প্রতিবেদন থেকে অভ্যুত্থানের সনদ, এর ভিত্তিতে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 16th, January 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে গণঅভ্যুত্থানের চার্টার (সনদ)। সেই চার্টারের ভিত্তিতে পরবর্তী নির্বাচন হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সংস্কার কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আজকের ঘটনা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই কমিশনগুলোর সৃষ্টি। একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরুত্থান হয়েছে। আমরা সেই ইতিহাসকে ধারণ করতে পারছি কিনা এবং সেটা সামনে নিয়ে যেতে পারছি কিনা। ইতিহাসের যে অঙ্গীকার ছিল, সেই অঙ্গীকার আমরা পূরণ করতে পারছি কিনা– সেটাই প্রশ্ন। আমাদের আত্মবিশ্বাস, আমরা পারব।’
তিনি বলেন, ‘আজ যে প্রতিবেদনগুলো আমরা হাতে নিলাম, নিশ্চিতভাবেই দেশের জন্য এটা একটা বড় ইন্টেলেকচুয়াল এক্সারসাইজ। কেউ এটাকে অস্বীকার করবে না। তবে আজকের গুরুত্বটা ইন্টেলেকচুয়াল এক্সিলেন্সের জন্য না। আমরা মানুষের মনোভাবকে, মানুষের স্বপ্নকে এর মধ্যে ধারণ করতে পারছি কিনা সেটাই মূল প্রশ্ন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটার মাধ্যমে আমরা আলোচনা শুরু করব সবার সঙ্গে, সবার মন সায় দিচ্ছে কিনা। অধিকারগুলো পূরণ হচ্ছে কিনা। আলোচনার পরবর্তী অধ্যায়ে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা হবে। এতে গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে। সেই চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে হবে। নির্বাচন হবে, সব কিছু হবে। এই চার্টার থেকে যাবে। ইতিহাসের অংশ হিসেবে এটা আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট, দলীয় কমিটমেন্ট না। আমরা আশা করছি, সব দল এই চার্টারে সই করবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা বাঙালির একটা সনদ, যে সনদ আমরা বুকে নিয়ে অগ্রসর হবো। যত তাড়াতাড়ি পারি, যত বেশি পরিমাণে এটা বাস্তবায়ন করতে পারি, বাস্তবায়ন করতে থাকব। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে সেটা এই চার্টারের ভিত্তিতে, সেটাও যেন ঐকমত্যের সরকার হয়– যে চার্টারকে আমরা ধরে রেখেছি, যত কিছুই হোক, এটা যেন আমরা হাত থেকে ছেড়ে না দেই।’
ড.
এদিকে প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর এর সারসংক্ষেপ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কমিশন প্রধান ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিং করেন তিন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনগুলোর দেওয়া প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে যাবে সরকার। এর বাস্তবায়ন নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর।
আইন উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঠিক করা হবে ন্যূনতম সংস্কার, নাকি প্রত্যাশিত মাত্রায় বিস্তৃত সংস্কার করা হবে। আর ন্যূনতম সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হলে তখন কোন কোন সুপারিশ প্রাধান্য পাবে, তা চিহ্নিত করা হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেসব সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হবে সেগুলো বাস্তবায়নের দিকে যাবে। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা যেন বাস্তবায়ন হয় সেদিকে সব অংশীজন গুরুত্ব দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রতিটি কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেছে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনগুলো ৩১ জানুয়ারির মধ্যে পাওয়া যাবে।
স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা চিরতরে বিলুপ্তি করা জুলাই বিপ্লবের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। আশা করি, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল তা বাস্তবায়ন হবে।
ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই ট্রায়াল কোর্ট তথা বিচারিক আদালতে এই বিচারকাজ শেষ করা সম্ভব। আমাদের আশা আছে, নির্বাচনের আগে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে পারব। বাংলাদেশে যে নির্মম গণহত্যা চলেছে, অব্যশই এর বিচার করা হবে। যে গতিতে মামলার তদন্ত কাজ চলছে তাতে আগামী মার্চে শুনানি শুরু হবে বলে আশা করছি।
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে চারটি গতকাল তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অন্য দুটি কমিশনের জন্য আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঐকমত য র ন করত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ৭ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ
পঞ্চগড় সদর উপজেলার একটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৭ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তাদেরকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিন সকালে উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের গোলাবাড়ি এলাকার সীমান্ত পিলার ৭৪৩ এর ১ নম্বর সাব পিলার সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করে বিজিবির টহল দল। এই সীমান্ত এলাকাটি নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটলিয়নের আওতাধীন।
জানা গেছে, শুক্রবার ভোর রাতে তাদেরকে পুশ-ইন করে ভারতের বালাচান ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা। আটক ৭ জনই বাংলাদেশের নাগরিক। এদের মধ্যে ২ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও ২ জন শিশু রয়েছে। তাদেরকে সদর থানায় হস্তান্তরের আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- নড়াইলের কালিয়া উপজেলার জামরিল গ্রামের আফসার শেখের ছেলে অরিফুল ইসলাম (৩১), আরিফুল শেখের ছেলে ইমরান (১১) ও রায়হান শেখ (৭), একই গ্রামের মজিবুর রহমান মোল্লার মেয়ে রহিমা বেগম (৩০), সিদ্দিক মোল্লার মেয়ে খাদিজা বেগম (৩৬), একই উপজেলার বিস্টুপুর এলাকার আইনাল বিশ্বাসের ছেলে আল মামুন বিশ্বাস (৩০) এবং যশোরের অভয়নগর উপজেলার জয়েরা এলাকার তাহাজ্জুত খানের মেয়ে নাজমিন আক্তার (৪০)।
বিজিবি জানায়, আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন যাবত ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে অবস্থান করে কাজ করছিলো তারা। সম্প্রতি তাদেরকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। পরবর্তীতে বালাচান বিএসএফ ক্যাম্প কর্তৃক তাদেরকে গেইট দিয়ে বের করে বাংলাদেশে পুশ-ইন করে। ঘটনার পরপরই বিজিবির টহল দল অভিযান ৭ বাংলাদেশিকে আটক করে। তাদেকে পঞ্চগড় সদর থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ বদরুদ্দোজা বলেন, আমাদের টহল দল সীমান্ত এলাকা থেকে পুশ-ইনকৃত ৭ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে। তাদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া শেষে থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান জানান, বিজিবি তাদের থানায় হস্তান্তর করলে আমরা পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ঢাকা/নাঈম/টিপু