সেই বহিষ্কৃত প্রভাষক তামান্না গ্রেপ্তার
Published: 5th, February 2025 GMT
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের উত্তর বাংলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের বহিষ্কৃত প্রভাষক শিরিন তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নাকে আজ বুধবার ভোরে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও ছাত্র-জনতার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে আজ তামান্নাসহ সাতজনকে আসামি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সংগঠক রাতিলুল হাসান কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
সরেজমিন ও মামলা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে তামান্না লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের কালীগঞ্জ থানার মূল ফটকের সামনে ওই কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুমপার অপসারণ দাবিতে অনশনে বসেন। এ সময় মহাসড়কের দুপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন তাকে মহাসড়ক ছেড়ে অনশন করতে বললে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এছাড়া জেলা সদর থেকে মিটিং সেরে হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহমুদুন্নবী কর্মস্থলে ফেরার সময় অনশনের যানজটে আটকা পড়েন। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গেও তামান্না অশোভন আচরণ করেন। এতে জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে একপর্যায়ে তামান্না থানায় গিয়ে ওঠেন। এ সময় জনতা তাকে গ্রেপ্তারে দাবি তোলে এবং থানা ঘেরাও করে রাখে। পরে সেনাবাহিনীর একটি টিম রাত ৩টার দিকে থানায় এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যৌথবাহিনীর বিশেষ পাহারায় ভোর রাতে তামান্নাকে জেলা সদরে আনা হয়।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রাকিব হায়দার বলেন, শিক্ষার্থীদের মামলার ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত চলমান। তিনি বলেন, অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করে গত বছরের ২৩ অক্টোবর তামান্না জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনশন করেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন আশ্বাসে তখন তিনি অনশন ভেঙেছিলেন। তদন্ত প্রক্রিয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলমান রয়েছে।
তবে তামান্না গণমাধ্যমকে জানিয়ে আসছেন, অধ্যক্ষের অনৈতিক আবদারে রাজি না হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেন না বলেই তার ওপর এমন অত্যাচার। তিনি আইনগতভাবেই সবকিছু মোকাবিলা করবেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকার ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ–দিনাজপুর সড়কের কাটামোড় এলাকায় এ কর্মসূচিতে অংশ নেন শতাধিক সাঁওতাল ও বাঙালি নারী–পুরুষ। পরে বিকেল চারটার দিকে কয়েকজনকে শরবত পান করিয়ে অনশন ভাঙান আমন্ত্রিত অতিথিরা।
সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির এ কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির, বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক, ফারুক কবীর, সাঁওতাল নেতা স্বপন শেখ, প্রিসিলা মুর্মু, তৃষ্ণা মুর্মু, বিটিশ সরেন, গৌড় পাহাড়ি, রাফায়েল হাসদা, অলিভিয়া হেমব্রম, বার্নাবাস টুডু, লুইস মুর্মু, খিলন রবিদাস প্রমুখ। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে।
গণ–অনশনে বক্তারা বলেন, গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড নির্মাণ করার মতো সরকারের অনেক জমি পতিত আছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ সাঁওতালদের রক্তভেজা তিন ফসলি জমিতেই কেন ইপিজেড করতে হবে? এ আন্দোলন ইপিজেডের বিরুদ্ধে নয়; বরং বাপ–দাদার জমি উদ্ধারের জন্য তাঁরা আন্দোলন করছেন। এসব জমি উদ্ধার করতে গিয়ে তিন সাঁওতালকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আজও গ্রেপ্তার করা হয়নি। দোষী ব্যক্তিদের বিচার হয়নি।
বক্তারা বিরোধপূর্ণ জমিতে ইপিজেড নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ, তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, সাঁওতাল–বাঙালিদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পৈতৃক জমি ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
রংপুর চিনিকল সূত্রে জানা যায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ হলে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করেন। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমিতে উচ্ছেদে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মার্ডি নামে তিন সাঁওতাল নিহত হন। সেই সঙ্গে অন্তত ২০ জন আহত হন।
এ পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেপজা) ইপিজেড বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে চিনিকলের জমিতে ইপিজেড নির্মাণের বিরোধিতা করে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি।