‘আইএমএফ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি আসতে পারে জুনে’
Published: 17th, February 2025 GMT
আইএমএফ-এর ঋণ প্যাকেজের চতুর্থ কিস্তির সঙ্গে পঞ্চম কিস্তির অর্থ জুন মাসে একসঙ্গে ছাড় হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের একটি সেশন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘উভয়পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে’ আগামী জুন মাসে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের ঋণের পরের দুই কিস্তি ছাড় করার সিদ্ধান্ত হতে পারে।’’
“আমরা তাদের বলেছি, এত শর্ত একসঙ্গে মানা যাবে না। তারাও সাজেস্ট করেছে, আমরাও প্রস্তাব দিয়েছি জুন মাসে দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করার।’’
উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, আমাদের কিছু কাজ আছে। আমরা এত তাড়া করছি না। আমি একটা জিনিস বলি, আপনারা তো ভাবছেন ভিক্ষা করে নিয়ে আসি আসলে অনেক শর্ত মেনে ও আমাদের নিজস্ব তাগিদে। কিছু শর্ত আছে বললেই আমরা পালন করবো তা নয়। এখন আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো। চলতি হিসাব, আর্থিক হিসাব ও প্রবাসী আয় ভালো। আমরা মরিয়া হয়ে উঠছি না।’’
‘‘চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব প্রথম দফায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থার নির্বাহী পর্ষদের সভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও প্রথম দফায় তা পিছিয়ে ১২ মার্চ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে তা আরো পিছিয়ে জুনে নিয়ে যাওয়া হলো। বোর্ড অনুমোদন করলে তার কয়েক দিন পর দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় হতে পারে।’’
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) এর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখান থেকে কী নিয়ে আসলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ইফাদ বাংলাদেশের কৃষিখাত উন্নয়নে বড় অবদান রাখছে। আমাদের কৃষিখাত, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে যে উন্নয়ন দেখেন সেটা তাদের জন্য হয়েছে। তা না হলে আমরা ১৭ কোটি লোককে খাওয়াতে পারতাম না। আমরা তাদের বলেছি, এসব খাতে আরো বেশি অর্থায়ন করতে।’’
আইএমএফের কাছ থেকে এই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়ার জন্য আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংস্কারের শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে চতুর্থ কিস্তিতে অর্থ পেতে শর্ত ছিল চারটি।
সেগুলো হল- অর্থনীতির বহির্চাপ সামাল দিতে রাজস্ব আদায় জোরদার করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির ভঙ্গি আরও সঙ্কুচিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে নীতিমালার বাস্তবায়ন।
এর মধ্যে বিনিময় হার ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আইএমএফ সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
কথা ছিল, তৃতীয় পর্যালোচনা শেষ করে ৫ ফেব্রুয়ারি এর বোর্ড সভার পর ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় করবে আইএমএফ। তবে সেই সভা ১২ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। ফলে চতুর্থ কিস্তি অনুমোদনের বিষয়টিও বিলম্বিত হচ্ছে।
বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে তৃতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার ও শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে গত ৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করে আইএমএফ মিশন।
ওই সফর শেষে আইএমএফের প্রতিনিধি দল বলেছিল, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানো, আর্থিক খাতের সংস্কার ও অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে আগের ঋণের বাইরে নতুন করে ৭৫ কোটি ডলার দিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে তারা।
এ ঋণ আইএমএফের পর্ষদে অনুমোদন পেলে আগের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
ডিসেম্বরে আইএমএফ মিশনের সফর শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজনৈতিক পালাবদলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ধীর হয়ে পড়েছে এবং মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছেই।
অর্থপাচার বিশেষ করে ব্যাংক খাত থেকে অর্থ বের হওয়া চাপে পড়েছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। পাশাপাশি রাজস্ব আয় কমার বিপরীতে সরকারি ব্যয়ের চাপ বেড়েছে। এগুলোর চাপ পড়েছে আর্থিক খাতে।
এমন প্রেক্ষাপটে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসার আভাস দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর একসঙ গ আম দ র আর থ ক দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।
আরো পড়ুন:
নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”
প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”
তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”
গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী