মদিনার ইহুদিরা মক্কার কুরাইশদের নবীজি (সা.)-এর কাছে কিছু প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়েছিল। প্রশ্নগুলো ছিল আসহাবে কাহাফের পরিচয় ও ঘটনা, রুহের প্রকৃতি ও জুলকারনাইনের ঘটনা। সুরা কাহাফে এ ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
ইয়াজুজ-মাজুজ অর্থ দ্রুতগামী। ইয়াজুজ-মাজুজ পৃথিবীতে বের হয়ে অতি দ্রুত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। কারও কারও মতে, আরবি ‘মওজ’ শব্দ থেকে ‘ইয়াজুজ-মাজুজ’ শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ ‘তরঙ্গ’ বা ‘ঢেউ’। তাদের মতে, ইয়াজুজ-মাজুজ পৃথিবীতে বের হবে অজস্র সংখ্যায়, এরপর ঢেউয়ের মতো ছুটতে ছুটতে সারা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করবে। এ জন্যই তাদের এই নামকরণ।
ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায় আদম (আ.
কিয়ামতের আগে হজরত ঈসা (আ.)-এর পৃথিবীতে পুনরাগমনের সময় তারা ওই প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসবে এবং সামনে যা পাবে, সব ভক্ষণ করবে।
আরও পড়ুনমেহমান হয়ে কতদিন থাকব২৫ নভেম্বর ২০২৩কোরআনে আছে, ‘সে (জুলকারনাইন) বলল, আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তা-ই যথেষ্ট। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমার কাছে লোহার তাল নিয়ে আসো। তারপর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে যখন লোহার ঢিবি দুটি পাহাড়ের সমান হলো, তখন জুলকারনাইন বলল, তোমরা হাপরে দম দিতে থাকো। যখন তা আগুনের মতো গরম হলো, তখন সে বলল, তোমরা গলানো তামা নিয়ে আসো, আমি তা ওর ওপর ঢেলে দেব। এরপর ইয়াজুজ-মাজুজ তা পার হতে পারল না বা ভেদ করতেও পারল না। জুলকারনাইন বলল, এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে, তখন তিনি তাদের চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য। সেদিন আমি (আল্লাহ) তাদের দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব, আর শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে। তারপর আমি তাদের সবাইকে একত্র করব।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৯৩-৯৯)
আরও পড়ুনফজরের নামাজ পড়লে ১০ পুরস্কার পাওয়া যায়২২ নভেম্বর ২০২৩ইয়াজুজ-মাজুজ নদীর পানি খেয়ে শেষ করে ফেলবে। তাদের সঙ্গে কেউ লড়াই করে পারবে না। একসময় তারা বায়তুল মুকাদ্দাসের এক পাহাড়ে গিয়ে বলবে, দুনিয়ায় যারা ছিল, তাদের হত্যা করেছি। এখন আকাশে যারা আছে, তাদের হত্যা করব।
তারা আকাশের দিকে তির নিক্ষেপ করবে। এ সময় ঈসা (আ.) তাদের জন্য দোয়া করবেন। এতে ইয়াজুজ-মাজুজের কাঁধের দিক থেকে একপ্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করবেন। পৃথিবীজুড়ে তাদের লাশ পড়ে থাকবে। আল্লাহ নখযুক্ত পাখি পাঠিয়ে লাশগুলোকে সরিয়ে নেবেন। (বুখারি ও মুসলিম)
কোরআনে ইয়াজুজ-মাজুজের বিস্তারিত পরিচয় দেওয়া হয়নি। বাইবেলের আদি পুস্তকে (১০ম অধ্যায়ে) তাদের হজরত নুহ (আ.)-এর বংশধর বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ অস্বাভাবিক বেঁটে, কেউ আবার অস্বাভাবিক লম্বা।
আরও পড়ুনদোয়া কুনুত: বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও পড়ার নিয়ম০১ জানুয়ারি ২০২৪আল্লাহ বলেন, ‘চলতে চলতে সে যখন পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে পৌঁছাল, তখন সেখানে এক সম্প্রদায়কে পেল, যারা তার কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। তারা বলল, হে জুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্য কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন।’
বাদশাহ জুলকারনাইনের যুগে তারা বিশৃঙ্খলা করেছিল। তাদের অনিষ্ট থেকে মানুষকে বাঁচাতে জুলকারনাইন তাদের যাতায়াতের পথে বৃহৎ প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন। জুলকারনাইন সারা বিশ্ব ভ্রমণ ও শাসন করতেন। এ কারণে তিনি পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবে আলোচিত হয়েছিলেন। আরেকটি কারণ হলো, তিনি ইয়াজুজ-মাজুজের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছিলেন মানুষকে।
আরও পড়ুনহারুত-মারুত কারা২১ নভেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
সংস্কার শেষে ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার চালু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করার মধ্য দিয়ে এ কারার যাত্রা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ও ফেনী জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার আসামিদের রাখা হবে।
কারা সূত্র জানায়, দেশের পুরোনো চারটি কারাগারের মধ্যে ফেনী-২ কারাগার একটি। শত বছরের পুরোনো এ কারাগার ভবন ছিল জরাজীর্ণ। এ কারণে ২০১৯ সালে ১২ জানুয়ারি এ কারাগার থেকে বন্দীদের ফেনীর শহরতলির রানীরহাট এলাকার নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে কারাগারটি অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল।
নতুন করে চালু হওয়া কারাগারটির অবস্থান ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায়। এটি ১৯১৫ সালে সাবজেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালে জেলা এটিকে কারাগারে উন্নীত হয়। এ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৭২ জন। এর মধ্যে ১৭০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। কারাগার চালু করার জন্য গতকাল কুমিল্লা জেলা কারাগার থেকে ২৪ জন ও চট্টগ্রাম থেকে চারজন বন্দীকে আনা হয়েছিল। তাঁরা সবাই সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত। এ কারাগারে তাঁরা রান্নার দায়িত্বে থাকবেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দীদের ফেনীর দ্বিতীয় কারাগারে আনা হবে। আপাতত এতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৭৪ জন, নোয়াখালী থেকে ১৫ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৩৩ জন বন্দী এখানে স্থানান্তর করা হবে। এতে সেল, রান্নাঘর, কিশোর ওয়ার্ড, মসজিদসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। এ কারাগার নিয়ে বর্তমানে দেশে কারার সংখ্যা ৭১।
জানতে চাইলে ফেনী-২–এর জেল সুপার মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র চায়, কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, সংশোধনের কেন্দ্র হোক। এরই অংশ হিসেবে সংস্কার শেষে ফেনী কারাগার-২ চালু হয়েছে।’
কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার ফেরদৌস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দীদের সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সও যোগদান করেছেন। বেশির ভাগ পদে কর্মচারীরাও কাজ শুরু করেছেন।’