লিগের শেষ ম্যাচ খেলতে আসার আগে ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছ থেকে পাওয়া চেক ব্যাংকে জমা দিয়েছিলেন দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। গতকাল তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হওয়ার কথা ছিল। অথচ দুপুরের আগেই খবর রটে– আবারও চেক বাউন্স। ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের এমডি শফিকুর রহমানের প্রতিশ্রুতি ছিল প্রথম কিস্তির পারিশ্রমিকের দ্বিতীয় ২৫ শতাংশ পেয়ে যাবেন সবাই। সে আশার গুড়ে বালি পড়ে দ্বিতীয়বার চেক বাউন্সে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবার চেক বাউন্স হয়নি। সৌভাগ্যবান কয়েকজন ক্রিকেটার টাকা পেয়েছেন। মূলত সিনিয়র ক্রিকেটারদের শান্ত রাখতেই এ কৌশল ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক শফিকুরের। অথচ দেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে দেওয়ার পর ঘটা করে চেক দেওয়া হয়েছিল। চেকের ছবি তুলে কেউ কেউ ফেসবুকেও দিয়েছিলেন। তারা তো আর জানতেন না, চেক বাউন্সে নতুন করে রক্তক্ষরণ হবে হৃদয়ে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এত কিছুর পরও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সভায় কীভাবে উপস্থিত থাকেন ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্বাধিকারী শফিকুর। তবে কি বিসিবি থেকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে তাঁকে? ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউসিএ) থেকে এ প্রশ্ন উঠেও গেছে। যদিও বিপিএলের দুর্নামের এই ক্ষতে প্রলেপ দিতে ভেতরে ভেতরে তাসকিন আহমেদদের বকেয়া পরিশোধের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে বিসিবি।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, স্মরণীয় একটি বিপিএল করতে চান। টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ানোর আগে নাচগানের আয়োজন করে সাড়া ফেলতে চেয়েছিলেন। প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকায় পাকিস্তানি শিল্পী উস্তাদ রাহাত ফতেহ আলি খানকে ভাড়া করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলেন তারা। সিলেট, চট্টগ্রামেও কনসার্ট আয়োজন করে জানান দিতে চেয়েছিলেন জোরেশোরে– আবার এলো বিপিএল। পাঁচতারকা হোটেলে মাসকট উদ্বোধন, বিপিএলকে তারুণ্যের উৎসব ঘোষণা করা, জুলাই বিপ্লবকে তুলে ধরার উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও মাথা কাটা গেছে দুর্বার রাজশাহী ও চিটাগং কিংস নিয়ম মেনে ক্রিকেটারদের টাকা না দেওয়ায়।
সরকারি সহায়তায় বিশ্ব তারকাদের বিপিএলে আনার স্বপ্ন দেখেছিলেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিম। বাস্তবতা বিবর্জিত সে চিন্তা মাঠে মারা গেছে আগেই। অভিযোগ উঠেছে, বিসিবির এই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতায় দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি বৈশ্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ডব্লিউসিএ থেকে প্রতিবাদ এবং সমালোচনা করা হয়েছে দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের সম্মানী না দেওয়ায়। বিসিবি কর্তাদেরও নিন্দামন্দ কম হচ্ছে না।
বিসিবি সভাপতির চেষ্টায় প্রথম কিস্তির ২৫ শতাংশ টাকা পেয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। ঢাকার দ্বিতীয় পর্বের খেলা শুরুর সময় তাসকিনদের টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন ফারুক আহমেদ। গতকাল একজন পরিচালক সমকালকে বলেন, ‘রাজশাহীর ক্রিকেটারদের টাকা বোর্ডকেই দিতে হবে। কোন প্রক্রিয়ায় দেওয়া যায়, তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
যাচাই-বাছাই ছাড়া ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের শফিকুর আর চিটাগং কিংসের সামির কাদেরকে ফ্র্যাঞ্চাইজি করে বিসিবি সভাপতি নিজেই বিপদ ডেকে এনেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এ দুই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে উদ্ধারের পথও খোঁজা হচ্ছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সন্দেহ রাজশাহী ও চিটাগংকে সুবিধা দিতেই তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে থাকা দুই দলকে ৬০ ও ৪০ লাখ টাকা আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের গতকালের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিপিএলে এই প্রথম তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানের দলকে টাকা দেওয়া হবে। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের প্রাইজমানি ৫০ লাখ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে বলে জানান বিসিবির একজন কর্মকর্তা। চ্যাম্পিয়নরা পাবে আড়াই কোটি, রানার্সআপ পাবে দেড় কোটি টাকা। এ ছাড়া টিকিট থেকে প্রাপ্ত আয়ের লভ্যাংশ দেওয়া হবে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে। তবে কত শতাংশ দেওয়া হবে– এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান ফাহিম। গতকালের সভায় চিটাগং কিংস ছাড়া বাকি ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজি উপস্থিত ছিল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প এল ব প এল গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।