চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিডিএসের লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই গত কয়েক বছর ধরে দাঁতের চিকিৎসা দিচ্ছেন এস.এম শাখাওয়াত আলী নামে এক চিকিৎসক বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট তার বিডিএস ল্যাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর চার বছর পাঁচ মাস হয়ে গেলেও তিনি লাইসেন্স নবায়ন করেননি।

অভিযুক্ত ডা. এস.এম শাখাওয়াত আলীর চেম্বার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার পিটিআই-বালুবাগান মহল্লার কাছে। তার চেম্বারের নাম শাখাওয়াত ডেন্টাল কেয়ার। তিনি এখানে দাঁতের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করেন। বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের লাইসেন্স নম্বর-৬৪৩০।

সম্প্রতি ডা.

এস.এম শাখাওয়াতের চেম্বারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা সুরাইয়া জাহান নামে এক নারী দাঁতের চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিপাক পড়েন। এর জেরে গত মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে ওই রোগীর স্বজনরা শাখাওয়াত ডেন্টল কেয়ারে অবস্থান নেন। তারপর থেকেই ডা. এস.এম শাখাওয়াতের বিডিএস লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

আরো পড়ুন:

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হামলায় পাবনায় ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহত

মাদারীপুরে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যকে গণপিটুনি 

ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, গত এক বছর ধরে শাখাওয়াত ডেন্টাল কেয়ারে দাঁতের চিকিৎসা নিয়েছেন সুরাইয়া জাহান। কোনো ধরনের চিকিৎসাপত্র ও এক্স-রে ছাড়াই দাঁত সোজা করছিলেন ডা. এস.এম শাখাওয়াত। তার ভুল চিকিৎসার কারণে সুরাইয়া জাহানের সমস্যা ভালো হওয়াতো দূরের কথা উল্টো তার দাঁতের চোয়ালে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে তারা ওই ক্লিনিকে গিয়ে অবস্থান নেন।

ঘটনার দিন রাতেই ডা. এস.এম শাখাওয়াতের পক্ষের লোকজন বিষয়টি নিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দেন। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা শুরুতে রাজি না হলেও পরে রাজি হন। পরদিন বুধবার দুই পক্ষের মীমাংসায় বসার কথা থাকলেও কোনো বৈঠক হয়নি। ভুক্তভোগী সুরাইয়া জাহান এখন অন্য ক্লিনিকে দাঁতের চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ভুক্তভোগীর দেবর ওমর খৈয়াম শিমুল বলেন, “আমাদের মীমাংসার জন্য বলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা বসেননি। গত এক বছর ডা. এস এম শাখাওয়াতের কাছে চিকিৎসা নিয়ে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি বেশি।” 

ভুক্তভোগী সুরাইয়া জাহান বলেন, “আমার সামনের দিকের দুটো দাঁতের মাঝে ফাঁকা অংশ ছিল। সেটি ঠিক করাতে আমি ডা. এস.এম শাখাওয়া আলীর চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নেই। ভালো হওয়ার বদলে আমার ক্ষতি হয়ে গেছে।”

অভিযুক্ত এস.এম শাখাওয়াত আলী বলেন, “যথাযথ নিয়মেই ওই রোগিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। ওই রোগী এক বছর ধরে আমার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। রোগীর কাছে কিছু টাকা পাওয়া যেত, সেটা টাকা চাওয়ার পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে। পরে তাদের লোকজন এসে আমার চেম্বারে ভিড় করেন।”

বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এস এম শাখাওয়াত আলী কোনো সদুত্তর দেননি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. কামাল হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী বিডিএস ডিগ্রি এবং নবায়ন করা লাইসেন্স ছাড়া কেউ দাঁতের রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারবেন না। লাইসেন্স নবায়ন না করে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ নেই, এটা অবৈধ। সরকারি নিয়মনীতির মধ্যে থেকেই চিকিসকদের সেবা দিতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “এস এম শাখাওয়াত আলী যদি সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ ব ড এস ক বছর

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ