বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে পাশে থাকবে জার্মান: ওলাফ শলৎজ
Published: 21st, January 2025 GMT
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, তার সরকার বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণে সহায়তা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনের সাইড লাইনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জার্মান চ্যান্সেলর এ কথা বলেন।
ড.
প্রধান উপদেষ্টা জানান, ছয়টি কমিশনের পেশ করা বড় ধরনের সংস্কার প্রতিবেদনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি একটি যৌথ কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের গণতান্ত্রিক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে একটি সনদে সই করবে।
দুই নেতা জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পরিস্থিতি, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে চলা দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে তরুণরা কীভাবে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে যোগ দিয়েছে তা জার্মান চ্যান্সেলরের কাছে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা চ্যান্সেলরকে বলেন, ‘১২ বছর বয়সী এক ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে যোগ দেওয়ার আগে তার মাকে একটি চিঠি লিখেছিল এবং শাহাদাত বরণ করেছিল।’
প্রফেসর ইউনূস দুই দেশের মধ্যে বৃহত্তর বাণিজ্যিক সংযোগের আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ অনুসন্ধানে জার্মান ব্যবসায়ীদের একটি দল ঢাকায় পাঠানোর আহ্বান জানান।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে আরও জার্মান বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনও সার্কের ধারণা ধারণ করে এবং প্ল্যাটফর্মটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।’
তিনি জার্মান চ্যান্সেলরকে জানান, নেপালের জলবিদ্যুৎ কীভাবে দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশকে উপকৃত করতে পারে, যা তাদের নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরে সবাইকে সহায়তা করতে পারে।
ড. ইউনূস জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরিতে শলৎসের সহযোগিতা কামনা করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।
শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।”
ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।
গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ