১৬ দিনে চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের আন্দোলন, শাহবাগ অবরোধ
Published: 3rd, November 2025 GMT
চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের আন্দোলন ১৬তম দিনে গড়িয়েছে। আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বর থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করলে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে তা পুলিশের বাধায় থেমে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা।
শাহবাগে টানা পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান শেষে আন্দোলনকারীরা আবারও রাজু ভাস্কর্যের সামনে ফিরে যান। তাঁরা ঘোষণা দেন, আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ‘কাফনের কাপড় পরে’ যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করবেন।
প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের সভাপতি রুবেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার বারবার সময় নিচ্ছে, কিন্তু কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। আমরা যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছি। এবার বাস্তব পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা জানান, গত ২৯ অক্টোবর প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক নাজমুল ইসলাম সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে সময় তাঁরা তাঁদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন। ওই সময়সীমা আজ সোমবার বেলা দুইটায় শেষ হয়। দাবি বাস্তবায়নের অগ্রগতি না থাকায় তাঁরা আবারও যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন।
আরও পড়ুনকুয়েতে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বেতন ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা০২ নভেম্বর ২০২৫১৯ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত চারবার যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন তাঁরা। কিন্তু প্রতিবারই পুলিশ শাহবাগে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দিয়েছে। আজও একই চিত্র দেখা যায়। বেলা তিনটার পর রাজু ভাস্কর্য থেকে পদযাত্রা শুরু করলেও শাহবাগে এসে তা থেমে যায়।
এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘আমরা চাকরি চাই, ভিক্ষা নয়’—এমন স্লোগান দিতে থাকেন। শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় যানজটের। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারিকেড বসায়। আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, ২৬ অক্টোবর তাঁদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ও কিছু বহিরাগত ব্যক্তি হামলা চালান। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। তাঁরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান।
আরও পড়ুনপ্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ৪ ঘণ্টা আগেসংহতি ও পাঁচ দফা দাবি
এদিন শাহবাগে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনে সংহতি জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের পাঁচ দফা দাবি দ্রুত মেনে নেওয়ার দাবি জানান তিনি। চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে প্রতিবন্ধী নাগরিক অধিকার সুরক্ষা প্ল্যাটফর্ম। প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের পাঁচ দফা দাবি হলো প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রতি দুই বছর পরপর বিশেষ নিয়োগের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বিদ্যমান অভিন্ন জাতীয় শ্রুতলেখক নীতিমালা সংশোধন করা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠদানসংক্রান্ত সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম ও পিএইচটি সেন্টারগুলোর শূন্য পদগুলো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য সংরক্ষণ করে বিশেষ নিয়োগের ব্যবস্থা করা এবং সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আবেদনযোগ্য বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করা।
আরও পড়ুনইউরোপে পাইলটদের বেতন কোন দেশে কত ১২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’