: 29th, July 2025 GMT
জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পর্যন্ত থাকতে চায় বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে ভবিষ্যতে বিতর্ক বা জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ, ভবিষ্যতেও কোনো স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের গণ-অভ্যুত্থান হলে তখন তারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি উঠতে পারে।
গতকাল সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা এ অভিমত জানিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫–এর খসড়া এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে এ সভা হয়। রাত ৮টা থেকে সভা শুরু হয়ে পৌনে ১২টা পর্যন্ত সভা চলে। সভায় জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, খসড়ার সঙ্গে তাঁরা মোটামুটি একমত। অঙ্গীকারের বিষয়ে বিএনপি একমত। সেখানে শব্দ, বাক্য গঠনসংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপি তাদের পর্যবেক্ষণ কমিশনকে জানাবে।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতেই জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ার কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে দলীয় মতামত কমিশনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো জুলাই সনদের খসড়ায় ৭ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। ৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, এই সনদ গৃহীত হওয়ার পর এতে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা মনে করেন, ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো সরকার গঠনের দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের দ্বিমত আছে। এ ছাড়া জুলাই সনদের খসড়ার বাকি ছয় দফা অঙ্গীকারনামার সঙ্গে তাঁরা একমত। জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির অভিমত হচ্ছে, এর সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে অতীতের আরও ঘটনা যেমন নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান এবং ভবিষ্যতেও গণ-অভ্যুত্থান হলে তারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্ন আসবে। এতে করে জটিলতা বাড়তে পারে। তা ছাড়া একাত্তরের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাহাত্তরে প্রণীত সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত ছিল না ২০১১ সাল পর্যন্ত। ওই বছর সপ্তম তফসিলে তা যুক্ত করা হয়, যা চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছে।
এমতাবস্থায় জুলাই ঘোষণাপত্রও আলাদা করে সংবিধানে যোগ করা অপ্রয়োজনীয় মনে করে বিএনপি। বরং দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা এটিকে ‘রাজনৈতিক দলিল’ হিসেবে রাষ্ট্রের আর্কাইভে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, একটা বিপ্লবকে সংবিধানে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তাই জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতেই থাকতে চায় বিএনপি।
বিএনপি আগেই জানিয়েছিল, জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করতে চায় তারা। পুরো ঘোষণাপত্র নয়, অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি হিসেবে একটি অনুচ্ছেদে ঘোষণাপত্রের উল্লেখ থাকবে। জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দলটি সেখানে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ কিছু শব্দ ও ভাষাগত পরিবর্তন এনেছে।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের (বিএনপির) পক্ষ থেকে মতামত জানানো শেষ। যা দেওয়ার দিয়ে দিয়েছি, আমরা আর কোনো মতামত দেব না।’
সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি আর আলোচনা করতে চায় না। তবে জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে। কারণ, সংস্কারের ব্যাপারে তারা আন্তরিক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স থ য় কম ট র র খসড়
এছাড়াও পড়ুন:
বাকৃবিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চান শিক্ষার্থীরা, একমত না শিক্ষকরা
প্রাণিসম্পদ খাতের সমতা ও কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে নারাজ অনুষদের শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে অনুষদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেআর মার্কেট, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হয়ে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে তারা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। উপাচার্য বিদেশ ভ্রমণে থাকায় তার পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিএম মুজিবর রহমান।
এরপর আবার মিছিল নিয়ে ভেটেরিনারি অনুষদের করিডর প্রদক্ষিণ করে পশুপালন অনুষদের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে একটি স্মারকলিপি অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন কাছে প্রদান করেন তারা।
আরো পড়ুন:
কুবির নজরুল হল থেকে গুলি ও গাঁজা উদ্ধার
৩৫ বছর পর রাকসু তফসিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
স্মারকলিপিতে তারা বলেন, দেশে বর্তমানে ভেটেরিনারি সায়েন্স ও অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রিকে একীভূত করে কম্বাইন্ড ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে একটি ডিগ্রিতে প্রাণি চিকিৎসা ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকায় গ্র্যাজুয়েটরা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের পদের জন্য আবেদন করতে পারছেন। অথচ বাকৃবিতে এখনো দুটি অনুষদ পৃথকভাবে থাকায় অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটরা চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবহেলিত হচ্ছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন ২০১৯ অনুযায়ী কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের প্র্যাকটিসের স্বীকৃতি থাকলেও অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের ক্ষেত্র একেবারেই সংকুচিত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বেসরকারি খাতেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু ডিভিএম বা কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি, ডেইরি, নিউট্রিশন ও জেনেটিক্স বিভাগের প্রভাষক পদে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি বাদ দিয়ে ডিভিএম ও কম্বাইন্ডদের উল্লেখ্য করে সার্কুলার দেওয়া হচ্ছে। অথচ উপর্যুক্ত বিষয়গুলো অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রির মূল পাঠ্যসূচি। এমনকি ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইনেও ভেটেরিনারির সংজ্ঞাতে উৎপাদন সংশ্লিষ্ট সব বিষয় প্রবেশ করিয়ে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের কর্মপরিধি একদম সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা শিক্ষা নিচ্ছি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্বপূর্ণ কোর বিষয়ের ওপর। অথচ বাস্তবে আমাদের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমাদের সিনিয়ররাও চরম হতাশা ও পেশাগত অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়ন ও জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ মানবসম্পদ নিশ্চিত করতে হলে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি ও ভেটেরিনারি সায়েন্সের সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করা সময়ের দাবি। প্রাণি চিকিৎসা ও উৎপাদন- দুই ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও কর্মসংস্থানের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে কম্বাইন্ড (বিএসসি ইন ভেট সাইন্স এন্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি) ডিগ্রি চালু করতে হবে।
এ বিষয়ে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, “আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদ ৬৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এটা কম্বাইন্ড করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা শিক্ষকরা একমত না। উপাচার্য স্যার বিদেশ থেকে এসে আমাদের ডাকলে আমরা সেভাবে আলোচনা করব।”
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিএম মুজিবর রহমান বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির স্মারকলিপিটি হাতে পেয়েছি। এখানে দুই অনুষদের সমঝোতার বিষয় রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছুটি শেষে দেশে এসে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
সোমবার থেকে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধনের মাধ্যমে তাদের দাবির পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন।
ঢাকা/লিখন/মেহেদী