ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের (আমদানি ও রপ্তানি পণ্য রাখার জায়গা) ভয়াবহ আগুন সামগ্রিকভাবে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ত্রুটি ও দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে ঢাকার মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড ও বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র বা অন্তর্ঘাত আছে কি না, তা নিয়ে ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের যে উদ্বেগ ও প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে গত শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে আগুন লাগে। এ অগ্নিকাণ্ডের কারণে প্রায় সাত ঘণ্টা বন্ধ থাকে বিমানবন্দরটি। ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস, বিমানবন্দরের নিজস্ব ফায়ার ইউনিট, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা অংশ নেয়। আগুন নেভাতে গিয়ে বিমানবন্দরের আনসার বাহিনীর ২৫ সদস্য আহত হন। নিরাপত্তার কারণে ২৩টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট দেশের অন্য বিমানবন্দরসহ ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় শত শত যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন।

কার্গো ভিলেজের এ অগ্নিকাণ্ড নিশ্চিত করেই আমাদের জন্য সতর্ক হওয়ার একটি সংকেতবার্তা। এটা ঠিক যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ক্যাটাগরি-৯ পর্যায়ের, অর্থাৎ বিমানবন্দরে আগুন নেভানোর জন্য তিনটি ফায়ার ইউনিট রয়েছে। কিন্তু সেখানে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থায় যে গলদ আছে, সেটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাবেক পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.

) এম কে জাকির হাসানের বক্তব্য থেকে পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত অভিমতে তিনি জানিয়েছেন, কার্গো ভিলেজে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার হাইড্রেন্টসহ আরও কিছু সরঞ্জামের প্রয়োজন ছিল।

আমরা মনে করি, কার্গো ভিলেজের এ অগ্নিকাণ্ড থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও সরকারের শিক্ষা নেওয়ার আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাইরের বিশ্বের সংযুক্তির প্রধান এই বিমানবন্দরের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থাসহ ও অন্যান্য নিরাপত্তাব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করার এবং গলদগুলো শনাক্ত করে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। এ অগ্নিকাণ্ডের কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আসা বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে গেছে। কয়েক দফা পেছানোর পরও দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়নি। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে যাওয়ায় নতুন কোনো অনিশ্চয়তা যেন না তৈরি হয়, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।

অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, দ্রুত তা নির্ধারণ করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি অগ্নিকাণ্ডের কারণে যে আস্থার সংকট তৈরি হলো, তা কাটিয়ে উঠতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও দায়দায়িত্ব নির্ধারণে অন্তর্বর্তী সরকার ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। আমরা আশা করি, তদন্ত কমিটির তদন্তে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড না ঘটে, তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়াটাই সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য।

নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, এটা কেবল দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে, সেটি সরকারকে দ্রুত তদন্ত করে বের করতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে পরপর তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জনমনে এ প্রশ্ন প্রবলভাবে এসেছে। বর্ষা মৌসুম কেবল শেষ হয়েছে, এখনকার নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া অগ্নিকাণ্ডের জন্য অতটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেলে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনও বলেছেন, নাশকতাসহ সবকিছু আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করা হবে। আমরা মনে করি, বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সরকারকে অবশ্যই সেটি নিরসন করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আগ ন ন ভ শ হজ ল ল র জন য তদন ত র ঘটন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে সামরিক শক্তি বাড়ানোর ঘোষণা ট্রাম্পের

তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাঁর মিত্রদের সামরিক শক্তি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসনের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রে এ বিষয়টি উঠে এসেছে।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল কূটনৈতিক ইস্যুগুলোর একটি তাইওয়ান। শুক্রবার প্রকাশিত ট্রাম্প প্রশাসনের ওই নথিতে এ ইস্যু নিয়ে ওয়াশিংটন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করল।

এমন সময় নথিটি প্রকাশ করা হলো, যখন পূর্ব এশিয়ার জলসীমায় নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক শক্তি প্রদর্শন করেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে দেশটি মূলত গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ান ও জাপানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।

নথিতে বলা হয়েছে, ‘সামরিক প্রাধান্য বজায় রেখে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট যেকোনো সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানোই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।’

চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। দ্বীপটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে শক্তি ব্যবহার করার কথা কখনোই অস্বীকার করেনি দেশটি। দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরো এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চীন। এ নিয়ে আশপাশের ছোট ছোট দেশগুলোর সঙ্গে তাদের বিরোধ দীর্ঘদিনের।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রই দ্বীপটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমর্থক। মার্কিন আইনে তাইওয়ানকে আত্মরক্ষায় সহায়তা দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। এ ইস্যুই বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের একটি বড় অস্বস্তির জায়গা।

চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। দ্বীপটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে শক্তি ব্যবহার করার কথা কখনোই অস্বীকার করেনি দেশটি।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রণীত ২০১৭ সালের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রের একটি বাক্যে তাইওয়ানের কথা তিনবার উল্লেখ করা হয়েছিল। আর নতুন কৌশলপত্রে তিনটি অনুচ্ছেদজুড়ে আটবার তাইওয়ানের উল্লেখ আছে। নথিতে বলা হয়েছে, ‘তাইওয়ানকে ঘিরে এত মনোযোগ থাকা স্বাভাবিক।’ বাণিজ্যসমৃদ্ধ জলপথে এর কৌশলগত অবস্থান এবং বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে দ্বীপটির আধিপত্যই এই মনোযোগের প্রধান কারণ।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, জাপান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত দ্বীপমালায় যুক্তরাষ্ট্র এমন সামরিক সক্ষমতা গড়ে তুলবে, যা যেকোনো আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে পারবে। তবে এককভাবে সবকিছু করা সম্ভব নয়। এ জন্য মিত্রদের এগিয়ে আসতে হবে, ব্যয় বাড়াতে হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— সমষ্টিগত প্রতিরক্ষার জন্য আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে।

তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা বাড়লে ট্রাম্প কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সে বিষয়ে তিনি এখনো পর্যন্ত কিছুই বলেননি। অবশ্য তাঁর আগের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বারবার বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবে।

আগামী বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প বেইজিং সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সেখানে দুই দেশের নেতারা তাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক লড়াই প্রশমিত করার ব্যাপারে আলোচনা করবেন।

চুক্তি করার প্রবণতা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা— এসব কারণে টোকিও থেকে ম্যানিলা পর্যন্ত অনেক দেশে শঙ্কা বাড়ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাইওয়ান ও আঞ্চলিক মিত্রদের প্রতি সমর্থন কমাবে।

আগামী বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প বেইজিং সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সেখানে দুই দেশের নেতারা তাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক লড়াই প্রশমিত করার ব্যাপারে আলোচনা করবেন।

গত মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি পার্লামেন্টে বলেন, তাইওয়ানে চীনের কোনো হামলা যদি জাপানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে, তবে জাপান সামরিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। এতে বেইজিং তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ