ফরিদপুরে সাইনবোর্ড খুলতে গিয়ে মই থেকে ছিটকে পড়ে মারুফ লস্কর (১৩) নামের এক শিশুশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

মারুফ ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা গ্রামের সোহরাব লস্করের ছেলে। রিকশাচালক বাবার কাজের সুবাদে সে ফরিদপুর শহরের মধ্য আলীপুর রাজ্জাকের মোড় এলাকায় সপরিবার থাকত। মারুফ এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট এবং পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল। এলাকাবাসী জানান, সে পড়াশোনার পাশাপাশি পোস্টার সাঁটানো বা সাইনবোর্ড লাগানোর কাজ করত।

পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গতকাল বিকেল চারটার দিকে শহরের রাজ্জাকের মোড় এলাকায় একটি খাবার হোটেলের সাইনবোর্ড নামানোর কাজ করছিল মারুফ। এ জন্য মই বেয়ে ওপরে উঠতে গিয়ে সে হঠাৎ পা ফসকে নিচে সড়কে পড়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান এলাকাবাসী। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

এ মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মারুফের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

আসাদউজ্জামান। তিনি বলেন, শিশুটির মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার বেলা একটার দিকে সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা গ্রামে মারুফের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে একটি চেয়ারের বসে শিশুর মতো কাঁদছেন তাঁর বাবা সোহরাব। বিলাপ করতে তিনি বলছিলেন, ‘আমার সোনা হারায় গেল রে! এখন কে আমাকে বাবা ডাকবে? কে পাশে দাঁড়াবে? আমার সব আশা জ্বইলা-পুইড়া শেষ হইয়া গেল।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জব্দ করা জাটকা এতিমখানায় বিতরণ, সেই মাছ লুট করলেন আড়তদারেরা

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জব্দ করা ৭০ কেজি জাটকা দুটি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছিল। তবে সেই মাছ লুট করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন আড়তদারের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে মৎস্য কার্যালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জাটকা রক্ষার অভিযানে আমিরাবাদ ও দশানী বাজার থেকে ৭০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। পরে আমিরাবাদ এলাকায় জব্দ করা জাটকা উপজেলার হাজীপুর ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় কিছু দুস্থ মানুষকেও কিছু জাটকা দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই জাটকা নিয়ে ওই দুই মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কমিটির লোকজন সন্ধ্যায় আমিরাবাদের বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছান। তখন আমিরাবাদ বাজারের মাছের আড়তদার আবুল প্রধান, আরিফ গাজী, সেরু প্রধানিয়া, দেলু বেপারীসহ আরও কয়েকজন তাঁদের পথরোধ করেন এবং জাটকাগুলো লুট করে নিয়ে যান।

হাজীপুর মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আল আমিন অভিযোগ করেন, মাছের ওই আড়তদারেরা তাঁদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে জাটকা লুট করে নিয়ে যান। বাধা দিয়েও কাজ হয়নি। বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছেন।

এ অভিযোগের বিষয়ে আবুল প্রধান, আরিফ গাজী ও সেরু প্রধানিয়ার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। তবে দেলু ব্যাপারী মুঠোফোনে বলেন, জাটকা লুট করা তাঁদের উচিত হয়নি। ওই জাটকা আজ (বৃহস্পতিবার) তাঁরা ফেরত দেবেন। এটি তাঁদের বড় ভুল হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। জাটকা উদ্ধারে ব্যবস্থাপনা নেওয়া হচ্ছে।

ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর জাটকা উদ্ধারে তিনি থানার ওসি ও মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতিমদের জাটকা লুট হওয়ার বিষয়টি খুব দুঃখজনক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ