প্রতিষ্ঠানটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন
Published: 20th, October 2025 GMT
দিনাজপুর শহরের গুঞ্জাবাড়ি এলাকার দিনাজপুর বধির ইনস্টিটিউটের বাস্তবতা একই সঙ্গে অনুপ্রেরণা এবং হতাশা তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক রাবেয়া খাতুন ৩৫ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানের আবাসিক শিক্ষার্থীদের খাওয়াদাওয়া, গোসল, পড়ালেখা, ঘুম—সবকিছু্ই দেখভাল করছেন। কিন্তু এর বিনিময়ে সরকারি কোনো বেতন পান না। শুধু তিনি নন, অন্য শিক্ষকদেরও একই অবস্থা। এটি রাষ্ট্রীয় অবহেলার নমুনা ছাড়া আর কী হতে পারে?
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দিনাজপুর বধির ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হয়েছিল স্থানীয় মানুষের উদ্যোগ ও বদান্যতায়। ১৯৮৯ সালে শুরু করে স্থানীয় দান ও তৎকালীন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠানটি একসময় পাঁচতলা ভবন, স্কুল ভ্যান সার্ভিস, কম্পিউটার শিক্ষা ও সেলাই প্রশিক্ষণের মতো কার্যক্রম নিয়ে উত্তরাঞ্চলের বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের আশা ও ভরসার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।
বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অবস্থা খুবই শোচনীয়। ভবনের দরজা ভাঙা, কক্ষগুলো জরাজীর্ণ, দ্বিতীয় তলার কক্ষে ১০টি কম্পিউটার ও কারিগরি যন্ত্রপাতি পরিত্যক্ত, ডাইনিংরুম স্যাঁতসেঁতে। শিক্ষকতা করার ১৮ থেকে ৩৫ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষকেরা বেতন পাচ্ছেন না। এই বেতনহীনতা, দক্ষ শিক্ষকের অভাব এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে প্রতিষ্ঠানটি তার কার্যকারিতা হারিয়েছে। ফলে এক-তৃতীয়াংশ শিশু স্কুলে আসা বন্ধ করেছে। ইনস্টিটিউটের এমন করুণ বাস্তবতার সরাসরি ফল ভোগ করছে শিশুরা। অনেকে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে পরিবারের বোঝা হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
শিক্ষক রাবেয়া খাতুনের নিজেরও দুই সন্তান বাক্প্রতিবন্ধী। স্থানীয় মানুষের অনুদানের টাকা থেকে প্রতি মাসে ভাতা পান মাত্র ৬০০ টাকা। প্রধান শিক্ষক নাজনীন আক্তার, রাবেয়া খাতুনসহ অন্য শিক্ষকেরা আসলে ‘মায়ার বাঁধনে’ প্রতিষ্ঠানটিতে থেকে গেছেন। তাঁদের ভাষ্য, ‘আবাসিকে ছেলেমেয়েসহ ২৪ জন শিক্ষার্থী আছে। ওরা কথা বলতে পারে না, কানেও শোনে না। ওদের রেখে কই যাব? মায়ায় আটকে আছি ৩৫টা বছর। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওদের পাশে থাকতে চাই।’
জেলা প্রশাসন থেকে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করা হয়েছে এবং এটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের অনুদানের টাকা থেকে ভাতা দেওয়া এবং আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে মাসিক দুই হাজার টাকা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা আশা করব, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের সরকারি বেতনকাঠামোও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বছরের পর বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি ও এর শিক্ষার্থীদের আগলে রেখে তাঁরা যে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, এর জন্য তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এসব শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানটিকে মূল্যায়ন করা। বধিরদের এই প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি দিতে যাওয়ার পথে ছুরিকাঘাতে ছাত্রের মৃত্যু
গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীতে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক তরুণ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে হোসেন মার্কেট এলাকায় আউচপাড়ার সাহাজ উদ্দিন সরকার রোডের গলিতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত তরুণের নাম জাহিদুল আহসান (২১)। তিনি টঙ্গীর আউচপাড়া মোল্লা বাজার এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিকের রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং (আরএসি) বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে আটক ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গতকাল মাগরিবের নামাজের পর মায়ের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে বের হন জাহিদুল। দুই বন্ধু রহমান ও আরিফ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা দেওয়ার জন্য কলেজ রোডের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে আউচপাড়ার সাহাজ উদ্দিন সরকার রোডের গলিতে চার থেকে পাঁচজন তাঁদের গতি রোধ করে। এ সময় রহমান ও আরিফ হোসেন দৌড়ে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলে জাহিদুলকে একা পেয়ে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা।
আহত অবস্থায় জাহিদুল ছিনতাইকারীদের ধাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ফুটপাতে পড়ে যান। আশপাশের লোকজন বিষয়টি দেখতে পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে জাহিদুলের মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে এরশাদনগর এলাকা থেকে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-অর রশিদ বলেন, ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করা হয়েছে। অন্য আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মামলা হবে।