ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ভাবখালী ইউনিয়নের একটি মাজারের ওরস অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গত শুক্রবার স্থানীয় মুসল্লিদের একটি পক্ষ ওরসে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করে ওরস প্রতিহতের ঘোষণা ও থানায় অভিযোগ দিয়েছে।
ভাবখালী ইউনিয়নের চকবন পাথালিয়া গ্রামের আউলিয়া বাজারে হজরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকিরের (র.
এলাকাবাসী জানান, ওরসের নামে বিদাত ও শিরক করা হয় দাবি করে ১৯ জানুয়ারি স্থানীয় কিছু কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম মাজারের লোকজনকে গিয়ে ওরস বন্ধ রাখতে বলেন। এ সময় মাজারের লোকজন তাদের কাছে গান-বাজনা বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। এরই মধ্যে স্থানীয় ভাবখালী বাজারে ইত্তেফাকুল উলামা ও ভাবখালী ঐক্য উলামা পরিষদের ব্যানারে গত শুক্রবার বিকেলে মানববন্ধন করেন মুসল্লিরা। ওরস বন্ধের দাবিতে তারা থানায় একটি আবেদনও করেন।
রোববার মাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাশের জমিতে দোকানপাট ও নাগরদোলা বসানোর প্রস্তুতি চলছে। মাজারের সামনে একটি বড় তোরণ করা হয়েছে। মাজারের কিছু স্থানে রং করছেন কয়েকজন শ্রমিক। মাজারের ভেতরে কোরআন তেলাওয়াত করছেন একজন ভক্ত। মাজারের পাশে জামে মসজিদ ও একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা আছে।
ঢাকা থেকে আসা একজন ভক্ত বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এই মাজারের মাহফিলে আসি; কিন্তু এবারের মতো পরিস্থিতি কখনো হয়নি। এখানে অন্যায় কিছু হয় না।’
মাজার কমিটির সদস্য মনির উদ্দিন জানান, ওরস অনুষ্ঠানের জন্য জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে ৫ জানুয়ারি আবেদন করা হয়। এত বছর ওরস উদযাপনে কোনো বাধা আসেনি; কিন্তু এবার স্থানীয় কয়েকজন ইমাম এটি বন্ধ রাখতে বলছেন।
মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ফকিরের ভাষ্য, ৫০ বছর ধরে এই ওরস অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। দেশজুড়ে ওরস হলেও এখানে ওরস বন্ধের পাঁয়তারা করছে কিছু লোক।
উত্তেজনার একপর্যায়ে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন থানার ওসি শফিকুল ইসলাম খান। বৈঠকে ওরসের নামে বাজার, গানবাজনা ও অশ্লীলতা হবে না বলে আশ্বাস দেয় মাজারের লোকজন।
ইত্তেফাকুল উলামার ভাবখালী ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোবারক হোসেন বলেন, মাজারে ওরসের নামে অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। সেখানে মাদক, জুয়া ও গানবাজনা হোক তারা চান না। শুধু জিকির ও কোরআন তেলাওয়াত করতে পারবে। যদি এর ব্যত্যয় হয় বিষয়টি প্রশাসন দেখবে বলে জানিয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি শফিকুল ইসলাম খান জানান, ওরস ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হলে উভয় পক্ষকে নিয়ে থানায় আলোচনা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের নজরদারি থাকবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ওরস র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) দ্রুত তফসিল ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩০ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘হয় মোদের চাকসু দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’, ‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’, ‘চাকসু মোদের অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার’—এমন স্লোগান দেন।
আরো পড়ুন:
আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে বিশ্বে তৃতীয় ইউআইইউ
জবির প্রভাবশালী আওয়ামীপন্থি ‘ক্যাডার’ শিক্ষকরা যেখানে আছেন
আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন রিয়াদ বলেন, “জুলাই মাসে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ হওয়ার ঘটনাগুলো আমাদের জানা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীও সে সময় শহীদ হয়েছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই সবার আগে চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা ছিল, কিন্তু এখনও কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ ডাকসু, রাকসু, জাকসুর তফসিল ঘোষণা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা অনুমোদনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এরপর আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। “যদি তা না হয়, তাহলে আমরা দুর্বার ছাত্রআন্দোলনের দিকে যাব,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, “দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরইমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমরা এতদিন রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, এখন আর রোডম্যাপ নয়—তফসিল চাই।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে সক্রিয় ছাত্র সংসদ। তাই আগামী আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তফসিল এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন চাই।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা চূড়ান্ত হলে নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করবেন।”
চাকসু গঠনের ধারণা মূলত এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর আদলে। বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৯৭০ সালে চাকসুর প্রথম কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ মে। এই নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল বিজয়ী হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আর কোনো চাকসু নির্বাচন হয়নি।
২০২৫ সালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হওয়ায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসুর মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
ঢাকা/মিজানুর রহমান/ইভা