দুর্ঘটনা না নাশকতা—দ্রুত উদ্ঘাটন করতে হবে
Published: 20th, October 2025 GMT
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের (আমদানি ও রপ্তানি পণ্য রাখার জায়গা) ভয়াবহ আগুন সামগ্রিকভাবে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ত্রুটি ও দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে ঢাকার মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড ও বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র বা অন্তর্ঘাত আছে কি না, তা নিয়ে ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের যে উদ্বেগ ও প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে গত শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে আগুন লাগে। এ অগ্নিকাণ্ডের কারণে প্রায় সাত ঘণ্টা বন্ধ থাকে বিমানবন্দরটি। ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস, বিমানবন্দরের নিজস্ব ফায়ার ইউনিট, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা অংশ নেয়। আগুন নেভাতে গিয়ে বিমানবন্দরের আনসার বাহিনীর ২৫ সদস্য আহত হন। নিরাপত্তার কারণে ২৩টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট দেশের অন্য বিমানবন্দরসহ ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় শত শত যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন।
কার্গো ভিলেজের এ অগ্নিকাণ্ড নিশ্চিত করেই আমাদের জন্য সতর্ক হওয়ার একটি সংকেতবার্তা। এটা ঠিক যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ক্যাটাগরি-৯ পর্যায়ের, অর্থাৎ বিমানবন্দরে আগুন নেভানোর জন্য তিনটি ফায়ার ইউনিট রয়েছে। কিন্তু সেখানে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থায় যে গলদ আছে, সেটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাবেক পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.
আমরা মনে করি, কার্গো ভিলেজের এ অগ্নিকাণ্ড থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও সরকারের শিক্ষা নেওয়ার আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাইরের বিশ্বের সংযুক্তির প্রধান এই বিমানবন্দরের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থাসহ ও অন্যান্য নিরাপত্তাব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করার এবং গলদগুলো শনাক্ত করে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। এ অগ্নিকাণ্ডের কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আসা বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে গেছে। কয়েক দফা পেছানোর পরও দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়নি। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে যাওয়ায় নতুন কোনো অনিশ্চয়তা যেন না তৈরি হয়, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, দ্রুত তা নির্ধারণ করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি অগ্নিকাণ্ডের কারণে যে আস্থার সংকট তৈরি হলো, তা কাটিয়ে উঠতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও দায়দায়িত্ব নির্ধারণে অন্তর্বর্তী সরকার ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। আমরা আশা করি, তদন্ত কমিটির তদন্তে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড না ঘটে, তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়াটাই সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য।
নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, এটা কেবল দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে, সেটি সরকারকে দ্রুত তদন্ত করে বের করতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে পরপর তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জনমনে এ প্রশ্ন প্রবলভাবে এসেছে। বর্ষা মৌসুম কেবল শেষ হয়েছে, এখনকার নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া অগ্নিকাণ্ডের জন্য অতটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেলে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনও বলেছেন, নাশকতাসহ সবকিছু আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করা হবে। আমরা মনে করি, বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সরকারকে অবশ্যই সেটি নিরসন করতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আগ ন ন ভ শ হজ ল ল র জন য তদন ত র ঘটন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিমানবন্দরের আগুন নেভাতে গিয়ে আহত ১৪ জন সিএমএইচে
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন নেভাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৪ সদস্যকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বিমানবন্দরে আগুনে এখন পর্যন্ত বিমানবাহিনীর একজন, ফায়ার সার্ভিসের তিনজন, পুলিশের একজন, আনসারের ১০ জন সদস্য সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।
আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আইএসপিআর জানায়, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে।
আইএসপিআর আরো জানায়, গতকাল আনুমানিক দুপুর আড়াইটায় হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটে। মুহূর্তে আগুন বিকট আকার ধারণ করলে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সহ সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে অগ্নিনির্বাপন এবং উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া, আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
কার্গো ভিলেজে রক্ষিত দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ আগুনের মাত্রা কে তীব্রতর করে দেয়। অগ্নি নির্বাপনকালে রাসায়নিক পদার্থের ধোঁয়া ও আগুনের তীব্রতায় ১০ জন আনসার সদস্য, ৩ জন ফায়ার ফাইটার এবং ১ জন পুলিশ সদস্য প্রবল শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সিএমএইচ ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। যেকোনো দুর্যোগে জনগণের পাশে থেকে সহায়তা প্রদান করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা