বছরে ৫০ লাখ টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে মার্কিন কোম্পানি আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে নন-বাইন্ডিং চু‌ক্তি ক‌রে‌ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এলএন‌জি আমদা‌নিকারক পে‌ট্রোবাংলা এ সম্প‌র্কে অব‌হিত নয়। তবে জ্বালা‌নি বিভাগ মনে করছে এই চুক্তির ফলে কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়নি।  

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালা‌নির বি‌শেষ বিধান বাতি‌লের পর টেন্ডার ছাড়া চুক্তি করা হলো। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতোই হয়ে গেল বিষয়টি। এতে কোনো স্বচ্ছতা থাকল না।

গতকাল শ‌নিবার বিডার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এবং আর্জেন্ট এলএলসির চেয়ারম্যান ও সিইও জনাথন ব্যাস এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

এ বিষয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্জেন্ট এলএনজি বছরে আড়াই কোটি টন এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতার একটি অবকাঠামো গড়ে তুলছে লুইজিয়ানার পোর্ট ফোরচনে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সেখান থেকে পেট্রোবাংলার কাছে চুক্তি অনুযায়ী এলএনজি বিক্রি করতে পারবে।

জানা গে‌ছে, আর্জেন্ট নতুন কোম্পানি। ২০২৩ সালে গঠিত কোম্পানিটির এলএনজি সংক্রান্ত কোনো ব্যবসা নেই। চুক্তির বিষয়ে বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ব‌লেন, দেশে গ্যাসের বিশাল সংকট। শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, ইত্যাদির জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস সরবরা‌হের সমাধান বের করতেই হবে। মধ্যপ্রা‌চ্যের বাইরে আমেরিকা একটা ভা‌লো বিকল্প। জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ বিষয়ে বলেন, এটা নন-বাইন্ডিং একটি চুক্তি। মূল চুক্তির একটি প্রাথমিক ধাপ। এতে আমাদের কোনো  বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, মার্কিন কোম্পানটি গ্যাস উত্তোলন করবে, তারপর এলএনজি আকারে সরবরাহ করবে। এটা সময়ের ব্যাপার।

তবে পে‌ট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিডার চেয়ারম্যানের করা চুক্তি সম্পর্কে তারা অবহিত নন। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তারা জেনেছেন। এ ক্ষেত্রে কোনো মতামত নেওয়া হয়নি।  চুক্তির সময় পে‌ট্রোবাংলার কেউ ছিল না ।  

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন অধ্যাপক ড.

ইজাজ হোসেন  বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সরকারকে বিরত থাকা উচিত। যারা কিনবে তারা জানে না, অথচ চুক্তি হলো। তিনি বলেন, দেশে এলএনজি কেনার কোনো বেঞ্চমার্ক নেই। তাই কার থেকে কোন দামে এলএনজি কেনা হবে, এগুলো স্বচ্ছ থাকা জরুরি।

জ্বালা‌নি ‌বি‌শ্লেষক প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা ফেসবু‌কে লে‌খেন, ‘এলএনজি কেনার চুক্তি বা সমঝোতা যাই বলি, বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান কেন করলেন? এটা তো জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের করার কথা। তাছাড়া এলএনজি কিনলে তো ডলার দেশ থেকে বের হয়। বিনিয়োগ বোর্ডের কাজ তো দেশে ডলার ঢোকানো। এই হেডস অব এগ্রিমেন্টটা কোন আইনের বলে করা হলো? এখন তো দ্রুত জ্বালানি আইন নাই, তাহলে বিনা টেন্ডারে একটা বিদেশি কোম্পানির স‌ঙ্গে হেডস অব এগ্রিমেন্ট হলো কেমনে? এটাকে জিটুজি চুক্তিও বলা যাবে না, কারণ আরেক পক্ষ বেসরকারি কোম্পানি।’ 

বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা অন্তত ৪০০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ২৭৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশীয় ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ১৯০ কোটি ঘনফুট। আমদানি করা এলএনজি থেকে মিলছে ৮৫ কোটি ঘনফুট। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি করছে।

এখন মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে (এফএসআরইউ)। এ দুটি পরিচালনা করছে দেশীয় কোম্পানি সামিট ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি। এলএনজি সরবরাহের জন্য কাতার এবং ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরাসরি এলএনজি সংগ্রহে  একা‌ধিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি রয়েছে পেট্রোবাংলার। এছাড়া আরও একটি এফএসআরইউ, স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ রয়েছে সরকারের।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এলএনজ আর জ ন ট সরবর হ ঘনফ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে আজ (সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার কারণে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

আরো পড়ুন:

ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদনের সময় বাড়ল    

রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারে নামল

তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজারে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামে বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত। নিলামের কাট অফ প্রাইস ধরা হয়েছে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা। এই কাট অফ প্রাইসেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার ফলে রিজার্ভ বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৭৪৭ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৭ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে এবং গত ১৫ জুলাই একই দরে ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫  পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং  গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। ডলারের দাম আরো কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বেন, অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।

গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছেন।

ঢাকা/নাজমুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ২৪ কোটি টাকার পানি প্রকল্প
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • আন্তর্জাতিক দর যাচাই করে আমদানি হচ্ছে এলএনজি
  • পিটার হাস কোন কোম্পানিতে আছেন, ভালো করে জানি না: অর্থ উপদেষ্টা
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে