১৫ শর্তে দুই দিনের জন্য মাদারীপুরে কুন্ডুবাড়ির মেলার অনুমতি দিল প্রশাসন
Published: 20th, October 2025 GMT
মাদারীপুরের কালকিনিতে দীপাবলি ও কালীপূজা উপলক্ষে প্রায় আড়াই শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ির মেলা দুই দিনের জন্য শুরু হচ্ছে। এর আগে মেলা বন্ধের জন্য একটি পক্ষ মানববন্ধন, লিখিত অভিযোগ ও নানা বাধা সৃষ্টি করে, যা নিয়ে জেলাজুড়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এসবের মধ্যে রোববার বিকেলে ১৫টি শর্ত দিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দুই দিনের জন্য মেলার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। যদিও আগে পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে বসত এই মেলা।
মঙ্গলবার মেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আজ সোমবারই শুরু হয়ে গেছে কুন্ডুবাড়ির ঐতিহ্যবাহী এই মেলা। মেলা ঘিরে গত শুক্রবার আসতে শুরু করেছেন দোকানিরা। পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ভিড় বাড়তে শুরু করেছে মেলা প্রাঙ্গণে।
আজ দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক–সংলগ্ন কালকিনি উপজেলার ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে গোপালপুর পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে দোকানপাট। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঠের আসবাবের সমারোহ ঘটেছে এই মেলায়। মেলায় ফরিদপুর, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছেন।
দর্শনার্থী, ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, এ বছর মেলায় দুই শতাধিক বিভিন্ন স্টল বসেছে। মেলায় কাঠের তৈরি আসবাব, বেতের তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, শিশুদের খেলনা, মাটির পণ্য, বিভিন্ন প্রকার খাবারের দোকানে শিশু, নারীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড় পড়েছে।
মাদারীপুর সদর থেকে আসা দর্শনার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেলায় কেনাবেচা শুরু হয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যই আছে। দামটা এবার বেশি মনে হচ্ছে। মেলার পরিবেশ বেশ গোছানো। নিরাপত্তাও ভালো। পরিবার নিয়ে আবারও মেলায় এসে কেনাকাটা করব। আপাতত সব দেখে গেলাম।’
উপজেলা প্রশাসন, আয়োজক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি ও কালীপূজা উৎসব ঘিরে কালকিনি উপজেলার ভূরঘাটা এলাকায় কুন্ডুবাড়ি মেলার আয়োজন করা হয়। প্রায় ২৫০ বছর ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হলেও দুই বছর ধরে বন্ধ করতে একটি মহল নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এ বছর মেলায় অশ্লীলতা, চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়াসহ একাধিক অভিযোগ এনে ১৬ অক্টোবর কালকিনির ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে স্থানীয় আলেম সমাজের একটি অংশ। পরে এটি নিয়ে উপজেলা ও জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
তবে কালকিনির ভূরঘাটা কুন্ডুবাড়ি কালীমন্দির কমিটির আবেদনের পরিপেক্ষিতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়। এ বছর আগামীকাল মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিন চলবে ঐহিত্যবাহী এই মেলা।
প্রশাসন সূত্র বলছে, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় ১৫টি বিধিনিষেধ করা হয়েছে। এর মধ্যে আসামাজিক কর্মকাণ্ড বন্ধ, জুয়া-মাদক নিষেধ, উচ্চ স্বরের শব্দযন্ত্র পরিহার, অবৈধ পণ্য কেনাবেচা বন্ধ, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ওপর দোকানপাট বসানো যাবে না, রাত ১১টার পর মেলায় দর্শনার্থী প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিহার করতে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ উল আরেফিন বলেন, ‘মেলা সংস্কৃতির অংশ। আর যেহেতু কুন্ডুবাড়ির মেলাটি ঐতিহ্যবাহী, তাই মেলাটি বন্ধের পক্ষে নয় প্রশাসন। মেলা বন্ধ নিয়ে একটি পক্ষ মানববন্ধন করে। লিখিত অভিযোগও করে। যেসব অভিযোগে মেলা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছিল, সেসব কর্মকাণ্ড মেলায় কখনোই করতে দেওয়া হবে না। মেলা ও মন্দির কমিটি, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মেলা সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে। মেলায় আগত দোকানি, দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে প্রশাসন।’
কালকিনির ভূরঘাটা কুন্ডুবাড়ি কালীমন্দিরের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি স্বপন কুমার কুন্ডু বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের কাছে মেলার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। পরে প্রশাসন নানান দিক বিবেচনা করে দুই দিনের মেলার অনুমতি দিয়েছে। একসময় মেলা পাঁচ থেকে সাত দিন অনুষ্ঠিত হতো। মেলার সময়সীমা বাড়ানো হলে ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপকার হয়। এই পুরোনো মেলাকে ঘিরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও স্থানীয় লোকজন বেশ সহযোগিতা করেন। সবকিছু মিলিয়ে প্রতিবছর কুন্ডুবাড়ি মেলা মিলনমেলায় পরিণত হয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক লক ন এই ম ল বন ধ র র জন য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নোবিপ্রবিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন
তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) মানববন্ধন করা হয়েছে। এ সময় ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর এলাকা।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর ১টায় শুরু হওয়া এ মানববন্ধনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রংপুর বিভাগ ছাত্র কল্যাণ পরিষদ।
আরো পড়ুন:
জাবিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি
ঢাকা-গোপালগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচলের দাবিতে মানববন্ধন
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তিস্তা নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে এবং উত্তরাঞ্চলের কৃষি, পরিবেশ ও মানুষের জীবনমান রক্ষায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন এখন সময়ের অনিবার্য দাবি। উত্তরবঙ্গের মানুষ সব সময় দেশের সংকটে পাশে থেকেছে, অথচ তাদের প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
তাদের দাবি, তিস্তা বাঁচলে উত্তরবঙ্গ বাঁচবে, আর উত্তরবঙ্গ না বাঁচলে গোটা দেশেই খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী আল জকি হোসেন বলেন, “জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই-এটা শুধু স্লোগান নয়, আমাদের সার্বভৌমত্ব ও উত্তরবঙ্গের মানুষের বাঁচার দাবির ঘোষণা। ভারতের বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে তিস্তা আজ রক্তশূন্য। তিস্তা কোনো দান-খয়রাত নয়, এটা আমাদের অধিকার।”
তিনি বলেনন, “নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে দিতেই হবে। অন্যথায় এই জনতার প্রতিবাদ আরো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। তিস্তায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় উত্তরবঙ্গের কৃষকরা বছরের পর বছর অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বিগত সরকারের ব্যর্থতায় আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এখন জনগণ জেগে উঠেছে—তারা আর কোনো শোষণ মানবে না।”
একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও রংপুর ছাত্র কল্যাণ সমিতির যুন্ম সাধারণ সম্পাদক মুজতবা ফয়সাল নাঈম বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২০২৩ সালকে লক্ষ্য ধরা হলেও সেটি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের অবহেলায় এখনো প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রকল্পের মোট বাজেটের ১২ শতাংশ দেশের নিজস্ব অর্থায়নে হওয়ার কথা। অন্তত এ অংশ দিয়েই কাজ শুরু করতে হবে।”
ঢাকা/শফিউল্লাহ/মেহেদী