খুলনার ডুমুরিয়ায় ফসলি জমি, খাল ও জলাশয় ভরাট করে বসতবাড়ি, কলকারখানাসহ নানান স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে আবাদি জমি কমে যাওয়ায় ফসলের উৎপাদন কমছে। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ওপরও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। 
জানা গেছে, উপজেলা সদর, গুটুদিয়া, রংপুর ও ভান্ডারপাড়া– এ চারটি ইউনিয়নে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি ও অর্ধশতাধিক খাল ও জলাশয় রয়েছে। কয়েক বছর ধরে জেলেডাঙ্গা, ভ্যালকামারী, শৈলমারী, তালতলা, বকুলতলা, জাবড়া, বিলপালার উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ, পঞ্চু, রংপুর, লতা, খামারবাটি, শলুয়া, ঘোনা, প্রভৃতি এলাকার ফসলি জমি ও খাল ভরাট করা হয়েছে। 
উপজেলার বকুলতলা গ্রামের সবজিচাষি কমল কান্তি বলেন, ডুমুরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় জমি ব্যবসায়ীরা ফসলি জমি ও সরকারি খাল বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলছেন। পরে চড়া দামে তারা জমি বিক্রি করছেন। এসব বিষয় দেখার যেন কেউ নেই। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রবীণ শিক্ষক বলেন, উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় ব্যক্তি মালিকানার জমিঘেঁষে ছোট-বড় অনেক খালের শাখা-প্রশাখা বয়ে গেছে। জমি ব্যবসায়ীরা গ্রামবাসীর কাছ থেকে জমি কিনে পার্শ্ববর্তী সরকারি খাল দখলে নিচ্ছেন। পরে সরকারি খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা তাদের মূল জমির সঙ্গে সরকারি জমিও একই সঙ্গে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ কাজে সহযোগিতা করছেন উপজেলা ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। 
ডুমুরিয়ার কলেজছাত্র আরিফুল ইসলাম বলেন, সখুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের কৈয়া ব্রিজ থেকে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশ ক্রমশ দখল হয়ে যাচ্ছে। জমি ব্যবসায়ীরা রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। প্রশাসন বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে। 
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন গাছে ও খুঁটি পুঁতে বিভিন্ন নামে শত শত সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন জমি ব্যবসায়ীরা। 
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমি বালু দিয়ে ভরাট কাজে জড়িত জেলেরডাঙ্গা এলাকায় প্রাইম প্রোপার্টিজের মালিক হাফিজ ইসমাইল বলেন, অনেকেই ফসলি জমি ভরাট করছেন। তাতে তো সমস্য হচ্ছে না। সরকারিভাবে তাদের কেউ নিষেধও করেনি। নিজস্ব জমি তারা বালু দিয়ে ভরাট করছেন। 
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

আশরাফ হোসেন বলেন, সরকারি খাল ভরাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনছাদ ইবনে আমিন বলেন, ডুমুরিয়ার চারটি ইউনিয়নে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ২৫ বিঘা ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। এতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন কমছে। 
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, খাল ও জলাশয়গুলো রক্ষা না করলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরির পাশাপাশি প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হারাবে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এছাড়া জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। 
ডুমুরিয়ার ইউএনও মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, এ উপজেলায় ছোট-বড় ১২৫টি সরকারি খাল রয়েছে; যার মধ্যে ৫০০ কিলোমিটার খাল ভরাট হয়ে তা বেদখল হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র  ফসলি জমি ও খাল-জলাশয় ভরাট করে নানা স্থাপনা গড়ে তুলছে। বেআইনি এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। 
খুলনা জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, খাল ও জলাশয় ভরাট করা দণ্ডনীয় অপরাধ। সরকার কৃষি ও অকৃষি শ্রেণির খাসজমি বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কৃষিজমি বরাদ্দ নিয়ে কেউ বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। এমনটি কেউ করলে তাঁর জমির দলিল বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় ভূমি অফিসের লোকজনসহ যারা সরকারি জমি দখলে সহায়তাকারী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র এল ক য় উপজ ল সরক র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।  

এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর  মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।

এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব  হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।

সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ