রোজার আগেই বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা পাওনা পাবেন: শ্রম উপদেষ্টা
Published: 12th, February 2025 GMT
পবিত্র রমজান শুরুর আগেই বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। আগামী ১ মার্চ রমজান শুরু হতে পারে। তবে পাওনা পরিশোধের জন্য টাকার সংস্থান কোথা থেকে এবং কীভাবে হবে, তা পরিষ্কার করে জানাতে পারেননি তিনি।
সচিবালয়ে আজ বুধবার ‘বেক্সিমকো শিল্পপার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র সপ্তম বৈঠক শেষে শ্রম উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা জানান। কমিটির প্রধান শ্রম উপদেষ্টা। এ সময় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দুজন বৈঠকেও অংশ নেন।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা গত বৈঠকে (২৮ জানুয়ারি) বলেছিলাম, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের বেক্সিমকোর লে-অফ কোম্পানিগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। ওই সিদ্ধান্তের অগ্রগতি জানতেই আজ বৈঠক ডাকা হয়।’
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘ভালো অগ্রগতি হয়েছে। বেক্সিমকোর শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাগুলো চলতি মাসের মধ্যেই পরিশোধ করা হবে। সমস্যা সমাধানে যে টাকা দরকার, তার ব্যবস্থা হচ্ছে। এসব নিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি আমরা আবার বসব। আশা করি, তখন এটা চূড়ান্ত হবে। যাঁর যে পাওনা রয়েছে, তা তাঁদের ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে। রোজা শুরু হওয়ার আগেই আমরা পাওনাগুলো দিয়ে দিতে চাই।’
হিসাব করে প্রত্যেকের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘ভেবেছিলাম, বিষয়টা আজই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু হলো না।’
কত টাকা লাগতে পারে এবং পাওনাদার শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যাই–বা কত, এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, টাকার পরিমাণ আন্দাজে বলা যাচ্ছে না। আর শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা আগেই জানানো হয়েছিল। এ সংখ্যা ২৭ হাজারের বেশি। নতুন প্রশাসক মাত্র ৫ ফেব্রুয়ারি বসেছেন। এখনো পুরো বিষয়টা তাঁর আয়ত্তে আসেনি।
বেক্সিমকো গ্রুপের চালু দুই কোম্পানিতে (বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকস) থাকা উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির টাকা, নাকি অর্থ বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে টাকা নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টা ১৮ তারিখেই জানা যাবে। অনেক বিকল্প আছে। অর্থ বিভাগ থেকে হতে পারে। শেয়ার বিক্রি নিয়ে কিছু ঝামেলা আছে, সেগুলো দূর করা যায় কি না, দেখা হচ্ছে। এর মধ্যেই জানা যাবে মোট কত টাকা লাগবে।
শ্রমিকদের বিকল্প চাকরির ব্যবস্থাবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁরা এখনো বেক্সিমকোর শ্রমিক। আমি তো বলতে পারি না ১০০ জন এখানে যান, ৫০০ জন ওখানে যান। তবে তাঁরা সবাই দক্ষ। তাঁদের বেকার থাকার আশঙ্কা নেই।’
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই এতগুলো লোককে বেকার থাকতে দিতে পারি না। তাঁরা কেউ নতুন শ্রমিক নন। একটা ব্যবস্থা হবেই। চাকরি হারিয়ে তাঁরা বাড়ি চলে যাক, এটা সরকারের নীতি নয়।’ পোশাক খাতে জনবলের ৫ থেকে ৭ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে জানিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, কিছু না কিছু একটা ব্যবস্থা হবে। এটা নিয়েও কাজ চলছে। ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) আছে, বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আছে। তাদের মাধ্যমে কাজ হচ্ছে।
বেক্সিমকো শিল্পপার্কের আওতায় থাকা ৩১ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকঋণ ২৮ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। এ ঋণের বিপরীতে জমি, ভবন, যন্ত্রপাতি, শেয়ার, ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ইত্যাদি মিলে বন্ধক রয়েছে ৪ হাজার ৯৩২ কোটি টাকার সম্পদ। বন্ধক থাকা সম্পদ মোট ঋণের ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। বন্ধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১২টির অস্তিত্ব নেই বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার বিপরীতে ঋণ রয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। অস্তিত্বহীন ঋণের প্রায় পুরোটাই জনতা ব্যাংক থেকে নেওয়া।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।