‘বলার মতো’ অগ্রগতির প্রতীক্ষায় ১৩ বছর
Published: 11th, February 2025 GMT
প্রতীক্ষায় স্বজন-সহকর্মীর কেটে গেছে ১৩ বছর। এই লম্বা সময়েও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যায়নি। ক্ষমতার পালাবদলের পর মামলাটির তদন্তে ছয় মাস সময় বেঁধে দিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের তিন মাসের তদন্তেও ‘বলার মতো’ অগ্রগতি নেই। সেনা-পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা, সাংবাদিক নেতা, টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকসহ ৬২ জনকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কারও কাছ থেকেই মেলেনি রহস্য সমাধানের সূত্র। এ পর্যন্ত ১১৫ বার পেছানো হয়েছে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়।
স্বজনরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করে মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার টাস্কফোর্স গঠন করে রহস্য উদ্ঘাটনের উদ্যোগ নিয়েছে– এটা আশার কথা। তবে তদন্তের ফল দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে যেনতেনভাবে তদন্ত শেষ না করে প্রকৃত সত্য প্রকাশের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
টাস্কফোর্সের প্রধান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (চলতি দায়িত্ব) মোস্তফা কামাল সমকালকে বলেন, এই মামলার ব্যাপারে যারা তথ্য দিতে পারবেন বলে মনে হয়েছে বা বিভিন্ন সময়ে যাদের নাম অনেকে বলেছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য মেলেনি। কেউ বলছেন, তিনি আরেকজনের কাছে শুনেছিলেন। কেউ বলছেন, ইউটিউবে দেখেছিলেন। সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ কেউ দিতে পারেননি। এরকম শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, এটা তো সত্য। এখনও আমাদের হাতে সময় আছে, আমরা
রহস্য উদ্ঘাটনে সম্ভাব্য পাঁচ-সাতটি পথের সব ধরে চেষ্টা চালাচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না হলে প্রয়োজনে তদন্তের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করা হবে।
তদন্ত সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান, সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মনজুরুল আহসান বুলবুল, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, তাঁর ভাই মাকসুদুর রহমান, সাংবাদিক জ ই মামুন এবং সাগর-রুনির সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য নেওয়া হয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ২০১২ সালে লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে মাহফুজুর রহমান দাবি করেছিলেন, পরকীয়ার বলি হন সাগর-রুনি। তাদের বাসায় মদের আড্ডা বসত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তখন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক এক অনুষ্ঠানে বলেন, হত্যার পর মাহফুজুর রহমানের ভাই-ব্রাদার-ভাতিজার নাম সবার মুখে মুখে ছিল। সহজেই অনুমান করতে পারি, এই হত্যার সঙ্গে মাহফুজুর রহমান সরাসরি জড়িত। এসব প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মাহফুজুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তখন সাংবাদিকরা খোঁচাখুঁচি করছিলেন, তাই রাগের মাথায় বলেছি, এগুলো সত্য নয়। কেউ কেউ বলেছিলেন, জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তিনিও নতুন কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, র্যাবের কর্মকর্তা হিসেবে ঘটনাটি জানার পর সকাল ৮টার দিকে ওই বাসায় উপস্থিত হন। আবার যিনি জিয়াউলের সম্পৃক্ততার দাবি করেছিলেন, তিনি এখন বলছেন, ইউটিউবের আলোচনায় এমন শুনেছিলেন। আবার বিভিন্ন খবরে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চলে যাচ্ছিল, তার ভিডিও করেছিলেন সাগর বা রুনি। কিন্তু সেই ভিডিওর অস্তিত্ব মেলেনি।
স্বজনের আশাবাদ, বের হবে প্রকৃত সত্য
মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, বর্তমান সরকার টাস্কফোর্স গঠন করায় আমরা কিছুটা আশাবাদী। এবার যেন সত্যিটা বের হয়ে আসে। যেই জড়িত থাক না কেন, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রকৃত ঘটনাটি যেন তুলে আনা হয়। কোনো মিথ্যা গল্প সাজিয়ে নিরপরাধ কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়। এর আগে তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। র্যাবকে তদন্ত করতে দেওয়াই হয়েছিল ঘটনা ধামাচাপা দিতে। তিনি জানান, সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মিহির সরওয়ার মেঘ এ বছর এ-লেভেল পরীক্ষা দেবেন। তিনি ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি জার্সি ডিজাইন করে সুনাম কুড়িয়েছেন।
সাগরের মা সালেহা মনির বলেন, নতুন তদন্তে সাগর-রুনির খুনি শনাক্ত হবে বলে আশা করছি। এ ঘটনাকে চুরি-ডাকাতি বলে উপস্থাপনের চেষ্টা করলে আমি মেনে নেব না। কারণ, ডাকাতি করতে গেলে তারা অস্ত্র নিয়ে যাবে। রান্নাঘরের বঁটি-চাকু দিয়ে কেন খুন করবে? যেভাবে মেরেছে, তাতে মনে হয় খুনির প্রচণ্ড আক্রোশ ছিল। কিন্তু কী নিয়ে আক্রোশ? সেটা জানাতে হবে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ফ্ল্যাট থেকে সাগর-রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সাগর ছিলেন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক, আর রুনি এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।
মাছরাঙার প্রধান সম্পাদক রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, আগের সরকারের সময়ে তদন্তে হয়তো এমন কাউকে পাওয়া গিয়েছে, যার কথা প্রকাশ করা যাচ্ছিল না। এখন তো সেই পরিস্থিতি নেই। তাই খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে বাধা দেখি না।
তদন্তের গতিপথ
সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় মামলা হয় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায়। চার দিনের মাথায় তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি। ৬২ দিন পর সংস্থাটি তদন্তে ব্যর্থতা স্বীকার করলে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটি র্যাবে স্থানান্তর করা হয়। ওই বছরের ২৬ এপ্রিল পুনঃময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলা হয় দু’জনের লাশ। তখন ভিসেরা আলামতসহ আরও কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই র্যাব বনানী থানার একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুণ, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। এ ছাড়া ওই মামলায় বিভিন্ন সময়ে রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ব্যাপারে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, সঠিকভাবে দোষী নির্ণয় করতে যতদিন সময় লাগে, তাদের (তদন্ত সংস্থাকে) ততটুকু সময় দিতে হবে। সেটা যদি ৫০ বছর হয়, ৫০ বছর দিতে হবে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এর দু’দিন পর তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার জানান, ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে। তবে আজও সেই অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি।
টাস্কফোর্স গঠন
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ায় চাঞ্চল্যকর ঘটনাটির তদন্তে টাস্কফোর্স গঠনের দাবি ওঠে। এর পর গত ২৩ অক্টোবর চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে পিবিআই প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়। গত ৪ নভেম্বর টাস্কফোর্স মামলার তদন্তভার নেয়। আগামী ৪ এপ্রিল তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে র্যাবের তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, বঁটি, ছুরির বাঁট, সাগর-রুনির পরনের কাপড় ও সাগরের হাত-পা বাঁধা কাপড় ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। হত্যায় সন্দেহভাজন কয়েক ব্যক্তির ডিএনএ নমুনাও বিদেশি ল্যাবে পাঠানো হয়। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন তদন্ত সংস্থার হাতে এসেছে। তবে তা দিয়ে আসামি শনাক্তের জন্য কার্যকর ক্লু মেলেনি।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ জ ঞ স ব দ কর র তদন ত তদন ত র র সময় সরক র বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।