পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সরকারি পরিসংখ্যান রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয় কি না, সেই প্রশ্ন ওঠে। আসলে পরিসংখ্যানে কারচুপি হয় না, পরোক্ষ অপব্যবহার আছে।’

উদাহরণ দিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিসংখ্যান অনুকূলে থাকলে প্রকাশ করা হয়। আবার অনুকূলে না থাকলে প্রকাশ করা হয় না। এভাবে অর্ধসত্য প্রকাশিত হয়। আবার বিভিন্ন পদ্ধতিগতভাবে পরিসংখ্যান তৈরি করতে গিয়ে যেটা ভালো দেখায়, সেটা প্রকাশ করা হয়। এভাবে পরোক্ষ অপব্যবহার হয়।’

বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

অপব্যবহারের বাস্তব উদাহরণ দিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে একবার ধানের উৎপাদন কত হবে, সেটা নিয়ে কথা হয়। তখন স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে তথ্য ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে উৎপাদন বেশি দেখানো যায়।

আজকের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিবিএসের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা সভা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্বাধীনতা নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বিধিমালা সংশোধন করার মাধ্যমে বিবিএসকে স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে। এতে অনুমতি ছাড়াই পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে পারবে বিবিএস। আগে যেসব পরিসংখ্যান প্রকাশের আগে মন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যেতে হতো। এখন আর কাউকে দেখানোর প্রয়োজন হবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, পরিসংখ্যান এখন সমাজের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। গত ৫০ বছরে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যার কিছুটা সংগত আর কিছুটা হয়তো সংগত নয়।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, পরিসংখ্যানের মান একমাত্রিক কোনো বিষয় নয়। মানসম্মত পরিসংখ্যান তৈরির জন্য মানসম্মত প্রতিষ্ঠান এবং দক্ষ জনবল প্রয়োজন হয়। তাই শুধু মান চাইলে হবে না, পর্যাপ্ত অর্থায়ন লাগবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আজ হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁর মতে, বিবিএসের বর্তমান প্রকল্পের সংস্কৃতি সংস্থাটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিভিন্ন জরিপ পরিচালনার জন্য স্থায়ী অর্থায়ন প্রয়োজন।

প্রতি পাঁচ বছর পরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান দিবস পালিত হয়। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ সকালে আগারগাঁও এলাকায় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজন করে বিবিএস।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স খ য ন র অপব যবহ র উপদ ষ ট ব যবহ র র রহম ন ব ব এস

এছাড়াও পড়ুন:

লালনের আখড়াবাড়িতে মানুষের ভিড়ে মুঠোফোন চুরি, আটক ৬

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় ফকির লালন শাহর তিরোধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। লালন স্মরণোৎসবে এমন জনসমাগম কয়েক দশকে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন বাউল, সাধক, ফকির ও লালনভক্তরা। তবে এই সুযোগে সেখানে বেশ কিছু মুঠোফোন চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সন্দেহভাজন ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আজ শনিবার দুপুরে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন কুমারখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিরুল ইসলাম। তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার উৎসবের প্রথম দিন কুমারখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন অন্তত ১৪ জন ভুক্তভোগী। এ ছাড়া আরও অর্ধশতাধিক মানুষ মৌখিকভাবে পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ফোন উদ্ধার সম্ভব হয়নি।

আটক ব্যক্তিরা হলেন সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কান্দাপাড়ার শামিম তালুকদার (২৮), নেত্রকোনার বারহাট্টা থানার ডেউপুর উত্তরপাড়ার সেফায়েত উল্লাহ (১৯), কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের মো. সজিব (১৯), মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রমজান আলী (২৬), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রাজিব মিয়া (২০) ও পাবনার চর ভবানীপুর এলাকার আবদুল মালেক (২৫)।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকেই কুমারখালী থানায় ভিড় করছেন ভুক্তভোগীরা।

উপজেলার সদকী ইউনিয়নের দড়ি বাটিকামারা এলাকার স্কুলশিক্ষক পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, শুক্রবার রাতে লালন মেলায় গিয়ে তাঁর মুঠোফোন হারিয়ে যায়। তিনি থানায় জিডি করেছেন।

ফরিদপুরের কানাইপুর এলাকার মো. বিল্লাল বিশ্বাসও থানায় অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ভিড়ের মধ্যে একটি চক্র পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে নিচ্ছে। তাঁরটি ফোনটিও হারিয়েছে। প্রথম দিনই কয়েক শ ফোন চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর দাবি।
কুষ্টিয়ার এক সংগীতশিল্পী জানান, মূল মঞ্চে অনুষ্ঠান শেষে সড়কে উঠতেই তাঁর ব্যাগ থেকে ফোন বের করে নেয় চোরেরা। স্থানীয় এক সাংবাদিকও একই রাতে আখড়াবাড়িতে গিয়ে ফোন হারিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গার বুদ্ধিমানপাড়ার ব্যবসায়ী তানবিন ইসলাম রাব্বি বলেন, আখড়াবাড়ি এলাকার কয়েক কিলোমিটারজুড়ে ছিল যানজট। রাত ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে তাঁর স্মার্টফোনটি চুরি হয়েছে। ফোনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকায় জিডি করেছেন।

শুক্রবার রাত একটার দিকে আখড়াবাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, আখড়াবাড়ি, প্রবেশপথ, মেলার মাঠসহ আশপাশের এলাকায় মানুষের ভিড়। ভিড়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করছিলেন একাত্তর টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান কোহিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, এবার জাতীয়ভাবে আয়োজন থাকায় আখড়াবাড়িতে ভিড় বেশি। ভিড়ের মধ্যে কখন যে তাঁর ফোনটি চুরি হয়েছে, বুঝতে পারেননি। তিনি জানান, গত বছরও এই উৎসবে কয়েক শ ফোন চুরির ঘটনা ঘটেছিল।

উৎসবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও মুঠোফোন চুরির ঘটনা ঘটছে বলে জানান কুমারখালী থানার পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি কার্যক্রম চলছে।

ফকির লালন শাহর ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে ছেঁউড়িয়ায় জাতীয়ভাবে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ উৎসব রোববার মধ্যরাতে লালন সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিজয় দিবসের সরকারি কর্মসূচি চূড়ান্ত
  • ছবি: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে সাহিত্যের উৎসবে শামিল সবাই
  • লালনের আখড়াবাড়িতে মানুষের ভিড়ে মুঠোফোন চুরি, আটক ৬