চট্টগ্রামে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গণহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের তথ্য সংগ্রহ করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার নগরীর দামপাড়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদরদপ্তরে সাক্ষ্যগ্রহণ করেন তারা। দুই দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত অন্তত ৮০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এর মধ্যে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সাতজনও ঘটনার বর্ণনা দেন।

সাক্ষ্যগ্রহণ ছাড়াও গতকাল বিকেলে নগরীর বিভিন্ন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তদন্ত সংস্থার প্রসিকিউটররা। তাদের সহযোগিতা করেছেন ছাত্র প্রতিনিধিরা।        
বুধবার রাতে সিএমপি সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, ‘হত্যা, গুরুতর জখম, নৃশংসতা, নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম এ ধরনের বিষয়গুলোর দেশব্যাপী কিছু সুনির্দিষ্ট ঘটনা আমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করব। কারও থেকে একটা সুপ্রিম কমান্ড এসেছে, বাকিরা সিস্টেমেটিক্যালি বিস্তৃতভাবে পালন করেছে।’

ছাত্র আন্দোলনে কারা গুলি চালিয়েছে জানতে চাইলে সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, ‘ঘটনাগুলো অনেক স্থানে সংঘটিত হয়েছে। সাক্ষীদের কেউ কেউ পুলিশ বাহিনীর কথা বলেছেন। কেউ আবার যুবলীগ-ছাত্রলীগের নাম উল্লেখ করেছেন। আমরা সবগুলো বিষয় যাচাই-বাছাই করছি।’  

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে একজন ব্যক্তি অভিযোগকারী। তাঁর পক্ষে রাষ্ট্রের হয়ে মামলা লড়বে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। এখানে টাকা-পয়সার কোনো বিষয় নেই। সম্পূর্ণ বিনা খরচে। রাষ্ট্রের দায় হলো, একটা মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, এটার বিচার নিশ্চিত করা। ট্রাইব্যুনালে মামলা যেগুলো চলমান সেগুলোর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাণিজ্য বা বাধা প্রতিবন্ধকতা নেই। সরকার ও বিভিন্ন বাহিনী সহযোগিতা করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাক্ষীদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত, ছবি, অডিও-ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদি অপরাধ প্রমাণের জন্য ব্যবহার করতে সংগ্রহ করছে তদন্ত সংস্থা।

তদন্ত সংস্থাকে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সহযোগিতা করছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য জুবাইরুল হাসান আরিফ। তিনি জানান, দুই দিনে অন্তত ৮০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন প্রসিকিউটররা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার স্থান মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, নিউমার্কেট, কর্ণফুলী সেতু চত্বর ও চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা পরিদর্শন করেছেন তারা। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তদন ত তদন ত স স থ অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
  • হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ