অধ্যাপক কবিরুল বাশারের গবেষণা হুবহু আরেক জার্নালে শেকৃবি ভিসিসহ দুজনের নামে প্রকাশ
Published: 20th, October 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও খ্যাতনামা কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার অভিযোগ করেছেন, তাঁর ২০১৪ সালের একটি মৌলিক গবেষণাপত্র হুবহু নকল করে ২০১৭ সালে প্রকাশ করা হয়েছে কৃষিবিষয়ক একটি জার্নালে।
চৌর্যবৃত্তি নিরূপণ করার মাধ্যম আইথেনকেট ব্যবহার করে এই অধ্যাপক দেখতে পেয়েছেন, তাঁর গবেষণার ৯৮ শতাংশই চুরি করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দাপ্তরিকভাবে আইথেনকেট ব্যবহার করে।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইথেনটিকেটের এই তথ্যানুসন্ধানের সত্যতা পাওয়া গেছে। তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, অধ্যাপক বাশারের ওই গবেষণার ৯৮ শতাংশই ২০১৭ সালে নকল করে ছাপানো হয়েছে। সেখানে অধ্যাপক বাশারের আগের গবেষণাপত্রের সহায়তা নেওয়ার কোনো স্বীকৃতিও নেই।
যে দুজন এই কাজ করেছেন, তাঁরা হলেন ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো.
অধ্যাপক কবিরুল বাশার এই ‘একাডেমিক চৌর্যবৃত্তির’ ঘটনায় দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
কবিরুল বাশার জানান, তাঁর মূল গবেষণাপত্রের শিরোনাম ছিল ‘Surveillance of mosquitoes in some selected parks and gardens of Dhaka city, Bangladesh’, যা ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক জার্নাল International Journal of Mosquito Research-এ প্রকাশিত হয়। কিন্তু ২০১৭ সালের ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত Progressive Agriculture জার্নালে ‘Diversities of mosquito species of different locations in Dhaka city’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ তাঁর কাজের হুবহু অনুলিপি হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে।
তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই প্রবন্ধে মূল লেখার সারসংক্ষেপ, টেবিল, চিত্র, মানচিত্র, তথ্যসূত্র এবং এমনকি শব্দে-শব্দে পাঠ্যাংশও অনুলিপি করা হয়েছে। অধ্যাপক বাশার একে ‘স্পষ্ট ও ইচ্ছাকৃত বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আইনি পদক্ষেপ ও আনুষ্ঠানিক নোটিশ
অধ্যাপক বাশার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, নিপসম এবং Progressive Agriculture জার্নালের সম্পাদক বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে তিনটি দাবির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো অবিলম্বে Progressive Agriculture জার্নাল থেকে নকল প্রবন্ধটি প্রত্যাহার করা; অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া; নির্ধারিত দুই সপ্তাহের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দেওয়া।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এই ঘটনা একাডেমিক সততা, গবেষণা নৈতিকতা ও মেধাস্বত্ব রক্ষার জন্য এক গুরুতর হুমকি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতি অনুরোধ, যাতে তারা দ্রুত তদন্ত শুরু করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়।
কবিরুল বাশার বলেন, ‘এই ধরনের চৌর্যবৃত্তি যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া থেকে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে একাডেমিক অনৈতিকতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণার মান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
ভুয়া পরিচয়েরও অভিযোগ
অধ্যাপক বাশার জানান, গোলাম সরোয়ার তাঁর ‘চৌর্যবৃত্তিপূর্ণ’ প্রবন্ধে নিজের পরিচয় দিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষক। কিন্তু তিনি আসলে কখনো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন না।
গত ৬ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক বাশার এ বিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ডিরেক্টরকে লিখিতভাবে জানালে প্রাথমিক তদন্ত শেষে ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায় যে ২০১৭ সাল বা বর্তমান সময়ে ওই নামে তাদের কোনো শিক্ষক ছিলেন না।
এ ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে তাঁর বর্তমান কর্মস্থল নিপসমের পরিচালক বরাবর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠিয়েছে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
অধ্যাপক আবদুল লতিফের বক্তব্য
অধ্যাপক কবিরুল বাশারের অভিযোগ নিয়ে অধ্যাপক আবদুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন না ধরলে হোয়াটসঅ্যাপে তাঁকে বার্তা পাঠানো হয়। তার জবাবে তিনি লেখেন, ‘ড. গোলাম সরোয়ার আমার পিএইচডি ছাত্র ছিল। আমার অনুমতি ছাড়াই তার একটা গবেষণাপত্রে আমার নাম ব্যবহার করেছিল। সে (গোলাম সরোয়ার) গবেষণাপত্রটির প্রধান ও করেসপন্ডিং অথর। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে আমার নাম ব্যবহার করে এ ধরনের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে গোলাম সরোয়ারের সঙ্গে ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ২০১৭ স ল এক ড ম ক ব যবস থ প রবন ধ প রক শ হ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় যুবনীতি পুনর্মূল্যায়ন ও আদিবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দাবি
সরকারি চাকরি, শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ সব ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী যুবরা’ বৈষম্যের শিকার উল্লেখ করে জাতীয় যুবনীতি ২০১৭ পুনর্মূল্যায়ন এবং তাঁদের বাস্তব অন্তর্ভুক্তি ও অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।
আজ রোববার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়: জাতীয় যুবনীতি ২০১৭-এর পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রান্তিক আদিবাসী যুবদের অন্তর্ভুক্তিকরণ, অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ ও অগ্রগতি’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এমন দাবি জানানো হয়।
সংলাপ আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম। এতে চাকমা, মারমা, গারো, খাসিয়া, ত্রিপুরা, সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর যুবরা অংশ নেন।
সংলাপে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘জাতীয় যুবনীতি কোনোভাবেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে না। এ নীতি শুধু আদিবাসী যুব নয়, প্রান্তিক বাঙালি যুবদেরও ধারণ করে না। তাই নীতিমালা পুনর্মূল্যায়ন করে আদিবাসী ও দেশের সব অঞ্চলের যুবদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ ও অগ্রগতি নিশ্চিত করা জরুরি।’
যুবদের উদ্দেশে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘জাতীয় যুবনীতিতে “ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী” কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে বলে হতাশ হয়ে নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভাবা যাবে না। দেশের নাগরিক হিসেবে, যুবক হিসেবে যুবনীতিতে আদিবাসী যুবরাও আছে। পাশাপাশি নিজেদের স্বীকৃতির জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
খাগড়াছড়ির গুইমারার ঘটনা উল্লেখ করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, সহিংসতার পর পাহাড়ি কিশোর ও যুবকদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির কারণে অনেককে মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি আন্তনী রেমা বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আদিবাসীদের সমান অংশগ্রহণ থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রব্যবস্থা কখনোই আদিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি। যত দিন পর্যন্ত রাষ্ট্র আদিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ মনে না করবে, তত দিন আদিবাসীদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে না।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা।
মূল প্রবন্ধের প্রস্তাবগুলো হলো প্রান্তিক আদিবাসী যুবসমাজের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে জাতীয় যুবনীতি পুনর্মূল্যায়ন করা। আদিবাসীদের আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি আর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। দ্বিভাষিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা চালু করা। ঐতিহ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করা। মানবাধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা।
সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের অর্থ সম্পাদক অনন্যা দ্রং। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সহসভাপতি টনি চিরান।