পারিবারিক বিরোধের জেরে চিত্রনায়িকা পপির বিরুদ্ধে করা জিডির তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সোনাডাঙ্গা থানা-পুলিশ। সম্প্রতি খুলনার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ আবেদন করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক খালিদ উদ্দিন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

শফিকুল ইসলাম।

জিডির তদন্তের বিষয়ে ওসি মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিত্রনায়িকা পপির বিরুদ্ধে জিডি করেছেন তাঁর ছোট বোন। সেটির তদন্তের অনুমতি চেয়ে খুলনা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর জিডির ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হবে।’

অবশ্য ওসি শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পপির বোনের জিডির পর আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে ঘটনার খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি। যতটুকু জেনেছি, তাতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জমি দখলের কোনো বিষয় সেখানে নেই। ওয়াসা ও বিদ্যুতের নামজারির বিষয়ে তাঁদের মধ্যে বাতচিত হয়েছে। অভিযোগকারী পপির ছোট বোন যে ফুটেজ আমাদের দিয়েছিল, সেটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে পপি মারধর করেছেন এমন কোনো ফুটেজ সেখানে নেই। যা আছে, সেটি হচ্ছে কোনো নায়িকা গেলে উৎসুক লোকের ভিড় জমে যায়, সেখানেও তাই হয়েছিল। তবে ফুটেজে একটি মোবাইল ফোনসেট পড়ে যেতে দেখা গেছে।’

এ বিষয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) শেখ মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘চিত্রনায়িকা পপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, সেটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে। একজন এসআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষেই বলা সম্ভব হবে, বাস্তবে সেখানে কী ঘটনা ঘটেছিল। তদন্ত করে যা পাওয়া যাবে, তা আদালতকে প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানানো হবে।’

মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে পপির বিরুদ্ধে ৩ ফেব্রুয়ারি খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় অভিযোগ করেন পপির বোন ফিরোজা বেগম খেয়ালি।
পপি, তাঁর মা ও তাঁর ছোট বোনের সঙ্গে কথা বলে যে চিত্র পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে পপির কাছে খুলনার ওয়াসা ও বিদ্যুৎ অফিস থেকে দুটি পৃথক নোটিশ আসে। সেই নোটিশ পাওয়ার পর পপি তাঁর স্বামী আদনান কামালকে নিয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গায় যান ৩ ফেব্রুয়ারি। তখন সময় দুপুর ১২টা। পপি ও তাঁর স্বামী বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান, বিদ্যুৎ ও ওয়াসার কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে কাজ করছেন। পপি তাঁর জমি ও অন্যান্য প্রমাণপত্র তাঁদের দেখাচ্ছিলেন।

অন্যদিকে পপির মা মরিয়ম বেগম ও তাঁর বোন ফিরোজা বেগম খেয়ালি তাঁদের সপক্ষের কাগজপত্রসহ অন্যান্য যুক্তি তুলে ধরছিলেন। একপর্যায়ে পপির ছোট বোন ফিরোজা বেগমের সঙ্গে একজন স্থানীয় নারীকে দেখতে পান। এ নিয়ে পপি তাঁর বোনের কাছে জানতে চান, ওই নারী কে? এ নিয়ে এক কথা দুই কথায় হঠাৎ দুই বোনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।

পপির বোন ফিরোজার দাবি, পপি তাঁর গায়ে হাত তুলেছিলেন। মারধর করেছেন। পপির স্বামী তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এর প্রমাণপত্র তাঁদের কাছে আছে। সিসিটিভির ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। তবে মারধর কিংবা হুমকির অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেন চিত্রনায়িকা পপি।

পপির দাবি, তাঁর সম্পত্তি জোর করে ভোগদখল করছেন তাঁর মা ও ভাইবোনেরা। তাঁর বৈধ জমিতে বিদ্যুৎ ও ওয়াসার মিটার নেওয়ার জন্য খুলনার সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করেছিলেন। নিয়মমাফিক আবেদন যাচাইবাছাই শেষে সরেজমিনে কর্মকর্তারা সেদিন এসেছিলেন। তাঁর জমির কাগজ থেকে শুরু করে সব প্রমাণ দেখাচ্ছিলেন। কোনো কিছু না বলে তাঁর বোন ফিরোজা তাঁকে মারধর করেন। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাঁর যে সম্মান, সেটি ধ্বংস করার জন্য মা ও ভাইবোনেরা মিলে তাঁর নামে থানায় মিথ্যা জিডি করেছেন। এই জিডির কোনো সত্যতা নেই।

পপি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার মা ও ভাইবোনের অনেক নির্যাতন সহ্য করেছি। আর সহ্য করব না। ওরা আমার নামে অনেক মিথ্যা, কুৎসা রটিয়ে যাচ্ছে। আমি যাদের জন্য এত করলাম, আমার জীবনের সর্বস্ব নিংড়ে দিলাম, তারাই আমাকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমার মানসম্মান নষ্ট করছে। আমাকে হয়রানি করছে। আমি তাঁদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা নেব।’

অপর দিকে অভিযোগকারী পপির বোন ফিরোজা বেগম প্রথম আলোকে বললেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সেদিন পপি আমাকে মারধর করেছে। আর তাঁর স্বামী আমাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। আমি নিজের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের জন্য বাধ্য হয়ে নিজের বোনের বিরুদ্ধে জিডি করেছি। আমি বিচার চাই।’

মায়ের হাত ধরে পপির সিনেমাযাত্রা

ছয় ভাইবোনের মধ্যে পপি সবার বড়। তাঁর বাবা আমির হোসেন পেশায় একজন ঠিকাদার। মা মরিয়ম বেগম গৃহিণী। তাঁর জন্ম খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গায়। তিনি যখন খুলনার একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়তেন, তখন লাক্স আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতা চলছিল। পত্রিকায় এই খবর দেখে তাঁর মা পপির ছবি পাঠান। এরপর মায়ের ইচ্ছায় পপি ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

মা মরিয়ম বেগমের সঙ্গে চিত্রনায়িকা পপি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম রধর ক কর ছ ন র জন য তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

গুম করা হতো তিনটি ধাপে 

শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তিদের কীভাবে গুম করা হতো, সেটি গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কমিশন বলেছে, ‘তিন স্তরের পিরামিড’–এর মাধ্যমে গুমের বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হতো।

এই পিরামিডের সর্বোচ্চ স্তরে ছিল ‘কৌশলগত নেতৃত্ব’। যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ছিলেন।

পিরামিডের দ্বিতীয় স্তরে ছিলেন বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। আর পিরামিডের তৃতীয় স্তরে থাকা বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেন।

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৪ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ: আ স্ট্রাকচারাল ডায়াগনসিস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে গুমের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ ৩৪৫ জন।

আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থায় গত সাড়ে ১৫ বছরে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, যেখানে গুমের ঘটনায় নীরব সম্মতি থাকার বিষয়টি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছিল বিষয়টি (গুমের মতো গুরুতর অপরাধেও নীরব থাকা)। গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি তখন অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হতো না।

■ গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কাছে ১,৮৫০ অভিযোগ এসেছে।  ■ যাচাই-বাছাই হয়েছে ১,৩৫০টি। ■ এখনো নিখোঁজ ৩৪৫ জন।

গুমের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার মধ্যে নীরবতা কেন ছিল, তা খুঁজেছে কমিশন। এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে তখন বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ভেতরে বিষয়টি (গুম) অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতো না। বরং সেগুলোকে হয়তো একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ হিসেবে দেখা হয়েছে, যা বাহিনীর অভ্যন্তরে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ এবং ‘জনশৃঙ্খলা রক্ষার’ প্রয়োজনে স্বাভাবিক ও দায়িত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে এসব কাজকে বিচ্যুতি নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ অনুযায়ী নিয়মিত দায়িত্ব হিসেবেই পালন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত একজন কর্মকর্তার নথিতে তৎকালীন র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের (পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে অবসরে যান, এখন পলাতক) মূল্যায়ন ছিল, ওই কর্মকর্তা কর্মদক্ষতার দিক থেকে ‘খুবই সন্তোষজনক’ এবং তাঁর নেতৃত্বগুণ ‘উচ্চমানের’।

ওই কর্মকর্তা সম্পর্কে বেনজীর আরও লিখেছিলেন, তিনি ‘ভদ্র’, ‘সৎ স্বভাবের’ এবং ‘অত্যন্ত দক্ষ’। ওই কর্মকর্তা সম্পর্কে নথিতে কোনো নেতিবাচক তথ্য লেখা হয়নি। যদিও তিনি গুমের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।

অবশ্য অন্য একজন কর্মকর্তার বিষয়ে নথিতে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অনেক অভিযোগ লেখা আছে। এমনকি সেখানে বিস্তারিতভাবে বলা আছে, ওই কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন পরিচালক জিয়াউল আহসানের (পরে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার বা এনটিএমসির মহাপরিচালক হন, এখন কারাগারে) কাছে ‘ফিশ থেরাপি’ (মাছ উপহার) পাঠাতেন। তবে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো তথ্য নথিতে উল্লেখ নেই।

গণ–অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে। এই কমিশনকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ (সত্য উন্মোচন) শীর্ষক প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয় গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। সেখানে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।

কমিশনের প্রতিবেদনে একটি বন্দিশালায় প্রহরীর দায়িত্ব পালন করা একজনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। বন্দিশালায় প্রথম গিয়ে ওই প্রহরী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘বন্দীদের সাথে কখনো স্বাভাবিক আচরণ করা যাবে না, যেটা স্বাভাবিক মানুষের সাথে করা হয়। তাদের সবকিছু থেকে বঞ্চিত রাখতে হবে, সব অধিকার থেকে। যাতে সে কষ্ট অনুভব করতে পারে।’

ওই প্রহরী কমিশনকে বলেছেন, বন্দিশালার দায়িত্ব থেকে তিনি অব্যাহতি চেয়েছিলেন। তখন তাঁকে বলা হয়েছিল, দায়িত্ব পালন না করলে তাঁর প্রাণের ঝুঁকি আছে।

উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে গুম

গত ৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুমে জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই ডিজিএফআইয়ের (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর) সাবেক মহাপরিচালক এবং একজন সাবেক পরিচালক। তাঁরা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদীন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদ-উল-ইসলাম।

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ছয় কর্মকর্তা যখন ডিজিএফআইয়ের উচ্চ পদে ছিলেন, তখন সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও হাসিনুর রহমান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান গোপন বন্দিশালায় আটক ছিলেন।

মেজর জেনারেল পদমর্যাদার একজন সেনা কর্মকর্তা গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি যখন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (সিটিআইবি) পরিচালক ছিলেন, তখন আমান আযমীর গুমের বিষয়ে তিনি সাইফুল আলম ও আহমেদ তাবরেজ শামসকে জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তা কমিশনকে বলেছেন, আমান আযমী ও মাইকেল চাকমাকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। 

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা ডিজিএফআইয়ের অন্তত তিনজন কর্মকর্তা গত নভেম্বর পর্যন্ত পিআরএলে (অবসরোত্তর ছুটি) ছিলেন। তাঁরা তখনো সেনা আইনের অধীন ছিলেন। বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাঁদের সেনাবাহিনীর অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ত। এখন তাঁদের হদিস নেই।

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সমন্বিতভাবে অন্যায় নির্দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত। কারণ, কর্মকর্তারা অন্যায় আদেশ মানতে বাধ্য নন। এই নীতির কথা সবাই জানতেন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কর্তব্যে চরম অবহেলা ছিল। তাঁরা অধস্তনদের দিকনির্দেশনা বা মানসিক সহায়তার কোনো উদ্যোগ নেননি।

এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের ন্যায়সংগত আদেশ পালন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে কোনো অন্যায় আদেশ পালনে কেউ বাধ্য নন। গুম–খুনের আদেশ যাঁরা বাস্তবায়ন করেছেন, তাঁদের বিচক্ষণতার অভাব রয়েছে। এসব অন্যায় আদেশ বাস্তবায়ন করা তাঁদের দায়িত্ব নয়, সেটি তাঁরা অনুধাবন করতে পারেননি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বিচারহীনতার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প
  • খামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দেন ট্রাম্প
  • সাংবাদিক পরিচয়ে গেস্ট হাউসের কক্ষে কক্ষে তল্লাশি, দম্পতির কাছে বিয়ের প্রমাণ দাবি
  • ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন
  • চলতি মাসের ১৫ দিনে করোনায় ৪ জনের মৃত্যু
  • গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে প্রপাগান্ডার সয়লাব
  • কারাগারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ১
  • রাতারাতি তারকা হলে দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন: রিচি
  • গুম করা হতো তিনটি ধাপে