দীর্ঘ ১ যুগ পেরোলেও সন্ধান মেলেনি আওয়ামী শাসনামলে গুম হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাসের। তাদের সন্ধানের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শাখা ছাত্রশিবির।

শনিবার (৩০ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এ সময় ওয়ালিউল্লাহ ও আল- মুকাদ্দাসের সন্ধান, বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটালাইজেশন ও সাজিদ আব্দুল্লাহ’র হত্যার বিচারের দাবি জানান তারা।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের গবেষণা সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে: জবি উপাচার্য

নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ

মানববন্ধনে ‘প্রশাসনের টালবাহানা, মানি না মানবো না’, ‘আমার ভাই গুম কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাইয়ের খোঁজ, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘মুকাদ্দাস ভাই নিখোঁজ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সেক্রেটারি ইউসুব আলী ও ওয়ালিউল্লাহ’র বড় ভাই অধ্যক্ষ খালিদ সাইফুল্লাহসহ শাখা ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী।

গুমের শিকার শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহর বড় ভাই অধ্যক্ষ খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, “আমি ওয়ালি-মুকাদ্দাস দুইজনেরই বড় ভাই হিসেবে বলব, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয় আসি তখন আমার পা চলে না, বুক কেঁপে উঠে, ক্যাম্পাসে আসার সময় আমি বাবা-মাকে বলে আসতে পারি না যে আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যাচ্ছি। কেউ যদি দোষীও হয়, পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার বিচার হোক শাস্তি পাক, কিন্তু এধরনের গুম-হত্যা একটি দেশের বড় হওয়া, সমৃদ্ধ হওয়াকে থামিয়ে দেয়।”

তিনি বলেন, “তৎকালীন প্রশাসনে যারা ছিল তাদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের কাজ কখনোই সম্ভব ছিল না। আমি এবং মুকাদ্দাসের চাচা গুমের বিষয়ে তদবির করেছিলাম মিডিয়ার ঘরে ঘরে গিয়েছিলাম, প্রশাসনের ঘরে ঘরে গিয়েছিলাম, তখন আমরা জানতে পেরেছি, তৎকালীন এখানকার স্থানীয় প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যোগসাজশেই ওয়ালিউল্লাহ-মুকাদ্দাসের গতিবিধি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছিল।”

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আজকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পতনের একটি বছর হয়ে গেল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাস ভাইয়ের সন্ধান পাইনি। সরকার গুম কমিশন তৈরি করলেও সেটার কার্যকরি পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি।”

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় এ সরকার ঘুরিয়ে-পেচিয়ে ফ্যাসিবাদকে আশ্রয় দিচ্ছে। যেটা প্রতীয়মান হয়েছে, গতকাল নূরের উপর হামলার মাধ্যমে। যদি উপদেষ্টারা পদত্যাগ করেন তবে আপনারাও গুমের শিকার হতে পারেন। তাই আপনাদের অনুরোধ জানাই আমাদের ওয়ালিউল্লাহ-আল মুকাদ্দাস ভাইয়ের সন্ধান দিন।”

তিনি আরো বলেন, “তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদেন ধরুন। তাহলে আমার মনে হয় অনেক কিছু বের হয়ে যাবে। আপনারা কেন ধরছেন না? কেন কুলুপ আটা আপনাদের মুখে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারে না। প্রশাসনকে বলতে চাই ওয়ালিউল্লাহ-মুকাদ্দাস ভাইয়ের ব্যাপারে দ্রুত কথা বলুন। নইলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেওয়া হবে।”

২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে কুষ্টিয়া ফিরছিলেন ওয়ালিউল্লাহ ও মুকাদ্দাস। পথিমধ্যে নবীনগর এলাকা থেকে র‌্যাব ও ডিবি পরিচয়ে উঠিয়ে নেওয়া হয় তাদের। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী গুমের খবর অস্বীকার করে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ৭৬ জনের একটি তালিকা দেয় বাংলাদেশ সরকারকে। তালিকায় ওয়ালিউল্লাহ ও মুকাদ্দাসের নাম আছে বলে জানা গেছে। তারা যথাক্রমে ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের তৎকালীন অর্থ সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সন ধ ন তৎক ল ন

এছাড়াও পড়ুন:

শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে ‍শিবচর থানায় মামলাটি করেন।

এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।

মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না সাত কলেজের শিক্ষকেরা
  • দুর্গাপূজায় অরাজকতা রোধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান মহিলা পরিষদের
  • বন কর্মকর্তার ১৭ বিয়ে: আদালতে মামলা, তদন্তে পিবিআই
  • শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তনের দাবিতে ৫টি পরিবেশবাদী সংগঠনের মানববন্ধন
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন