১৪ বছর পর শ্রীলঙ্কায় অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজ জয়
Published: 9th, February 2025 GMT
নাথান লায়নের ডেলিভারিটায় টার্নের সঙ্গে বেশ বাউন্সও ছিল। ৫০ রানে ব্যাটিং করা কুশল মেন্ডিস ঠিকঠাক সামলাতে পারলেন না। বাউন্সে তাল মেলাতে না পারায় টপ এজ হয়ে বল চলে গেল শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়ানো স্টিভ স্মিথের হাতে।
টেস্ট জিততে অস্ট্রেলিয়ার খুব বেশি সময় লাগবে না, সেটি নিশ্চিত হয়ে যায় এই আউটেই। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে কুশলের আউটের পর শ্রীলঙ্কা আর যোগ করতে পেরেছে মাত্র ১৪ রান।
তাতে গলে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট জিততে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭৫ রানের। যা অস্ট্রেলিয়া তাড়া করেছে ৯ উইকেট হাতে রেখে। বড় এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজও নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। সর্বশেষ ১৪ বছরে এশিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সিরিজ জয় এটি। অন্যটি ২০২২ সালে, পাকিস্তানে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি বাদ দিলে এশিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ সিরিজ জয়টিও এসেছিল এই শ্রীলঙ্কার মাটিতে, ২০১১ সালে। এরপর শ্রীলঙ্কার মাটিতে দুই দফায় টেস্ট খেলতে এলেও সিরিজ জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ২০১৬ সালে সিরিজ হারের পর ২০২২ সালে করেছিল ড্র।
৮ উইকেটে ২১১ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। লিড ছিল মাত্র ৫৪ রানের। মানে তৃতীয় দিন শেষেই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কার শেষ ভরসা হয়ে টিকে ছিলেন কুশল। প্রথম ইনিংসে ৮৫ রানে অপরাজিত থাকা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান দিন শেষে অপরাজিত ছিলেন ৪৮ রানে। আজ তিনি যোগ করতে পেরেছেন মাত্র ২ রান। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা শেষ দুই উইকেট নিয়ে ব্যাটিং করতে পেরেছে আধা ঘণ্টা।
শ্রীলঙ্কার এই দুর্দশার মূলে অস্ট্রেলিয়ার দুই স্পিনার নাথান লায়ন ও ম্যাথু কুনেম্যানের ঘূর্ণি। এই দুই স্পিনার দ্বিতীয় টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭টি করে উইকেট নিয়েছেন। দুজনে মিলে দুই টেস্টে নিয়েছেন ৩০ উইকেট। কুনেম্যানের ১৬টির সঙ্গে লায়ন নিয়েছেন ১৪টি।
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলা সাবেক অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে শেষ ইনিংসে করেছেন ১৪ রান। আজ দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর নেতৃত্বেই মাঠে নেমেছিল শ্রীলঙ্কা। এমনকি শেষ দিকে বলও করেছেন এই ওপেনার। তাঁর বলে মারনাস লাবুশেনের সিঙ্গেলেই নিশ্চিত হয় অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ ও সিরিজ জয়।
এর আগে দিনের খেলার গতিপথ নির্ধারণ করে দেওয়া কুশলের আউটে নতুন এক কীর্তি গড়েন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ফিল্ডার হিসেবে (উইকেটকিপার বাদে) টেস্টে ২০০ ক্যাচ ধরার রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
কিপিং পজিশনের বাইরে টেস্টে স্মিথের চেয়ে বেশি ক্যাচ আছে মাত্র ৩ জনের। এদের মধ্যে এখনো খেলছেন শুধু জো রুট, ২০৭টি। সমান ৩৬টি টেস্ট সেঞ্চুরির দুই মালিক রুট ও স্মিথের মধ্যে লড়াইটা এখন ফিল্ডিংয়ে গড়াল। আরেকজন শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে (২০৫)। টেস্টে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ধরেছেন ভারতের রাহুল দ্রাবিড়, ২১০টি। স্মিথ-রুট যে সেটা ছাড়িয়ে যাবেন তা নিশ্চিত। সেঞ্চুরির তালিকাতেও তাদের সঙ্গে আছেন দ্রাবিড়। কাকতালীয়ভাবে স্মিথ, রুট ও দ্রাবিড়—এই ৩ জনের টেস্ট সেঞ্চুরিই ৩৬টি করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ২৫৭ ও ২৩১ (ম্যাথুস ৭৬, মেন্ডিস ৫০; কুনেম্যান ৪/৬৩, লায়ন ৪/৮৪)
অস্ট্রেলিয়া: ৪১৪ ও ৭৫/১( খাজা ২৭, লাবুশেন ২৬; জয়াসুরিয়া ১/২০)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেট জয়ী
সিরিজ: অস্ট্রেলিয়া ২-০ ব্যবধানে জয়ী
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে
দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।
রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।
এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
ঢাকা/হাসান/সাইফ