বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মাস্টাররোলে কাজ করা ৩১৭ কর্মচারীর ১৫ থেকে ২০ বছরেও চাকরি স্থায়ী হয়নি। এ নিয়ে একাধিক রিট পিটিশন দায়ের করেছেন তারা। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত তাদের চাকরি স্থায়ী করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বিএডিসি। 

কর্মচারীরা জানান, কৃষকের হাতে সার-বীজ আর মাঠে সেচ দেওয়ার দায়িত্ব বিএডিসির। দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটের গ্যাঁড়াকলে পড়ে সেই দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ৫ হাজার ২১৮ জনবল অনুমোদন থাকলেও ২ হাজার ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে কার্যক্রম চলছে। ২০১৭ সাল থেকে মাস্টাররোলে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারীদের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। চাকরি স্থায়ী চেয়ে এসব কর্মচারী হাইকোর্টে রিটও করেন। চাকরি স্থায়ী করতে হাইকোর্টের রায়ের পরও বিএডিসির উপপরিচালক (আইন বিভাগ) ও যুগ্ম পরিচালক (নিয়োগ ও কল্যাণ) বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিগত সরকারের আমলে তাদের চাকরি স্থায়ী না করে উল্টো হয়রানি করে যাচ্ছেন। এ দুই কর্মকর্তা বলছেন, হাইকোর্টের রায় বিএডিসির চাকরির প্রবিধানমালার মধ্যে পড়ে না। 

একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুরোনো মাস্টাররোলের কর্মচারীদের স্থায়ী না করে নতুন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। সম্প্রতি এ রকম আরেকটি নতুন নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে। মাস্টাররোলে কর্মরত কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী না করে নতুন নিয়োগ করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, আমরা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে দৈনিক ভিত্তিতে চাকরি করেও স্থায়ী হতে পারছি না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বারবার আবেদন করার পরও আমাদের চাকরি স্থায়ী হচ্ছে না। তিনি বলেন, মাস্টাররোল থেকে ২০১৭ সালের আগে চাকরি স্থায়ী করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে তা বন্ধ হয়ে আছে। ৫ আগস্টের পর নতুন করে জনবল নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ আগের মাস্টাররোলে চাকরি করা কর্মচারীদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এটি আদালত অবমাননার শামিল। 

এ বিষয়ে বিএডিসির চেয়ারম্যান রুহুল আমিন খান বলেন, মাস্টাররোলের কর্মচারীদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। আশাকরি দ্রুত একটা সুরাহা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ, আদেশ ৬ আগস্ট

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর আদেশের জন্য আগামী ৬ আগস্ট তারিখ ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ আজ বুধবার শুনানি শেষে আদেশের এই তারিখ ধার্য করেন।

গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য ১ জুলাই তারিখ ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার শুনানি হয়।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়; পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারীপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন। এ ছাড়া ইন্টারভেনার (ব্যাখ্যাকারী) হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর আজ শুনানি শেষ হলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেসরকারি ব্যাংক নেবে ম্যানেজার, নিয়োগ প্রধান কার্যালয়ে
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ, আদেশ ৬ আগস্ট