মামলা তুলে নিয়ে ‘লাখ’ টাকায় আপোষ তালাকের পরামর্শ ওসির
Published: 14th, January 2025 GMT
বগুড়ার ধুনটে আদালতে করা নারী নির্যাতনের মামলা তুলে নিয়ে বাদীকে এক লাখ টাকায় আপোষ তালাকের পরামর্শ দিয়েছেন বগুড়ার ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ সাইদুল আলম। একই সাথে তিনি পারিবারিক বিরোধটি মীমাংসার জন্য বাদীর কাছে খরচাপাতিও চেয়েছেন।
ভুক্তভোগী ধুনট উপজেলার বেলকুচি মধ্যপাড়া গ্রামের তাসলিমা খাতুন এমন অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ওসি সাইদুল আলম তাকে এমন পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
তাসলিমা খাতুন জানান, গত ১৩ বছর আগে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার স্থলবাড়ী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মনজুর আলমের সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসার তাওহীদ (৮) ও তানজীদ (৬) নামের দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। তার স্বামী মনজুর আলম পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকসহ বিভিন্ন কারণে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছেন।
নির্যাতনের মাত্রা বেশি হলে তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি বেলকুচি মধ্যপাড়া গ্রামে দুই ছেলে নিয়ে চলে যান। একসময় তাদের মধ্যে তালাক হয়ে যায়। পরবর্তীতে তার স্বামী ভুল স্বীকার করে ২২ আগস্ট ২০২২ তারিখে আড়াই লাখ টাকা দেনমোহরানা ধার্য্য করে পুনরায় বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। এরপর তিনি স্বামীর সাথে স্থলবাড়ীতে যান। সেখানে সংসার করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে আবারও তাকে যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া হয়। নির্যাতন করা হয়। তার দাবির প্রেক্ষিতে মোট দেড় লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়েছে। কিন্ত যৌতুকের আরো টাকার জন্য চাপ দেওয়ার এক পর্যায়ে তাসলিমাকে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মারধর করা হয়। পরে মোবাইল ফোনে তাসলিমার মাকে ডাকা হয় সেখানে।
খবর পেয়ে তাসলিমার মা, খালা ও ছোট ভাই গেলে তার স্বামী মনজুর তাসলিমাসহ তার মা ও খালাকে মারপিট করেন। খবর পেয়ে বেলকুচি গ্রাম থেকে তাসলিমার বাবার বাড়ির লোকজন শ্বশরবাড়ীতে গিয়ে তাসলিমাকে ওই দিন সন্ধ্যায় নিয়ে যান। এরপর তিনি ২০২৪ সালের ২৩ মে বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।
সেই মামলায় তার স্বামী মনজুর আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর তিনি আদালত থেকে জামিন নেন। অন্য দিকে মামলার পর থেকেই তার স্বামী তাকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন।
তাসলিমা খাতুন বলেন, “মামলার পর থেকেই দুই ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আছি। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ীর লোকজন বাবার বাড়িতে এসে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। আমার দুই ছেলেকেও নিয়ে যেতে চায়। বাধা দিলে আমাকে মারপিট করে। আমার চিৎকারে স্থানীয় এগিয়ে এলে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ীর লোকজন পালিয়ে যায়। সেসময় তারা যে সিএনজিতে করে এসেছিলো সেটি রেখে যায়। এরপর দিনই আমি ধুনট থানায় অভিযোগ দিতে যাই।”
তাসলিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, “থানায় গেলে থানা থেকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়। আর তাদের রেখে যাওয়া সিএনজি থানায় দিয়ে আসতে বলা হয়। আমরা তাই করি। কিন্তু আমার অভিযোগটি আমলে নেওয়া হয়নি। থানায় দিয়ে আসা সিএনজিও আমার স্বামীকে দিয়ে দিয়েছে। থানার ওসির কাছে এ বিষয়ে বলতে গেছি কয়েকদিন। গতকাল ১৩ জানুয়ারিও গিয়েছিলাম। ওসি সাহেব বলেন, মামলা তুলে নিতে আর এক লাখ টাকায় আপোষ তালাক দিতে। আর তিনি এই ব্যবস্থা করবেন বলে খরচাপাতি চেয়েছেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমার দেন মোহরানাই আছে আড়াই লাখ টাকা সেখানে আমি এক লাখ টাকায় তালাক আপোষ মানব কেন?”
তিনি বলেন, “আমি চা বিক্রি করে কোনোমতে বাচ্চাদের নিয়ে সংসার চালাচ্ছি। ওসি সাহেবকে খরচা দেবো কোথা থেকে? এক লাখ টাকায় আপোষে রাজি না হওয়ায় এবং খরচা দিতে না চাওয়ায় ওসি সাহেব থানা থেকে আমাকে কোনো সহযোগিতা করা হবে না বলে জানিয়েছেন। আমাকে কোর্টে যেতে বলা হয়েছে।”
এ বিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, “এটি তাদের পারিবারিক সমস্যা। কোর্টে মামলা চলছে একটি। তাসলিমা তার স্বামীর কাছে মাসে ছয় হাজার টাকা করে খোরপোষ চান। তার স্বামী এক হাজার টাকার বেশি দেবে না। আমাদের কাছে এসেছিলো। আমরা বলেছি যেহেতু কোর্টে মামলা চলছে আমাদের বলার কিছু নেই। আপনারা আইনের আশ্রয় নেন।”
‘অভিযোগ উঠেছে, আপনি নাকি মামলা তুলে নিতে এবং এক লাখ টাকায় আপোষ তালাকের পরামর্শ দিয়েছেন’ এমন প্রশেন তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমাদের সাথে এ বিষয়ে কোনো কথাই হয়নি। তারা স্থানীয়ভাবে দুই পক্ষের লোক নিয়ে বসেছিলেন। সেখানে কী হয়েছে আমি জানি না। আমি ওই দরবারে ছিলাম না। আমার সাথে এ ধরনের কথা হয়নি।”
‘তারা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে, সেটা আমলে নিয়েছেন কিনা’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওটা দেখার জন্য এএসআই মিন্টুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/এনাম/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।