Samakal:
2025-08-01@04:39:21 GMT

আমার শিক্ষাগুরু আনিসুর রহমান

Published: 13th, January 2025 GMT

আমার শিক্ষাগুরু আনিসুর রহমান

আমার শিক্ষক, শিক্ষাগুরু ও পথপ্রদর্শক অধ্যাপক আনিসুর রহমান ৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৭২ সালে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র তখন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য প্রফেসর আনিসুর রহমান তাঁর কমিশনের কর্মপরিধি কিছুটা কমিয়ে আমাদের ‘মাইক্রো-ইকোনমিকস’ কোর্সটি পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন (যদিও ’৭১ সালে আমার এমএ পাস করার কথা, কিন্তু ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের কারণে আমরা প্রায় দেড় বছর সেশন-বিলম্বের শিকার হয়েছিলাম)। ওটা ছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সর্বসেরা অর্জন। সেশন-বিলম্ব না হলে আমি আমার শিক্ষাজীবনের সেরা শিক্ষক অধ্যাপক আনিসুর রহমানের সরাসরি ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হতাম। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের আগে তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অবস্থিত কায়েদ-ই-আযম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সেই ১৯৭২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অধ্যাপক আনিসুর রহমান ছিলেন আমার ‘ফিলসফার-গাইড’ ও সার্বক্ষণিক শিক্ষাগুরু। সারাজীবন আমি তাঁকেই অনুসরণ করার সর্বাত্মক প্রয়াস অক্ষুণ্ন রেখেছিলাম। প্রফেসর আনিসুর রহমান আদতে একজন ‘অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতি-দার্শনিক’, যাঁর তুল্য বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের মধ্যে আর কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাবে না। বক্ষ্যমাণ কলামে আমি আনিসুর রহমানের দর্শনকেই ফোকাস করতে চাই।

অধ্যাপক আনিসুর রহমান কখনোই ‘দরিদ্র’, ‘দারিদ্র্য নিরসন’ কথা দুটো ব্যবহার করতেন না। সমাজের প্রান্তিক অবস্থানের জনগণকে তিনি সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী নামে (ডিজঅ্যাডভান্টেজড পিপল) আখ্যায়িত করতেন। কারণ, তাঁর দার্শনিক অবস্থান ছিল– একটি দেশে বিদ্যমান ‘সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতির সিস্টেম’ সর্বক্ষণ দারিদ্র্য সৃষ্টি এবং পুনঃসৃষ্টি করে চলেছে। এই ‘সিস্টেম’ পরিবর্তন করাকে মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে মোকাবিলা না করলে শুধু ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ কিংবা ‘মাইক্রো-ক্রেডিট’ দিয়ে কখনোই টেকসইভাবে দারিদ্র্য মোকাবিলা করা যাবে না। ২০০৭ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘Poverty, Overcoming Poverty and Self-Realization’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি এর বিস্তারিত তুলে ধরেন। মানুষকে মাইক্রো-ক্রেডিট কিংবা এনজিও ঋণ-সহায়তার ‘টার্গেট’ হিসেবে বিবেচনা করে দারিদ্র্য নিরসন করতে চাইলে সেটা মনুষ্যত্বকে অপমান করার শামিল হবে। আনিসুর রহমান মনে করতেন, বিশ্বব্যাংক অনুসৃত মাথাপিছু জিডিপির মাধ্যমে কিংবা দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাপক দিয়ে দারিদ্র্য পরিমাপ করার মানে, মানুষকে গরু-ছাগলের পর্যায়ে নামিয়ে আনা। তিনি ‘দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনগোষ্ঠীর অনুপাত’কে বলতেন ‘লাইভস্টক কনসেপ্ট অব পভার্টি’। এ ধরনের কনসেপ্ট যে বাংলাদেশের জনগণকে অভূতপূর্ব নিষ্ঠুরতার সঙ্গে লুণ্ঠনের ব্যাপারটি শাসক মহল কর্তৃক লুকিয়ে ফেলার জন্য অপব্যবহার করা হয়েছে, পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের পর সে ব্যাপারটি এখন দিবালোকের মতো স্পষ্টভাবে উদ্ঘাটিত হয়ে চলেছে। গত সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয়ভাবে বাড়ছে মর্মে ‘ডেটা ডক্টরিং’-এর মাধ্যমে ম্যানুফ্যাকচার্ড (ভুয়া) পরিসংখ্যান প্রতিবছর সৃষ্টি করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে লুটেপুটে ছারখার করে দিয়েছেন। প্রফেসর আনিসুর রহমানের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে আমার রচিত ও ২০০৯ সালে রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিইব) কর্তৃক প্রকাশিত ‘দ্য পভার্টি ডিসকোর্স অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি অ্যাকশন রিসার্চ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাগ্রন্থের মূল বক্তব্য এ দৃষ্টিভঙ্গিকেই ধারণ করে রয়েছে।
প্রফেসর অমর্ত্য সেন এবং ড.

মাহবুবুল হকের মানব উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি মাথাপিছু জিডিপির সংকীর্ণ কনসেপ্ট থেকে দারিদ্র্য ডিসকোর্সকে কিছুটা মুক্ত করলেও আরও অনেক কিছু বিবেচনা থেকে এখনও বাদ রয়ে গেছে। উন্নয়নে অমর্ত্য সেনের ‘এনটাইটেলমেন্ট’ ও ‘ক্যাপাবিলিটি’ ধারণাগুলোকে আনিসুর রহমান সমর্থনযোগ্য মনে করলেও তিনি ওখানে থামতে নারাজ। তিনি উন্নয়নকে বিবেচনা করেন ‘মানুষের সৃজনশীল শক্তির স্বাধীনতা অর্জন’ (লিবারেশন অব পিপলস ক্রিয়েটিভ এনার্জি), যেখানে আত্মবিকাশের অদম্য ইচ্ছা (আর্জ ফর সেল্ফ রিয়ালাইজেশন) প্রধান নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। শুধু অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন করে এমন ইচ্ছাপূরণ সম্ভব না-ও হতে পারে। সমাজে বিদ্যমান বহু ধরনের বঞ্চনা ও গ্লানি নিরসন এহেন আত্মবিকাশের অংশ হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে একজন হরিজনের অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের চেয়ে সামাজিক সমমর্যাদা অর্জনের লড়াইয়ের অগ্রাধিকারকে উল্লেখ করা যায়। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র ও বাজারের তুলনামূলক ভূমিকা চয়নের পাশাপাশি কম্যুনিটি ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠীগত প্রয়াসকেও আনিসুর রহমান সমভাবে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। সারাবিশ্বে ‘পার্টিসিপেটরি অ্যাকশন রিসার্চ’-এর তিনজন আগুয়ান চিন্তানায়কের মধ্যে আনিসুর রহমান ছিলেন একজন; বাকি দু’জন ব্রিটেনের পিটার চ্যাম্বার্স এবং কলম্বিয়ার অরল্যান্ডো ফলস-বোর্দা। আনিসুর রহমান পার্টিসিপেটরি অ্যাকশন রিসার্চের বাংলা অনুবাদ করেছিলেন ‘গণগবেষণা’; যার মূল কথা হলো, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর নিজেদেরই গণগবেষণার মাধ্যমে তাদের বঞ্চনা ও সুবিধাহীনতার কারণ বের করতে হবে। সরকার কিংবা কোনো এনজিওর প্রতিনিধি তাদের প্রতিনিধি হয়ে এই বঞ্চনার কারণ উদ্ঘাটন করে দেবে না। বাইরের কেউ ভূমিকা রাখতে চাইলে সাময়িকভাবে শুধু ‘উদ্দীপক’ (অ্যানিমেটর) কিংবা ‘অসুবিধা-লাঘবকারী’র (ফ্যাসিলিটেটর) ভূমিকায় থাকতে পারে। সে জন্য তিনি পাড়ার সবাইকে মাসে অন্তত দু’বার উঠান বৈঠকে মিলিত হয়ে গণগবেষণার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যার কারণ বের করা এবং সম্ভাব্য সমাধান ঠিক করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন। পরবর্তী বৈঠকে প্রস্তাবিত পদক্ষেপের সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করে নতুন পথ নির্ধারণের কথা বলেছেন তিনি। এভাবে সুবিধাবঞ্চিত জনগণ নিজেরাই নিজেদের ‘কর্তা’ হয়ে বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে, তারা বাইরের কোনো এনজিও কিংবা সরকারের খয়রাতি সাহায্যের মুখাপেক্ষী ‘টার্গেট পপুলেশন’ হবে না। এই গণগবেষণার দর্শনকে মাঠ পর্যায়ে অনুশীলনের জন্যই তাঁর অনুগামীরা ‘রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস, বাংলাদেশ’ গড়ে তুলেছেন, যা দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

অধ্যাপক আনিসুর রহমান তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর কয়েক বছর নিজেকে অনেকখানি গুটিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭২-৭৩ পর্যায়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের সবচেয়ে প্রগতিশীল সদস্য হিসেবে সবার চেয়ে বেশি সমীহ আদায় করেছিলেন তিনি। ষাটের দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগামী তাত্ত্বিক হিসেবেও ছাত্রছাত্রী ও ওয়াকিবহাল মহলের শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের ‘টু ইকোনমি থিসিস’-এর অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাজউদ্দীন যখন ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ও প্রবাসী সরকার গঠন বিষয়ে আলোচনা চালিয়েছিলেন তখন আনিসুর রহমান এবং রেহমান সোবহান ছিলেন তাজউদ্দীনের ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা ও সহ-আলোচক। ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা কমিশন বাংলাদেশের যে ‘ভূমি সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন’ করেছিল, ওই প্রস্তাবের রচয়িতা ছিলেন আনিসুর রহমান। 

যখন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী তাজউদ্দীন বঙ্গবন্ধুর কাছে বিবেচনার জন্য ওই প্রস্তাবমালা পেশ করেছিলেন তখন শেখ মনি ও তোফায়েল আহমেদের মতো পুঁজিবাদ-ভক্তদের সমালোচনার কারণে ওই প্রস্তাবগুলো গ্রহণযোগ্য মনে করেননি বঙ্গবন্ধু। ১৯৯৩ সালে আনিস স্যার আমাকে ওই প্রস্তাবগুলোর সাইক্লোস্টাইল কপিটি দিয়ে ভূমি সংস্কার বিষয়ে একটি প্রবন্ধ রচনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। একটি দুর্ঘটনার কারণে আমি বিষয়টি যথেষ্ট গভীরভাবে গবেষণা করতে পারিনি, কিন্তু আমার প্রবন্ধে প্রস্তাবগুলো হুবহু অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমরা একটি অর্থবহ ভূমি সংস্কার আইন যে এখনও পাস করতে পারলাম না, সে ব্যর্থতার কাহিনি এখানেই পাওয়া যাবে। আমি প্রফেসর আনিসুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

ড. মইনুল ইসলাম: একুশে পদকপ্রাপ্ত
অর্থনীতিবিদ; সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ