বগুড়ার ধুনটে আদালতে করা নারী নির্যাতনের মামলা তুলে নিয়ে বাদীকে এক লাখ টাকায় আপোষ তালাকের পরামর্শ দিয়েছেন বগুড়ার ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ সাইদুল আলম। একই সাথে তিনি পারিবারিক বিরোধটি মীমাংসার জন্য বাদীর কাছে খরচাপাতিও চেয়েছেন। 

ভুক্তভোগী ধুনট উপজেলার বেলকুচি মধ্যপাড়া গ্রামের তাসলিমা খাতুন এমন অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ওসি সাইদুল আলম তাকে এমন পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

তাসলিমা খাতুন জানান, গত ১৩ বছর আগে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার স্থলবাড়ী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মনজুর আলমের সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসার তাওহীদ (৮) ও তানজীদ (৬) নামের দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। তার স্বামী মনজুর আলম পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকসহ বিভিন্ন কারণে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। 

নির্যাতনের মাত্রা বেশি হলে তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি বেলকুচি মধ্যপাড়া গ্রামে দুই ছেলে নিয়ে চলে যান। একসময় তাদের মধ্যে তালাক হয়ে যায়। পরবর্তীতে তার স্বামী ভুল স্বীকার করে ২২ আগস্ট ২০২২ তারিখে আড়াই লাখ টাকা দেনমোহরানা ধার্য্য করে পুনরায় বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। এরপর তিনি স্বামীর সাথে স্থলবাড়ীতে যান। সেখানে সংসার করতে থাকেন। 

এক পর্যায়ে আবারও তাকে যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া হয়। নির্যাতন করা হয়। তার দাবির প্রেক্ষিতে মোট দেড় লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়েছে। কিন্ত যৌতুকের আরো টাকার জন্য চাপ দেওয়ার এক পর্যায়ে তাসলিমাকে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মারধর করা হয়। পরে মোবাইল ফোনে তাসলিমার মাকে ডাকা হয় সেখানে। 

খবর পেয়ে তাসলিমার মা, খালা ও ছোট ভাই গেলে তার স্বামী মনজুর তাসলিমাসহ তার মা ও খালাকে মারপিট করেন। খবর পেয়ে বেলকুচি গ্রাম থেকে তাসলিমার বাবার বাড়ির লোকজন শ্বশরবাড়ীতে গিয়ে তাসলিমাকে ওই দিন সন্ধ্যায় নিয়ে যান। এরপর তিনি ২০২৪ সালের ২৩ মে বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। 

সেই মামলায় তার স্বামী মনজুর আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর তিনি আদালত থেকে জামিন নেন। অন্য দিকে মামলার পর থেকেই তার স্বামী তাকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন।

তাসলিমা খাতুন বলেন, “মামলার পর থেকেই দুই ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আছি। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ীর লোকজন বাবার বাড়িতে এসে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। আমার দুই ছেলেকেও নিয়ে যেতে চায়। বাধা দিলে আমাকে মারপিট করে। আমার চিৎকারে স্থানীয় এগিয়ে এলে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ীর লোকজন পালিয়ে যায়। সেসময় তারা যে সিএনজিতে করে এসেছিলো সেটি রেখে যায়। এরপর দিনই আমি ধুনট থানায় অভিযোগ দিতে যাই।”

তাসলিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, “থানায় গেলে থানা থেকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়। আর তাদের রেখে যাওয়া সিএনজি থানায় দিয়ে আসতে বলা হয়। আমরা তাই করি। কিন্তু আমার অভিযোগটি আমলে নেওয়া হয়নি। থানায় দিয়ে আসা সিএনজিও আমার স্বামীকে দিয়ে দিয়েছে। থানার ওসির কাছে এ বিষয়ে বলতে গেছি কয়েকদিন। গতকাল ১৩ জানুয়ারিও গিয়েছিলাম। ওসি সাহেব বলেন, মামলা তুলে নিতে আর এক লাখ টাকায় আপোষ তালাক দিতে। আর তিনি এই ব্যবস্থা করবেন বলে খরচাপাতি চেয়েছেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমার দেন মোহরানাই আছে আড়াই লাখ টাকা সেখানে আমি এক লাখ টাকায় তালাক আপোষ মানব কেন?” 

তিনি বলেন, “আমি চা বিক্রি করে কোনোমতে বাচ্চাদের নিয়ে সংসার চালাচ্ছি। ওসি সাহেবকে খরচা দেবো কোথা থেকে? এক লাখ টাকায় আপোষে রাজি না হওয়ায় এবং খরচা দিতে না চাওয়ায় ওসি সাহেব থানা থেকে আমাকে কোনো সহযোগিতা করা হবে না বলে জানিয়েছেন। আমাকে কোর্টে যেতে বলা হয়েছে।”

এ বিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, “এটি তাদের পারিবারিক সমস্যা। কোর্টে মামলা চলছে একটি। তাসলিমা তার স্বামীর কাছে মাসে ছয় হাজার টাকা করে খোরপোষ চান। তার স্বামী এক হাজার টাকার বেশি দেবে না। আমাদের কাছে এসেছিলো। আমরা বলেছি যেহেতু কোর্টে মামলা চলছে আমাদের বলার কিছু নেই। আপনারা আইনের আশ্রয় নেন।” 

‘অভিযোগ উঠেছে, আপনি নাকি মামলা তুলে নিতে এবং এক লাখ টাকায় আপোষ তালাকের পরামর্শ দিয়েছেন’ এমন প্রশেন তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমাদের সাথে এ বিষয়ে কোনো কথাই হয়নি। তারা স্থানীয়ভাবে দুই পক্ষের লোক নিয়ে বসেছিলেন। সেখানে কী হয়েছে আমি জানি না। আমি ওই দরবারে ছিলাম না। আমার সাথে এ ধরনের কথা হয়নি।” 

‘তারা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে, সেটা আমলে নিয়েছেন কিনা’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওটা দেখার জন্য এএসআই মিন্টুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/এনাম/এস

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার বিশ্বাসকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় ২৬ জুলাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল সোমবার বিকেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

সুব্রত কুমার বিশ্বাস পাবনার ঈশ্বরদী পৌর শহরের পোস্ট অফিসপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সান্ধ্যকালীন (ইভিনিং) স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রী যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। কিন্তু পরে বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে ছাত্রীটি ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিভাগের প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি ওই বছরের ৯ অক্টোবর শিক্ষক সুব্রতকে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর তদন্ত করে। তদন্তে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এরপর তদন্ত কমিটি তাঁকে স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে। এ সুপারিশের ভিত্তিতেই রিজেন্ট বোর্ড বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক সুব্রত কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম আবদুল আওয়াল প্রথম আলোকে বলেন, রিজেন্ট বোর্ডে একজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি আইন অনুযায়ীই হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হেনরির ৬ উইকেটের পর দুই ওপেনারে নিউজিল্যান্ডের দিন
  • অসুখবিসুখে কষ্ট পেয়ে, বিছানায় পড়ে বাঁচতে চাই না: ববিতা
  • নিশ্ছিদ্র দাপটে উরুগুয়েকে উড়িয়ে ফাইনালে ও অলিম্পিকে ব্রাজিল
  • যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা
  • প্রেমের টানে চীনা যুবকের বাংলাদেশে এসে বিয়ে
  • চার দিনের জ্বরে ভুগে মারা গেল কিশোর
  • নারী এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের ম্যাচ কবে, কোথায়
  • সাংলাং থেকে বেডং, সমুদ্র আমাদের সাথী  
  • আর রাহিকুল মাখতুম: এক আশ্চর্য সিরাতগ্রন্থ
  • ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার