‘বুমরাকে ছাড়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফি রোনালদোবিহীন বিশ্বকাপের মতো’
Published: 11th, February 2025 GMT
বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফির শেষ ম্যাচে নতুন করে পিঠের চোটে পড়েন যশপ্রীত বুমরা। চোট থেকে সেরে না উঠলেও তাঁকে রেখেই আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্কোয়াড ঘোষণা করে ভারত।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) আশা ছিল, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগেই শতভাগ ফিট হয়ে উঠবেন বুমরা। কিন্তু পিঠে স্ক্যান করানোর পর জানা যায়, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির গ্রুপ পর্বে একাধিক ম্যাচ মিস করবেন ৩১ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার।
আট দলের টুর্নামেন্টে ভারত গ্রুপ পর্বে খেলবে তিন ম্যাচ। এরপর সম্ভাব্য সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। এর অর্থ, বুমরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ফিরলেও শেষ দিকে এক–দুই বা সর্বোচ্চ তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন। কিন্তু নির্বাচকেরা সেই ঝুঁকি নেবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত শিগগিরই জানাবেন। কারণ, স্কোয়াডে পরিবর্তন আনার শেষ দিন আজ।
চোটের কারণে শেষ পর্যন্ত বুমরা যদি স্কোয়াড থেকে ছিটকে পড়েন, তা ভারতের জন্য বিশাল এক ধাক্কা হবে। টুর্নামেন্টের আকর্ষণ বিবেচনায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও অনেকটা রং হারাবে। ইংল্যান্ডের সাবেক পেসার স্টিভ হার্মিসনের মতে, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বুমরার অনুপস্থিতি রোনালদোবিহীন বিশ্বকাপের মতো হবে।’
২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখা বুমরা কয়েক বছর ধরেই ভারতের বোলিং–আক্রমণের প্রধান শক্তি। এর মধ্যে ২০২৪ সালে ছিলেন সেরা ফর্মে। গত জুনে ভারতের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে ভূমিকা রাখায় পেয়েছিলেন টুর্নামেন্টসেরার স্বীকৃতি। বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারত ৩–১ ব্যবধানে হারলেও বুমরাই হয়েছিলেন সিরিজসেরা। ২০২৪ সালে আইসিসির বর্ষসেরার খেতাবও জিতেছেন তিনি। ফর্মের তুঙ্গে থাকা বুমরাকে তাই যেকোনো মূল্যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্কোয়াডে রেখে দেওয়ার পক্ষে হার্মিসন।
ইংল্যান্ডের হয়ে ২০০৪ ও ২০০৬ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলা হার্মিসন টকস্পোর্ট ক্রিকেটকে বলেন, ‘এটা (বুমরার না–থাকা) সেরা স্ট্রাইকার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে ছাড়া ফুটবল বিশ্বকাপে যাওয়ার মতো। ১৫ বছর আগে রোনালদোর কোনো বিকল্প ছিল না, যতক্ষণ না তাকে বসিয়ে রাখতেন। বুমরাও ভারতের জন্য তেমন একজন। আমি কল্পনা করছি, বুমরাকে ছাড়া ভারত কী করবে।’
৪৬ বছর বয়সী হার্মিসন আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, আপনি কখনোই যশপ্রীত বুমরার বদলি পাবেন না। এমনকি ওকে দলে পাওয়ার জন্য ফাইনালের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই। কারণ, সে যশপ্রীত বুমরা, বিশ্বের সেরা (বোলার)। ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এটাই আমার মতামত।’
ভারতীয় নির্বাচকদের একটা পরামর্শও দিয়েছেন হার্মিসন, ‘বুমরাকে শুধু স্কোয়াডে রেখে দিন এবং সেডান চেয়ারে করে নিয়ে আশপাশে ঘুরে বেড়ান। তাতে ভারতের স্কোয়াড ১৪ জনের হবে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোর জন্য এটাই যথেষ্ট। ভারত ওকে সেমিফাইনাল থেকে পেতে পারে কিংবা আরও পরে (ফাইনালে)। শেষ পর্যন্ত সে যদি ফিট হয়ে না ওঠে, তাহলে অন্য কেউ চোটে পড়লে তার বদলি নেওয়া যাবে।’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতি হিসেবে হার্মিসনের ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলছে ভারত। নাগপুর ও কটকে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে এরই মধ্যে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে রোহিত শর্মার দল। আগামীকাল শেষ ম্যাচ বুমরার জন্মশহর আহমেদাবাদে। কিন্তু আহমেদাবাদে না গিয়ে বুমরা গেছেন বেঙ্গালুরুতে পিঠের সর্বশেষ অবস্থার পরীক্ষা করাতে।
ইএসপিএন ক্রিকইনফো জানিয়েছে, বুমরা এখনো পিঠে ব্যথা অনুভব করছেন। পুরোপুরি সেরে উঠতে আরও পাঁচ সপ্তাহ সময় লাগবে। তত দিনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষ হয়ে যাবে। বুমরাকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে বাদ দেওয়া হলে কপাল খুলতে পারে আরেক ফাস্ট বোলার হর্ষিত রানার।
হাইব্রিড মডেলের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু ১৯ ফেব্রুয়ারি। মূল আয়োজক পাকিস্তান হলেও ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলবে দুবাইয়ে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের অভিযান শুরু ২০ ফেব্রুয়ারি, প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।