তালা ভেঙে চেয়ারম্যানকে পরিষদে আনলেন নারীরা
Published: 13th, January 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের তালা ৯ দিন পর ভেঙে দিয়েছেন কয়েকশ নারী। গতকাল সোমবার সকালে তারা হাতুড়ি দিয়ে তালা ভাঙেন। পরে মিছিল নিয়ে ওই নারীরা যান ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বাড়িতে। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে আসেন পরিষদে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৪ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে যদুবয়রা ইউপি চত্বরে ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কেটে স্লোগান দেওয়া হয়। ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানার নেতৃত্বে এ কেক কাটা হয়। পরে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে রাত ৯টার দিকে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা দেন। পরদিন ইউপি কার্যালয় থেকে পরিষদের সচিব, গ্রাম পুলিশের সদস্য ও সেবাপ্রত্যাশীদের বের করে প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ৬ জানুয়ারি প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ফটকের তালা খুলে দেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। চেয়ারম্যানের কক্ষের তালা খোলা হয়নি। এ ঘটনা নিয়ে দৈনিক সমকালে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, পরিষদ চত্বরের ভেতর-বাইরে অবস্থান নিয়েছেন নানা বয়সী শত শত নারী। চেয়ারম্যানের কক্ষ পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন গ্রাম পুলিশের এক সদস্য। পরিষদের বারান্দায় বসে জন্মনিবন্ধনের সনদে সই করছেন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন নারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী এ সময় বলেন, মিথ্যা দোষে একটি পক্ষ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছিল। সে জন্য চেয়ারম্যানকে পথে-ঘাটে, বনে-বাগানে বসে মানুষের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে সই করতে হচ্ছিল। অনেকে পরিষদে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন। এতে জনগণকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। সে জন্য তারা হাতুড়ি দিয়ে কার্যালয়ের তালা ভেঙেছেন। পরে চেয়ারম্যানকে বাড়ি থেকে পরিষদে ডেকে এনেছেন।
যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ বলেন, পরিষদের বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া আছে। সরকারের কাছে তিনি সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক পদে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ষড়যন্ত্র করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা ছুটির রাতে পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের কেক কেটেছিল। সে জন্য বিএনপির লোকজন কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছিলেন। এতে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছিল। তাই সোমবার শত শত সেবাপ্রত্যাশী নারী তালা ভেঙে দেন। পরে তাঁকে বাড়ি থেকে পরিষদে নিয়ে এসেছেন।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
কয়েকশ নারী একসঙ্গে এসে কার্যালয়ের তালা ভাঙার সংবাদ পরিষদের সচিবের কাছ থেকে পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, পরিষদের ঘটনায় দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাসুমের বাম হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার আলামত থাকায় তার পরিবার অভিযোগ করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে কালনা মধুমতি সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর মাসুমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইজিবাইকের চালক সুজন শেখ তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।
আরো পড়ুন:
জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল
সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন
মাসুমের স্বজনরা জানিয়েছেন, শালনগর ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বিয়ের খবর পেয়ে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে তিনি ঢাকা থেকে লোহাগড়ায় আসেন। সকালে পরিবারের সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়, এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
মাসুম বিল্লাহর চাচা শরিফুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা শুনেছি, সকালে লোহাগড়া বাজারের একটি পার্লারে মেয়েটির সঙ্গে মাসুমের কথা হয়। এর পর মেয়েটির বাবার কাছ থেকে হুমকি পায় সে। পরে হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে মাসুমের মৃত্যুর খবর জানি। তার বাম হাতের নখ উপড়ানো ছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
মাসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া ইজিবাইক চালক সুজন বলেছেন, “ঘটনাস্থলে কোনো দুর্ঘটনার চিহ্ন ছিল না। তবে মনে হয়েছে, কেউ মাসুমকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।”
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম শনিবার (২ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”
ঢাকা/শরিফুল/রফিক