ঢাকার আদাবরে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের (খানি) খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার বিষয়ক প্রচারাভিযান প্রকল্পের বার্ষিক পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খানি সেক্রেটারিয়েট সংগঠন পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক- প্রান এর আয়োজনে শনিবার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন জেলায় খাদ্য অধিকার বিষয়ে কর্মরত খানির সদস্য সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা এ পরিকল্পনা সভায় যোগ দেন। 

এই সভায় খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার উপায়, সুযোগ ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটসহ মুদ্রাস্ফীতির এই সময়ে কীভাবে দেশের খাদ্য ও নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা যায় তা নিয়েও আলোচনা করা হয়। খানির সহসভাপতি ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রেজাউল করিম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন প্রানের প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্সের প্রধান মোহন কুমার মণ্ডল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন- লিডের প্রধান অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান, এনজিও ফোরাম অন এডিবির প্রধান নির্বাহী রায়ান হাসান, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চের প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী, বিন্দু নারী উন্নয়ন সংস্থার প্রধান জান্নাতুল মাওয়া, কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি মো.

আলাউদ্দিন শিকদার প্রমুখ। তারা সকলেই দেশের সর্বস্তরের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী এক বছরের সম্ভাব্য কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।  

রায়ান হাসান বলেন, আজকের এ সভায় খাদ্য অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সম্পৃক্ত অনেক বিষয় উঠে এসেছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে খানির বিভিন্ন সদস্য সংস্থা বিভিন্ন কাজ করে। খানির সদস্যরা একটি অভিন্ন লক্ষ্য নিশ্চিত করে তা বাস্তবায়নে কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিই আমাদের মূল কাজের ক্ষেত্র হওয়া উচিত। রাজনৈতিক অর্থনীতির লেন্স থেকে সাপ্লাই ভ্যাল্যু চেইন স্পষ্টভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি।’

রেজাউল করিম সিদ্দিকী বলেন, বাজারে যখন কোনো কিছুর দাম বেড়ে যায় আমরা সবাই উদগ্রিব হয়ে পড়ি, কিন্তু বাজারে কোনো কিছুর দাম পড়ে গেলে যখন কৃষককে তার উৎপাদিত ফসল ফেলে দিতে হয় তখন আমরা আর কিছু বলি না। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সবচেয়ে বড় অবদান যে কৃষকের, তাদের ব্যবসায়িক দক্ষতা তৈরি করতে হবে যেন তারা বুঝতে পারে কোন ফসল কতটা চাষ করতে হবে। বাজার বলতে আমরা শুধু ঢাকাকেই বুঝি। তাই প্রান্তিক কৃষকেরাও তাদের ফসল নিয়ে স্থানীয় বাজার ছেড়ে ঢাকামুখী হতে চায়। আমাদের স্থানীয় চাহিদা অনুসারে বাজার তৈরি নিয়ে ভাবতে হবে।

খানির সেক্রেটারিয়েট ও পরিকল্পনা সভার আয়োজক প্রানের প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ বলেন, আমরা যারা কৃষকদের পক্ষে কথা বলছি, আমাদের মাথায় এখনও খোরপোশের কৃষি রয়ে গেছে। আমরা নতুন পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করতে চাচ্ছি না। অনেক জায়গায় সমাধান হিসেবে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং আসছে, তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এটা আসলে কর্পোরেট ফার্মিংয়ের প্রথম স্টেজ।

অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা প্রান্তিক কৃষক, দরিদ্র কৃষক, আদিবাসী কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করতে জোর দিতে চাই। তাই আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক খসড়া তৈরি করছি যেখানে ‘রাষ্ট্র খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারে’ -এমন ধারার পরিবর্তে, ‘রাষ্ট্র খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে’, ব্যবহার করা হবে। এতে খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িত ও বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এই পরিকল্পনা সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল খানি বাংলাদেশের সদস্যদের মধ্যে সংহতি গড়ে তোলা, যা বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাগুলোকে দৃঢ় করবে। এছাড়া আলোচনায় বক্তারা নারী কৃষকের স্বীকৃতি, তরুণদের কৃষি ও খাদ্য প্রচারাভিযানের সঙ্গে যুক্ত করা, নদী রক্ষা, কৃষকদের পানি বণ্টন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, স্থানীয় বীজ সংরক্ষণ ও বীজ বণ্টন, কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেন। সভায় ত্রিশটিরও বেশি সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ রদর আম দ র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোনো দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলে জোট হতে পারে: সারজিস আলম
  • অবিলম্বে গণভোটের দাবি চাকসুর
  • ক্ষমতার লোভে কেউ কেউ ধর্মকে ব্যবহার করছে: আব্দুস সালাম
  • উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
  • ভুল শুধরে জনগণের আস্থা ফেরানোর সুযোগ এই নির্বাচন: আইজিপি
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম