জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন উপলক্ষে সার্বিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ হলে ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় ১ হাজার ২০০ পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও সদস্য সচিব একেএম রাশিদুল আলম আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য জানান।

আরো পড়ুন:

জাকসু: স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ঘোষণা ছাত্রদল নেত্রীর, পরে প্রত্যাহার 

জাকসু নির্বাচনের ২ দিন আগে ডোপ টেস্ট নিয়ে যা বলছেন প্রার্থীরা

সভায় জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১২টি ফটকে এবং ক্যাম্পাসে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে নির্বাচনের দিন (১১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত পোশাকে ও সাদা পোশাকে প্রায় ১ হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য ক্যাম্পাসের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করবেন। নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন করবে।

ভোটকেন্দ্র ও হলে দায়িত্ব পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী। পাশাপাশি দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যে আবারো ঢাকা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করা হয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থান করবে এবং প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের পরামর্শে কাজ করবে। তবে এ বিষয়ে সেনাবাহিনী থেকে জাবি প্রশাসনকে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

আরো জানানো হয়, জাকসু নির্বাচনের দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১০টি ছাত্রী ও ১১টি ছাত্রসহ মোট ২১টি হলের ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ পোলিং অফিসার ও ৬৭ সহকারী পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি ব্যালটে ভোট দেবেন ভোটাররা। ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা করা হবে।

কমিশনের তত্ত্বাবধানে সিনেট হলে বসানো বড় স্ক্রিনে সব কয়টি হলের ভোট পর্যবেক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি প্রতি ঘণ্টায় ভোটের ফলাফল জানানোর জন্য ক্যাম্পাসের কয়েকটি পয়েন্টে মনিটর স্থাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ওএমআর ব্যালটে টিকচিহ্নের মাধ্যমে ভোট প্রদান করতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও জনসংযোগ কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও নির্দেশনা প্রকাশ করা হবে।

জাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন পদে ১৭৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছেন। এর মধ্যে নয়জন সহ-সভাপতি (ভিপি) ও নয়জন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ছয়জন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, গত ২৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ভোটের প্রচার মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প ট ম বর গ রহণ ন করব করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রশিবিরের ভরসা ওএমআর মেশিনে, ছাত্রদল চায় হাতে ভোট গণনা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ত্রুটিমুক্ত ওএমআর মেশিনে ভোট গণনাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির।

বুধবার বিকেলে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রধান কমিশনারের কাছে দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেন ছাত্রশিবির মনোনীত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। এর আগে দুপুরে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল হাতে ভোট গণনাসহ ছয়টি দাবি জানিয়েছিল।

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা করতে তিন দিন সময় লেগেছে, যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন থেকে চার গুণ বেশি। এখানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনা করলে সাত দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এতে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।মোস্তাকুর রহমান, ভিপি পদপ্রার্থী, ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল

ছাত্রশিবিরের অন্য দাবিগুলো হলো পোলিং এজেন্টদের প্রবেশাধিকার ও দায়িত্ব পালনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সুবিধা নিশ্চিত করা; সাংবাদিকদের জন্য পৃথক আইডি কার্ডের ব্যবস্থা রাখা এবং কেবল প্রশাসন অনুমোদিত সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার দেওয়া; কোনো প্রার্থী প্রযুক্তিগত সমস্যা নিয়ে আপত্তি করলে হাতে ভোট গণনার ব্যবস্থা রাখা; প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা; ভোটের দিন ক্যাম্পাসে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখা এবং নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা।

ছাত্রদলের হাতে ভোট গণনার দাবির বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ) বলেন, ‘আমরা চাই ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচন একটি উৎসবমুখর ও স্বচ্ছ পরিবেশে হোক। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা করতে তিন দিন সময় লেগেছে, যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন থেকে চার গুণ বেশি। এখানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনা করলে সাত দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এতে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ জন্য দিনের ফলাফল দিনেই প্রকাশ করা জরুরি। আমরা ত্রুটিমুক্ত ওএমআর মেশিনে ভোট গণনার দাবি জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুনহাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত৪ ঘণ্টা আগে

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাকুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ আসেনি। কিন্তু আমরা অন্য প্যানেলের বিরুদ্ধে একাধিকবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছি।’

জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের শিক্ষক নেতাদের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে শিবির সভাপতি বলেন, ‘ছাত্রদলের মাদার সংগঠনের শিক্ষকেরা এখানে এসে যদি দাবিদাওয়া পেশ করেন, সেটাকে আমি পেশাদার মনে করছি না। ছাত্রদলের দাবি ছাত্রদলের নিজেদেরই পেশ করা উচিত।’

ক্যাম্পাসে চলমান পোষ্য কোটা বাতিলের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ছাত্রশিবিরের সভাপতি। তিনি বলেন, রাকসু নির্বাচনের আগমুহূর্তে একটি মীমাংসিত বিষয় নিয়ে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা অনুচিত। তাঁরা চান, সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

এর আগে দুপুরে হাতে ভোট গণনাসহ ছয়টি দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেন ছাত্রদল মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থীরা। তাঁদের অন্য দাবিগুলো হলো ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে; ভুয়া ও জাল ভোট শনাক্তে বাধ্যতামূলক ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে; ভোট গ্রহণের সময় ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বৈধ কার্ড বা পাসধারী ব্যতীত কাউকে ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ঢুকতে দেওয়া যাবে না, সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করতে হবে; লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখতে নির্বাচনে অবৈধ কালোটাকার প্রভাব রুখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সব প্রার্থীর জন্য একই আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়টি নজরদারি করতে হবে।

প্রচারণায় বাধা বৃষ্টি

প্রচারণার তৃতীয় দিনে আজ প্রার্থীদের প্রচারণা তেমন দেখা যায়নি। সকালের দিকে কিছুটা রোদ উঠলেও দুপুর ১২টার দিকে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি সন্ধ্যা পর্যন্ত হয়েছে। এতে প্রার্থীরা প্রচারণায় নামতে পারেননি। তবে বৃষ্টির ফাঁকে কয়েকজন প্রার্থীকে প্রচারণায় দেখা গেছে।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে দেখা যায় কেন্দ্রীয় সংসদে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী কাজী শফিউল কালামকে। তিনি ইউকেলেলে বাজাচ্ছিলেন আর ভোট চাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন প্রচারপত্র বিতরণ করছিলেন। শফিউল বলেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে দাঁড়িয়েছেন। তাই এভাবে প্রচার করছেন। কোনো জায়গায় গানের আসরও হয়ে যাচ্ছে।

‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’-এর ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বৃষ্টির ফাঁকে প্রচারণা চালিয়েছেন। তিনি দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ এলাকায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে খুব বেশি শিক্ষার্থীর কাছে যাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রশিবিরের ভরসা ওএমআর মেশিনে, ছাত্রদল চায় হাতে ভোট গণনা
  • রাকসু নির্বাচন নিয়ে ৭ দাবি ছাত্রশিবিরের