কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের তালা ৯ দিন পর ভেঙে দিয়েছেন কয়েকশ নারী। গতকাল সোমবার সকালে তারা হাতুড়ি দিয়ে তালা ভাঙেন। পরে মিছিল নিয়ে ওই নারীরা যান ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বাড়িতে। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে আসেন পরিষদে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৪ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে যদুবয়রা ইউপি চত্বরে ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কেটে স্লোগান দেওয়া হয়। ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানার নেতৃত্বে এ কেক কাটা হয়। পরে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে রাত ৯টার দিকে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা দেন। পরদিন ইউপি কার্যালয় থেকে পরিষদের সচিব, গ্রাম পুলিশের সদস্য ও সেবাপ্রত্যাশীদের বের করে প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ৬ জানুয়ারি প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ফটকের তালা খুলে দেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। চেয়ারম্যানের কক্ষের তালা খোলা হয়নি। এ ঘটনা নিয়ে দৈনিক সমকালে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, পরিষদ চত্বরের ভেতর-বাইরে অবস্থান নিয়েছেন নানা বয়সী শত শত নারী। চেয়ারম্যানের কক্ষ পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন গ্রাম পুলিশের এক সদস্য। পরিষদের বারান্দায় বসে জন্মনিবন্ধনের সনদে সই করছেন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন নারীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী এ সময় বলেন, মিথ্যা দোষে একটি পক্ষ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছিল। সে জন্য চেয়ারম্যানকে পথে-ঘাটে, বনে-বাগানে বসে মানুষের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে সই করতে হচ্ছিল। অনেকে পরিষদে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন। এতে জনগণকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। সে জন্য তারা হাতুড়ি দিয়ে কার্যালয়ের তালা ভেঙেছেন। পরে চেয়ারম্যানকে বাড়ি থেকে পরিষদে ডেকে এনেছেন।

যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ বলেন, পরিষদের বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া আছে। সরকারের কাছে তিনি সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক পদে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ষড়যন্ত্র করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা ছুটির রাতে পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের কেক কেটেছিল। সে জন্য বিএনপির লোকজন কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছিলেন। এতে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছিল। তাই সোমবার শত শত সেবাপ্রত্যাশী নারী তালা ভেঙে দেন। পরে তাঁকে বাড়ি থেকে পরিষদে নিয়ে এসেছেন। 
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

সোলায়মান শেখ বলেন, সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
কয়েকশ নারী একসঙ্গে এসে কার্যালয়ের তালা ভাঙার সংবাদ পরিষদের সচিবের কাছ থেকে পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, পরিষদের ঘটনায় দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ