কার্বন নিঃসরণ কমাবে জাবি গবেষকদের ‘লিকুইড ট্রি’ প্রযুক্তি
Published: 26th, August 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে দিন দিন বেড়ে চলেছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব। এর প্রভাব পড়ছে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশে। এ সমস্যার সমাধানে প্রতি বছর নানা উদ্যোগ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে আশার আলো দেখিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
তারা দেশীয় শৈবাল ব্যবহার করে উদ্ভাবন করেছেন ‘লিকুইড ট্রি’- যা কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন উৎপাদনে সক্ষম।
আরো পড়ুন:
বাকৃবি শিক্ষার্থীদের কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিকে আত্মঘাতী বলছেন শিক্ষকরা
ভালো বন্ধু হতে পারে ভালো অভিভাবক: যবিপ্রবি উপাচার্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োরিসোর্সেস টেকনোলজি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি ল্যাব, গবেষণা উদ্ভাবন কেন্দ্রের (আরআইসি) তত্ত্বাবধানে এবং সরকারের ইডিজিই প্রকল্পের অর্থায়নে তৈরি হয়েছে এ প্রোটোটাইপ।
গবেষকদের দাবি, এই প্রযুক্তি ইনডোর ও আউটডোর উভয় পরিবেশেই সমান কার্যকর।
‘লিকুইড ট্রি’ এক ধরনের ফোটোবায়োরিঅ্যাক্টর, যেখানে মাইক্রোঅ্যালগি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করে। বাইরে স্থাপিত মডেল সূর্যালোক ব্যবহার করে। আর ঘরের ভেতরে ব্যবহৃত মডেলটি কৃত্রিম আলোতে সালোকসংশ্লেষণ চালায়। ফলে এটি প্রাকৃতিক গাছের মতোই কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ ও অক্সিজেন নিঃসরণ করতে সক্ষম।
গবেষক দলের তথ্য অনুযায়ী, তারা দুই ধরনের লিকুইড ট্রি তৈরি করেছেন, একটি ঘরের ভেতরে ব্যবহারের জন্য, আরেকটি উন্মুক্ত পরিবেশের জন্য। প্রতিটি ইউনিট তৈরিতে প্রাথমিকভাবে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে ব্যয় অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করছেন তারা।
এই গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড.
তিনি আরো বলেন, “এ প্রযুক্তির কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। তবে এর সম্ভাবনা অনেক বেশি। স্থানীয় অ্যালগি প্রজাতি উন্নয়ন, বায়োফুয়েল ও জৈবসার উৎপাদন, এমনকি নগর পরিকল্পনায় একীভূত করার সুযোগ আছে। এটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সবুজ অর্থনীতির বিকাশে ভূমিকা রাখবে।”
গবেষকরা বিশ্বাস করেন, দ্রুত নগরায়ণের দেশে লিকুইড ট্রি প্রতীকী উদ্ভাবনের চেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে ইনডোর মডেলের কারণে বাংলাদেশ বৈশ্বিক পর্যায়ে পথ প্রদর্শক হতে পারে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষা-গবেষণা প্রতিষ্ঠানে জিরো কার্বন এমিশন নিশ্চিত করার জন্যও এ প্রযুক্তি কার্যকর হবে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র কর ক র বন
এছাড়াও পড়ুন:
সংসদে সংরক্ষিত আসন সংস্কার: আশার আলো নাকি মরীচিকা
সংসদে নারীদের জন্য ১০০ আসন সংরক্ষণ এবং সেখানে সরাসরি নির্বাচনের দাবি বহুদিনের। জুলাই-পরবর্তী সময়ে বৈষম্যমূলক এই ব্যবস্থা সংস্কারে আশার আলো দেখা দিয়েছিল।
কিন্তু অচিরেই সেই আলো ক্ষীণ হতে শুরু করল। নারীদের বাদ দিয়েই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলল।
ঐকমত্য কমিশনে ‘ঐকমত্য’ হলো—সংসদে আগের মতোই তাদের জন্য ৫০টি আসন থাকবে এবং আগামী নির্বাচনে ৩০০ সাধারণ আসনে অন্তত ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দলগুলোকে আহ্বান জানানো হবে।
এখানে প্রশ্ন হলো, নাগরিক সমাজের দাবি এবং তিনটি সংস্কার কমিশনেরই সুপারিশ ছিল নারীর জন্য আসন সংরক্ষণ ও সরাসরি নির্বাচনের।
গবেষণাও বারবার দেখিয়েছে, বর্তমান সংরক্ষিত পদ্ধতি নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন ঘটাতে পারছে না এবং কার্যকর ফলাফল বয়ে আনতে পারছে না। নারীরা সংসদে গেলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং কাজের সুযোগ সীমিত থেকে যায়।
তাহলে সেখানে গবেষণার ফলাফল, জনদাবি উপেক্ষা করে পুরোনো ব্যবস্থা কেন বহাল রাখা হলো?
আরও পড়ুনসংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন: ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান পর্ব হয়ে বর্তমান চিত্র২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪সংবিধান সংশোধনের দোহাই দিয়ে নারীদের জন্য সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ খারিজ করা হলো, অথচ অন্যান্য সংস্কারের ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের প্রসঙ্গ তো সামনে আসছে না।
যদি অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কার সম্ভব হয়, তবে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনেও সংস্কার সম্ভব হওয়া উচিত।
২০২৫ সালে এসেও এই অকার্যকর পদ্ধতি বহাল রাখা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় না। কারণ, এর সঙ্গে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ও জড়িত।
রাষ্ট্র প্রতিবছর ৫০টি সংরক্ষিত আসনের জন্য প্রায় ৮ কোটির বেশি টাকা ব্যয় করছে। এটি একটি বড় বিনিয়োগ। কিন্তু এই বিনিয়োগের পূর্ণ সুফল আসছে না।
সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করা গেলে এই বিনিয়োগ সমাজ ও অর্থনীতিতে বহুগুণ রিটার্ন দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাও সেটাই প্রমাণ করেছে। যেমন মেক্সিকোতে ২০১৪ সালের পারিটি আইন কার্যকর হওয়ার পর মাতৃমৃত্যু ২০০০ সালের প্রতি লাখে ১০৭ জন থেকে ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ জনে (উইলসন সেন্টার, ২০২৩, রয়টার্স, ২০২৩)।
ওইসিডি দেশগুলোতে দেখা গেছে, নারী কর্মসংস্থান ১০ শতাংশ বাড়লে জিডিপি ২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় (ওইসিডি, ২০২২)।
আরও পড়ুনসংরক্ষিত নারী আসন: তাঁরা কেন বাদ পড়লেন১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ফ্রান্সে নারী প্রার্থী বাধ্যতামূলক করার ফলে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে এবং জিডিপিতে প্রতিবছর অতিরিক্ত ০.৫-০.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ হয়েছে (ইউরোপিয়ান কমিশন, ২০১৮)।
যুক্তরাজ্যে নারী-পুরুষ সমান কর্মসংস্থান হলে অর্থনীতিতে বাড়তি ১৫০ বিলিয়ন পাউন্ড যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে (ফাওসেট সোসাইটি, ২০২৪)।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নারী কোটা চালুর পর উন্নয়নশীল দেশে মাতৃমৃত্যু ৮-১২ শতাংশ কমেছে, যা সরাসরি স্বাস্থ্য ব্যয় সাশ্রয় ও শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার এখনো প্রতি লাখে ১৫৬ জন (বিবিএস, ২০২২) যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০-এ নামানোর লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে।
আরও পড়ুননারী সংসদ সদস্য: সংরক্ষিত নাকি সরাসরি ভোটে?০২ জুন ২০২৫একইভাবে ২০২৪ সালের জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার সহিংসতার শিকার হয়েছেন (ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ, ২০২৪), যার ফলে পরিবার ও রাষ্ট্র উভয়কেই অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে।
বর্তমান সংরক্ষিত ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে এসব ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে পারছে না।
আবার সাধারণ আসনে কমিশনের ৫ শতাংশ মনোনয়নের আহ্বানে কোনো আইনগত ভিত্তি নেই, ফলে রাজনৈতিক দলগুলো সহজেই তা এড়িয়ে যেতে পারে। এতে সাধারণ আসনে নারীর মনোনয়ন আরও কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
তাই এখন সময় এসেছে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন চালু করতে হবে, যাতে নারী এমপিরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে যেতে পারেন। সাধারণ আসনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ নারী মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
বিশ্বের অনেক দেশেই ইতিমধ্যেই দেখা গেছে, নারীর নেতৃত্ব গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়। বাংলাদেশ যদি এখনই পদক্ষেপ নেয়, তবে কেবল নারী নয়, গোটা দেশই এর সুফল পাবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়বে, মানবসম্পদ উন্নত হবে এবং গণতন্ত্রও হবে আরও টেকসই।ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন আরপিও (রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার) সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে, নারীর জন্য মনোনয়নের হার ন্যূনতম ২০ শতাংশ করে একটি ধারা সংযোজন করতে হবে।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল এ নিয়ম মানতে ব্যর্থ হলে তাদের জন্য আর্থিক জরিমানার বিষয়টিও উল্লেখ থাকতে হবে। অন্যথায় নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা চ্যালেঞ্জিং হবে।
একই সঙ্গে নারীদের জন্য নিরাপদ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, নারীদের অনলাইন–অফলাইন যে হয়রানির শিকার হতে হয়, তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; যাতে তাঁরা হয়রানি ও সহিংসতার ভয় ছাড়াই প্রার্থী হতে বা দলে যুক্ত হতে পারেন। নারী প্রার্থীদের জন্য জনতহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্বের অনেক দেশেই ইতিমধ্যেই দেখা গেছে, নারীর নেতৃত্ব গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়।
বাংলাদেশ যদি এখনই পদক্ষেপ নেয়, তবে কেবল নারী নয়, গোটা দেশই এর সুফল পাবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়বে, মানবসম্পদ উন্নত হবে এবং গণতন্ত্রও হবে আরও টেকসই।
লিপিকা বিশ্বাস নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নবিষয়ক বিশ্লেষক