সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলী ঘিরে একসময় জমজমাট ছিল সিলেট বিএনপির রাজনীতি। এক পর্যায়ে তাদের অনুসারী নেতাকর্মী দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। দাঁড়িয়ে যায় বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ। সাইফুর রহমান মারা গেলে সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির হাল ধরেন। আবুল কাহের শামীম, ডা. শাহরিয়ার হোসেন, নাসিম হোসেইনসহ সাইফুর রহমান বলয়ের অনেকেই আরিফুল হকের সঙ্গে থাকায় ধীরে ধীরে তিনি নিজের অবস্থান মজবুত করেন।

অন্যদিকে ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর একক কোনো নেতা এ বলয়ের নেতৃত্ব দিতে পারেননি। তাঁর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, জেলা বিএনপির সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গাফফার, সিনিয়র সহসভাপতি দিলদার হোসেন সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সামসুজ্জামানসহ একাধিক নেতা ইলিয়াস আলীর গ্রুপে ছিলেন। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর সরাসরি মাঠে নামেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তাঁর বাবা সাবেক এমপি খন্দকার আব্দুল মালিকের পরিচয়ে রাজনীতিতে নেমে চমক দেখান। তিনি ২০১৮ সালে সিলেট-১ আসন থেকে দলের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ নির্বাচন করেন; লাভ করেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদও। 

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আরিফুল হক চৌধুরীও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনোনীত হন। এক দশক ধরে এ দুই নেতাকে ঘিরে চলছে সিলেট বিএনপির রাজনীতি। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতাই বলয়ের ব্যাপ্তি বাড়ানোয় সচেষ্ট। এমনকি গত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মী আছেন ফেরার অপেক্ষায়। ক্ষমা চেয়ে আবেদন করার পাশাপাশি তারা মুক্তাদির ও আরিফুলের কাছেও ধরনা দিচ্ছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আরিফুল হকের গ্রুপে আছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড.

এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর সহসভাপতি সালেহ আহমদ খসরু, জেলা সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন লস্কর, মহানগর সহসভাপতি সাদিকুর রহমান সাদিক, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদসহ অনেকে।

অন্যদিকে মুক্তাদিরের বলয়ে আছেন মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান লোদী কয়েস, সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, যুবদলের নজিবুর রহমান নজিব, ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুর, জেলা যুবদল সভাপতি মোমিনুল ইসলাম মোমিনসহ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের চার শীর্ষ নেতাসহ অনেকে।

সম্প্রতি আরিফুলের ডেরা ছেড়ে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, মইন উদ্দিন সুহেল, সৈয়দ মিসবাহসহ কয়েকজন মুক্তাদিরের গ্রুপে ভিড়েছেন। অন্যদিকে মুক্তাদির বলয় থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামালসহ কয়েকজন আরিফুলের ডেরায় গেছেন। এর মধ্যে আগামী সিটি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কয়েস লোদী মনোনয়ন চাইতে পারেন। মুক্তাদির সিলেট-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। একই আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন আরিফুল হক। তবে আরিফুলকে সিটি নির্বাচনে মেয়র হিসেবে ভাবতে পারে দল; রাজি না হলে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার জন্য বলতে পারে। বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে সিলেটে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের যত কমিটি হয়েছে, তাতে আধিপত্য রয়েছে খন্দকার মুক্তাদির বলয়ের। আরিফুল গ্রুপের নেতাকর্মী কমিটিতে খুব একটা ঠাঁই পাননি। সে জন্য অনেকে গ্রুপ বদলিয়েছেন বলে একাধিক নেতা সমকালকে জানিয়েছেন। তারা জানান, সিলেট কৃষক দলের কমিটি ছাড়া অন্য কোনোটির শীর্ষ পদে আরিফুল হকের লোক নেই। একসময়ে আরিফুলের সঙ্গে থাকা বহিষ্কৃত সাবেক সিটি কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফরহাদ চৌধুরী শামীমকে মুক্তাদিরের সঙ্গে দেখা গেছে। সম্প্রতি তাঁর উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে মুক্তাদিরকে অতিথি করেন শামীম। ওই দিন খন্দকার মুক্তাদির বলেন, শামীমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তিনি বিএনপির রাজনীতিতেই আছেন। অপরাধ ক্ষমা করলে তিনি দলে ফিরবেন।

এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচন করায় গত সিটি নির্বাচনের ৪৩ প্রার্থীকে এবং উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে বিএনপি, যারা দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মীর মধ্যে শামীম ছাড়াও রয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌহিদুল হাদী, সাবেক কাউন্সিলর সালেহা কবির শেপি, জেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব তুহিন, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রুকশানা বেগম শাহনাজ ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক উসমান হারুন পনির।

জানা গেছে, রাজনৈতিক পালাবদলের পর দণ্ড মওকুফের জন্য কেন্দ্রে আবেদন করেছেন বহিষ্কৃত নেতারা। শিগগির তাদের দলে ফেরানো হতে পারে। তাদের নিজ নিজ গ্রুপে নেওয়ার চেষ্টায় আছেন আরিফুল ও মুক্তাদির। অনেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

আরিফুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কারও সঙ্গে আমার বিরোধ নেই। আন্দোলন করতে গিয়ে যারা নির্যাতিত হয়েছে, যারা পরীক্ষিত কর্মী, তাদের কমিটিতে রাখা নিয়ে আমি সব সময় কথা বলেছি। সে জায়গা থেকে কারও সঙ্গে দূরত্ব হতে পারে। এখনকার প্রজন্মের ছেলেদের রাজনীতি সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা জন্মেছে। আমি তাদের সেই ধারণার পরিবর্তন করতে সব সময় রাজনীতি চর্চার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।

খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব কিংবা দলে বিভক্তির বিষয়টি স্বীকার না করে বলেন, আমরা অতীতে এক হয়ে আন্দোলন করেছি। সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ। দেশ ও দলকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ল হক চ ধ র ব এনপ র স ন ত কর ম র র জন ত আর ফ ল র র রহম ন ক দল র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার

স্বাধীনতার পর যারাই দেশ চালিয়েছে, তারা সবাই হিন্দুদের ব্যবহার করে শুধু নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার।

আজ শুক্রবার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাধীনতা চত্বরে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটির উদ্যোগে হিন্দু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়ন ও ডুমুরিয়া-ফুলতলাসহ দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে এখন প্রয়োজন ইসলামি সরকার। যাঁরা দাঁড়িপাল্লার জোয়ার দেখে ভয়-হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকিতে হিন্দুরা আর ভয় পাবে না। হিন্দুদের বাধা দিলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫৪ বছর যারা দেশ চালিয়েছে তারা সন্ত্রাস, দখলদারি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে হিন্দুদের শোষণ করেছে। জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের নির্মূল করা হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনতে চাই। লাঙলের শাসন দেখেছি, ধানের শীষের শাসন দেখেছি, নৌকার শাসনও দেখেছি। একটি দলই বাকি—জামায়াতে ইসলামী, তার প্রতীক দাঁড়িপাল্লা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে, আগামীতেও সেই বার্তা জনগণ দেবে।’

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দেড় হাজার শহীদ ও ৪০ হাজার আহতের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।

উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি দেব প্রসাদ মন্ডলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি আবুল খায়ের, শোভনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন, শরাফপুর সর্বজনীন পূজা মন্দিরের গোঁসাই সাধু প্রমথ গাইন, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহসভাপতি হরিদাস মন্ডল, কানাই লাল কর্মকার ও প্রশান্ত কুমার মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ গৌতম কুমার মন্ডল, পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার, মাগুরখালী ইউনিয়ন সহসভাপতি সুজিৎ কুমার সরকার, ধামালিয়া ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুন্ডু, রুদাঘয়া ইউনিয়ন সভাপতি বিপ্লব সরকার, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন সভাপতি কার্তিক চন্দ্র সরকার, খর্ণিয়া ইউনিয়ন সভাপতি নারায়ণ রাহা, মাগুরঘোনা ইউনিয়ন সভাপতি বিশ্বনাথ দাস, সাহস ইউনিয়ন সভাপতি তন্ময় মন্ডল, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি নিরঞ্জন রায়, রংপুর ইউনিয়ন সভাপতি তরুন কুমার মন্ডল, শোভনা ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির মহিলা সম্পাদক প্রিয়ংকা মন্ডল, মাগুরখালী ইউনিয়ন সভাপতি প্রদীপ কুমার সরকার, আটলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অনিমেষ মন্ডল, গুটুদিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মনোরঞ্জন মন্ডল, শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি স্বদেশ হালদার, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অরুন কুমার আচার্য প্রমুখ।

হিন্দু সম্মেলন ঘিরে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে বর্ণিল মিছিল এসে জমায়েত হয়। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল ডুমুরিয়া সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

হিন্দু সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লার পক্ষে হোক। আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করতে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
মতুয়া সংঘের সভাপতি সুদীপ্ত কুমার সুন্দর মন্ডল বলেন, ‘আমরা আর সংখ্যালঘু বলে পরিচয় শুনতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার হিন্দুদের দাবিতে কাজ করেনি। এবার প্রমাণ হবে, হিন্দু মানেই একটি নির্দিষ্ট দল নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রদলের কমিটি নেই ১৪ মাস, স্থবির কার্যক্রম
  • মামলায় ঝুলে গেছে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন
  • গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করলেন সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আদিবা হোসেন
  • সম্মেলনের প্রায় তিন মাস পর রাজশাহী মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি
  • হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার